.
টানা চার দশক আপন সৃষ্টিশীলতায় তিনি মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন পাঠককে। সহজ-সরল ভাষা ছিল তাঁর লেখনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সরল রেখার মতোই সহজ ছিল তাঁর লেখার ভাষা। সেই কীর্তিমান কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ছিল বুধবার।
জননন্দিত এ লেখকের জন্মদিন উদ্্যাপনে আলোচনাসভার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। লেখকের মূল্যায়নধর্মী সে আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশের সাহিত্য ভুবনে হুমায়ূন আহমেদ একটি আনন্দের নাম। তিনি সত্যিকারের এক জাদুকর লেখক। তাঁকে বোঝার মাধ্যমে দেশের মানুষের একটি অংশের মনোজগৎ অনুধাবন সম্ভব। এ কারণেই তিনি এখনো যথেষ্ট অপঠিত লেখক। বুধবার বিকেলে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এই আলোচনাসভার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। এতে ‘হুমায়ূন আহমেদ ও বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আহমেদ মাওলা ও অধ্যাপক সুমন রহমান। হুমায়ূন আহমেদ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন উপস্থাপন করেন কবি ও কথাশিল্পী কাজল শাহনেওয়াজ। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
মূল প্রবন্ধে সালাহ উদ্দিন শুভ্র বলেন, হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বড় ঘটনা-এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এর প্রধান কারণ হলো পাঠক। তিনি যে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাংলাদেশের সমাজে আর ঘটেনি। তিনি খোদ ঢাকায় বসে, সংস্কৃতির কেন্দ্র যে মধ্যবিত্ত তার ভেতরে ঢুকতে পেরেছেন। যে কারণে তাঁকে নিয়ে আলাপ করতে আমরা বাধ্য হই। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের এই জনপ্রিয়তার সাহিত্যিক বা রাজনৈতিক গুরুত্বকে অস্বীকারের উপায় নাই। তাঁকে বোঝার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের একটি অংশের মনোজগৎ অনুধাবন সম্ভব।
ড. সরকার আমিন বলেন, হুমায়ূন আহমেদ একটি আনন্দের নাম। অসুখী সময়ে ও স্বদেশে তিনি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে স্বস্তি ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনতেন। তিনি সত্যিকারের জাদুকর লেখক।
আলোচকদ্বয় বলেন, হুমায়ূন আহমেদ পূর্ববঙ্গের সমাজ ও মানুষকে যেভাবে তাঁর সাহিত্যে ধারণ করেছেন, তা তাঁকে পাঠকপ্রিয়তা দিয়েছে। একইসঙ্গে সাহিত্যমানের বিচারেও তিনি অনন্য। তারা বলেন, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে তাঁকে পাঠের অনিবার্যতা তৈরি করেছেন। সংলাপ-প্রধান কথাসাহিত্যিক রচনায় তিনি অনেকক্ষেত্রে বর্ণনার প্রয়োজনও পাঠককে ভুলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর রসবোধ, অতিপ্রাকৃতিকতা-প্রীতি কিংবা কল্পবৈজ্ঞানিক পরিপ্রেক্ষিত- সবকিছুর কেন্দ্রেই ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ ও নাগরিক মধ্যবিত্ত। তাদের ক্ষয়িষ্ণু জীবনকে অনন্য বিভায় নিজের লেখায় আমৃত্যু তুলে ধরেছেন হুমায়ূন আহমেদ।
কাজল শাহনেওয়াজ বলেন, বিশেষত আশির দশকে টেলিভিশনকে কেন্দ্র করে আমাদের সামাজিক আলোড়ন হুমায়ূন আহমেদ অসাধারণভাবে ধারণ করেছেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, হুমায়ূন আহমেদ এখনো যথেষ্ট অপঠিত লেখক। কারণ আমাদের পাঠ-পরিসরে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হতে দেখা যায় না। আমাদের গুরুভার সাহিত্যালোচনার সীমানাতেও হুমায়ূন প্রায়শই অনুপস্থিত থাকেন, যা কোনোভাবেই বাংলাদেশের সাহিত্যের জন্য সুখকর খবর নয়। তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদ তত্ত্বশাসিত চোখের বাইরে দেখতে চেয়েছেন এবং পেরেছেন মুক্তিযুদ্ধকে। প্রেমকে আবিষ্কার করেছেন ‘আমি-তুমি’র প্রথাগত পরিধির বাইরে গিয়ে। উত্তর প্রজন্মের কাছে হুমায়ূন আহমেদ নিশ্চিতভাবেই নতুন পাঠ ও পর্যালোচনা নিয়ে হাজির হবেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মাহবুবা রহমান।