ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

ভিউয়ের প্রতিযোগিতায় বাড়ছে মানহীন নাটকের সংখ্যা

আনন্দকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২১:০৪, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

ভিউয়ের প্রতিযোগিতায় বাড়ছে মানহীন নাটকের সংখ্যা

একটা সময় দর্শক ড্রয়িং রুমে বসেই পরিবার নিয়ে টিভি নাটক দেখত; কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে এটি এখন ড্রয়িং রুমে সীমাবদ্ধ নেই। ইউটিউবসহ বিভিন্ন অ্যাপে এখন নাটক দেখছেন তারা; কিন্তু আজকাল কী হচ্ছে নাটকে? এমন প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায় দর্শকের কাছে। বিভিন্ন নাটকের ইউটিউব কমেন্ট বক্সেও দর্শক নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জানান।
নাটকের বাজারে ‘ইউটিউব ট্রেন্ডিং’ এখন আলোচিত শব্দ। বেশিরভাগ তারকা কলাকুশলীর কাছে কোনো কাজের শুরুতেই আলোচনায় আসে ভিউ। যে নাটক ভিউয়ে এগিয়ে থাকবে, সেই নাটক জায়গা পায় ট্রেন্ডিংয়ে। যে কারণে অনেক সময়ই শোনা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব নাটকের ভিউ বাড়াতে নাম ও গল্পে গুরুত্ব কম পায়। মুখ্য হয়ে ওঠে হাস্যকর কাণ্ড। সম্প্রতি ট্রেন্ডিং নাটকগুলোতে সেটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক  ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে থাকা পাঁচ শীর্ষ নাটকের তিনটিতেই নামের আগে-পরে ‘বেক্কল’ শব্দ রয়েছে।
এর মধ্যে একটি হলো নিলয় আলমগীর ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির ‘বেক্কল না সোজা’, আরেকটি হলো ‘বেক্কল বউ-৩’।  এতে অভিনয় করেছেন শামীমা নাজনীন, তন্ময় সোহেল, মানসী প্রকৃতি। তিন নম্বর নাটকটি হলো, আরেক ‘বেক্কলের মেলা’। অভিনয় করেছেন ফারুক আহমেদ, শামীমা নাজনীন, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, মনিরা আক্তার মিঠু, যাহের আলভী, মানসী প্রকৃতিসহ অনেকে। এসব নাটক  নিয়ে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘ইউটিউবে চলছে ব্যাক্কলের নাটকের মেলা। সব নাটকের মাঝে দেখছি ব্যাক্কল আর ব্যাক্কল।’ এ ছাড়া গত এক মাসের আরও কিছু নাটকের নাম হলো ‘এক তালাক দুই তালাক ৪’ (শেষ পর্ব)। এতে অভিনয় করেছেন সজল, স্পর্শিয়া মিমসহ অনেকে। ‘এলাকার জামাই’ শিরোনামের একটি নাটকে দেখা গেছে জামিল হোসেন ও মুনমুন আহমেদকে। ‘শ্বশুর বাড়িতে নতুন জামাই’ নামে নাটকে অভিনয় করেছেন জাহের আলভী ও অহনা। আ খ ম হাসান অভিনয় করেছেন ‘কাজী বাড়ির পাজি জামাই’ নাটকে। এ সময়ের নাটকের এমন নাম প্রসঙ্গে আবুল হায়াত বলেন, ‘ঋতু চক্রের মতো আমাদের নাটক ঘুরছে। যখন ভালো হচ্ছে তো কিছু নাটক ভালোই হচ্ছে। আবার মানহীন কাজের সংখ্যা বাড়ছে তো বাড়ছেই। আমার বিশ্বাস এই চক্রের মধ্যে থেকে আবার নাটক বের হবে। আমাদের বুঝতে হবে, শুধু ব্যবসার চিন্তা থেকে নাটক নির্মিত হলেই হবে না। দায়বদ্ধতার জায়গা তৈরি করতে হবে। তবে এটাও সত্য আমাদের অনেক শিল্পীকে বাধ্য হয়ে বিলো স্ট্যান্ডার্ডের কাজ করতে হচ্ছে। তবে এর মাঝেও দর্শক ভালো কাজ দেখতে চায়। সেই দর্শক খরা হয়তো খুব বেশি দিন থাকবে না। অলিক গল্পের মাতামাতি থাকবে না। কারণ সমাজের চেহারা দর্শক পর্দায় দেখতে চায়।’ গত কয়েক বছর ধরেই নাটকের মান কমতে শুরু করেছেন। একদিকে মানহীন গল্প ও অন্যদিকে গুরত্বহীন নাম দিয়ে দর্শকদেও নাটকের দিকে আগ্রহ করছেন নির্মাতা ও প্রযোজকরা।
একটা সময় ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘অয়ময়’, ‘রূপনগর’, ‘শুকতারা’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আজ রবিবার’, ‘আমাদের নুরুল হুদা’, ‘রঙের মানুষ’, ‘দ্বিতীয়জন’Ñ এমন সুন্দর সুন্দর নামের নাটক তৈরি হতো; কিন্তু এখন কুরুচিপূর্ণ টাইটেলের নাটকে ভরপুর চ্যানেল থেকে শুরু করে ইউটিউব।
অভিনেতা ও নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, নাটক সব সময় পরিবার নিয়েই দেখার মতো বিনোদন। কিন্তু এখন আর পরিবার নিয়ে দেখার সুযোগ নেই। মাঝে নাটকে অশ্লীল সংলাপেরও একটা ট্রেন্ড ছিল। তবে এখন সেটি অনেকটাই কমেছে। সত্যি বলতে আগে যারা নাটক রচনা ও নির্মাণ করত তাদের অবস্থান এবং এখনকার নির্মাতা ও রচনাকারীদের অবস্থান এক নয়। এখন অনেকের শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। যদি তাদের মধ্যে শিল্প যোগ্যতা থাকত তা হলে নাটকে এমন সংলাপ ব্যবহার করত না। এমন উদ্ভট নামও ব্যবহার করত না। ২০১৫ সালের পর থেকে আমাদের নাটকে ধস নামতে শুরু করে। সেটি এখন বেড়েই যাচ্ছে।

×