ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নানা আয়োজনে মুখরিত সংস্কৃতি অঙ্গন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

নানা আয়োজনে মুখরিত সংস্কৃতি অঙ্গন

ছায়ানটে অনুষ্ঠিত সংগীতাসরে গান শোনান সুদীপ্ত শেখর দে

 শুক্রবার ছুটির দিনে বর্ণিল রূপ নেয় রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। শিল্প-সংস্কৃতির স্রোতধারা ছড়িয়ে পড়ে শহরের নানা প্রান্তে। সেই সুবাদে  শিল্পরসিকরা  পৌঁছে যান আপন মননের উপযোগী আয়োজনটিতে। তাদের কেউ হাজির হয়েছিলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে। সেথায় সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি চলমান শাস্ত্রীয় সুরের নির্যাসে খুঁজে নিয়েছেন প্রশান্তির অনুভব। অন্যদিকে  বেঙ্গল শিল্পালয়ে ঢুঁ মেরে অনেকেই অবলোকন করেছেন ‘শরীর ও মানচিত্র’ শীর্ষক দৃশ্যশিল্পের প্রদর্শনী। একই এলাকার রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠিত হয়েছে  ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের টার্গেটেড কিলিংয়ের প্রতিবাদে দৃক পিকচার লাইব্রেরি আয়োজিত  প্রতিবাদী প্রদর্শনী। এদিকে সেগুন বাগিচার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা আঙিনায় নাট্যদল বাংলাদেশ থিয়েটারের ৩৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে  অনুষ্ঠিত হয়েছে নাট্য প্রদর্শনীসহ বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
হেমন্ত সন্ধ্যায় ছায়ানটের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শ্রোতার আসর। এই সংগীতাসরে পরিবেশিত হয়েছে শাস্ত্রীয় ধারার শুদ্ধসংগীত।  সুর, তাল ও লয়ের খেলায় সজ্জিত সংগীতায়োজনটিতে পরিবেশনা উপস্থাপন করেন চার কণ্ঠশিল্পী। তারা হলেনÑসুদীপ্ত শেখর  দে, পূজা ঘোষ, প্রিয়ন্ত দেব ও শৌণক দেবনাথ ঋক।  পুরিয়া ধানেশ্রী রাগের আশ্রয়ে আপন পরিবেশনা উপস্থাপন করেন সুদীপ্ত শেখর দে। ভূপালী রাগে গান শুনিয়েছেন পূজা ঘোষ। রাগেশ্রী রাগে ভর করে পরিবেশনা উপস্থাপন করেন প্রিয়ন্ত দেব। যোগ রাগে ভর করে সংগীত পরিবেশন করেন  শৌণক দেবনাথ ঋক।
এদিন বিকেলে  ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে  সজ্জিত ‘শরীর ও মানচিত্র’ শীর্ষক দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী সূচনা হয়। প্রদর্শনীটি জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের পটভূমিতে একদল দৃশ্যশিল্পীর চিন্তায়, মননে ও চর্চায় এবং জনমানসে যে প্রতিক্রিয়া ব্যাপ্ত হয়েছে তা উপস্থাপনের একটি প্রয়াস। কিউরেটর শার্মিলি রহমান দশজন দৃশ্যশিল্পীর নানা দৃষ্টিকোণ, কার্যপ্রণালী ও শিল্পভাষার বিষয়-বৈচিত্র্যে অবলোকন করতে  চেয়েছেন যুগান্তকারী এক পরিবর্তনের বহুস্তরের অভিঘাত।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন  করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও মানবিক বিভাগের  চেয়ার এবং নারীপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম এবং শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক  মুস্তাফা জামান।
আন্দোলনউত্তর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে অনুসন্ধানী ও জিজ্ঞাসা-উন্মুখ করে  তোলা দায় থেকে শিল্পীরা এই প্রদর্শনীর রসদ সংগ্রহ করেছেন।   সময়োপযোগী এই দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী দশ শিল্পীর মধ্যে অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেনÑ এ আসান, আফসানা শারমিন, আশাং মং, ফারজানা আহমেদ, মং মং শায়, নিয়াজউদ্দিন আহমেদ, পলাশ ভট্টাচার্য, রাসেল রানা, রাজীব দত্ত, রিপন সাহা।
আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রবিবার বন্ধ থাকবে।
এদিন বিকেলে ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোববে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের টার্গেটেড কিলিংয়ের প্রতিবাদে দৃকের সংহতি প্রকাশ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। দৃক পিকচার লাইব্রেরি আয়োজিত প্রদর্শনীটির শিরোনাম ‘গাজা হলোকাস্ট : কিলিং দ্য ট্রুথ টেলারস’।  ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার খবরকে দমনের লক্ষ্যে  গত বছরের ৭  অক্টোবর  থেকে এই পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের শিকার ১৯১ সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীর বেদনার্ত অধ্যায় তুলে ধরা হয়েছে। প্রদর্শনীতে দৃক পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও গণমাধ্যমকর্মীদের পাশাপাশি ফিলিস্তিন মুক্তির সংগ্রামে শহীদ সাংবাদিকদের ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করে আয়োজকসহ সাধারণ মানুষ।  ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের প্রদর্শনীটি ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং চলমান গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার অঙ্গীকারের অংশ বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
এর বাইরে বাংলাদেশ থিয়েটারের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় তিন দিনের বর্ষপূর্তি উৎসবের সূচনা হয়। বিকেলে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক, খন্দকার শাহ আলমসহ অতিথিরা। এরপর উন্মুক্ত আঙিনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যায় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় আসাদুল্লাহ ফারাজী রচিত ও হুমায়ুন কবীর হিমু নির্দেশিত নাটক ‘সী-মোরগ’। আজ শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে ‘সিরাজ যখন নবাব সিরাজদ্দৌলা’ শীর্ষক নাটক। এর আগে বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

 

×