আজ কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী।বাস্তবমুখী এমন হাজারো উক্তির জনক বাংলাদেশের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কথা সাহিত্যিক ও লেখক শ্রদ্ধেয়- হুমায়ূন আহমেদ স্যার। হাজার হাজার বই ও অসংখ্য উপন্যাসের স্রষ্ঠা তিনি।হুমায়ূন আহমেদে একাধারে লেখক, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক, গল্পকার, নির্মাতা ও শিক্ষক ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা ছিল বিশ্বব্যাপী। তাঁর অনেক গল্প ইংরেজি ভাষায় অনুবাদও হয়, যা পরবর্তীতে তাঁকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
সাহিত্যে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃত হিসেবে একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও তার অর্জিত পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে মারা যান হুমায়ূন আহমেদ।
অগণিত বইয়ের মাঝে এমন কিছু বইও ছিল তাঁর, যা সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের জানা উচিত। আজকে আমরা হুমায়ুন আহমেদের এমনই বিখ্যাত ১০টি বই সম্পর্কে জানবো।
মৃন্ময়ী
মৃন্ময়ী বইটি হুমায়ূন আহমেদের ৭২তম বই। যা প্রথম প্রকাশ পায় ২০০১ এর একুশে বই মেলায়।
কাহিনী সংক্ষেপ
মৃন্ময়ী বইটির প্রধান চরিত্রে অর্থাৎ নায়িকার চরিত্রে আছে মৃন্ময়ী নামের অপূর্ব সুন্দরী একটি মেয়ে। গল্পে মৃন্ময়ী তার ব্যবসায়ী বাবা মইনু মিয়ার একমাত্র মেয়ে। তার একটি বড় ভাইও আছে। বাবার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম আজহার উদ্দিন। অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও তার বাবা আজহার উদ্দিনকে তেমন একটা পছন্দ করেন না। মৃন্ময়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন শিক্ষকের সাথে তার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে। সেই শিক্ষকের নাম কাউসার এবং তিনি আমেরিকা থেকে পিএইচডি নিয়ে এসেছেন। গল্পে কাউসার চরিত্রটি বেশ মজার। মৃন্ময়ীর প্রতি তার বেশ দুর্বলতা রয়েছে। মৃন্ময়ীর ভাই টগরের এক বন্ধু টুনু মৃন্ময়ীদের বাড়ীতে বেশকিছু দিন ধরে থাকছিলো। টুনুকে বিশিষ্ট সন্ত্রাসী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে কেননা টুনুর কারণেই টগরকে একদিন পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। গল্পে বলা হয় আজহার উদ্দিনের ছেলের সাথে ছোট বেলায় মৃন্ময়ীর একবার বিয়ে হয়েছিল। পরবর্তীতে এই বিয়ে নিয়েই মইনু মিয়া এবং আজহার উদ্দিনের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। গল্প শেষ হয় আজহার উদ্দিনকে খুন করার মাধ্যমে।
আজ চিত্রার বিয়ে
আজ চিত্রার বিয়ে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০১ সালের বই মেলায়।
কাহিনী সংক্ষেপ
আজ চিত্রার বিয়ের মূল চরিত্রে আছে চিত্রা। চিত্রা, শায়লা বানু ও চৌধুরী খলিলুর রহমানের বড় মেয়ে। শায়লা বানু তার পরিবারের প্রতি যতটা যত্নশীল, খলিলুর রহমান ঠিক ততটাই উদাসীন। চিত্রাকে একটি ভালো বিয়ে দেয়ার জন্য শায়লা বানুর চেষ্টার অন্ত নেই। তিনি বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করে যাচ্ছেন একটা ভালো বিয়ের জন্য। এদিকে খলিলুর রহমানের একমাত্র ছোট বোন ফরিদা। ফরিদা অভাবী সংসারের বউ। ফরিদার স্বামী নানাভাবে তাকে অত্যাচার করে। অবশেষে যেদিন চিত্রার বিয়ে ঠিক হয় ঠিক সেদিনই ফরিদা ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পরে আত্মহত্যা করে। এভাবেই ইতি টানা হয় গল্পটির।
৩) কৃষ্ণপক্ষ
বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালের একুশে বই মেলায়।
কাহিনী সংক্ষেপ
কৃষ্ণপক্ষ হুমায়ূন আহমেদের হৃদয়ছোঁয়া এক প্রেমের গল্প। গল্পের নায়িকার চরিত্রের নাম অরু আর নায়কের চরিত্রের নাম মুহিব। তাছাড়া গল্পটিতে লেখক অরুর মা, বাবা, মুহিবের বড়বোন , দুলাভাই ও মুহিবের বেশ কয়েকজন বন্ধুর চরিত্রকেও ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পের শুরুতেই অরু ও মুহিব পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে। কিন্তু গল্পের শেষে মুহিব অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায় অরু ও মুহিবের সংসার। এভাবেই ইতি ঘটে বইটির। পরবর্তিতে সিনেমা আকারেও প্রকাশ পায় কৃষ্ণপক্ষ।
বৃষ্টি ও মেঘমালা
বৃষ্টি ও মেঘমালা বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০১ সালের বইমেলাতে।
কাহিনী সংক্ষেপ
“ভালোবাসা ও ঘৃণা দুটোই মানুষের চোখে লেখা থাকে”
এই গল্পটিতেও অনেকটা তাই ঘটেছে। বৃষ্টি ও মেঘমালা গল্পের মূল চরিত্রে রয়েছে লীনা ও লীনার বস হাসান। গল্পে লীনা ও হাসান একসাথে কাজ করে। হাসানের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। লীনা হাসানকে বেশ পছন্দ করে কিন্তু তার ভাইয়ের বন্ধু ফিরোজের সাথে আগেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। হাসান মূলত একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ও লীনা তার সেক্রেটারি। কাজকে সময় দিতে গিয়ে পরিবারের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয় হাসানের। এক সময় তার ছেলে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে বাবাকে কাছে পেতে চেয়েছিল ছেলেটি। কিন্তু নিজের কাজের জন্য সন্তানকে সময় দেয় নি হাসান। তাই ছেলের শোকে ও হাসানের প্রতি ঘৃণায় মেয়েকে নিয়ে ভাইয়ের বাসায় চলে যায় হাসানের স্ত্রী। এভাবেই শেষ হয় বৃষ্টি ও মেঘমালা।৫)
বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৬ এর বইমেলায়।
কাহিনী সংক্ষেপ
কুহুরানী নিজেই গল্পের মূল চরিত্রে রয়েছে। কুহুরানী মূলত সার্কাস পার্টির একজন সদস্য। গোলগাল মুখের মায়া কাড়া চাহনির অধিকারিণী সে। সার্কাস পার্টির সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরেই দিন কাটে তার। কিন্তু সার্কাস পার্টির সদস্য হওয়ায় কারো কাছে সম্মান পায় নি সে। একদিন সার্কাস ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কুহুরানী। পরবর্তীতে খায়রুন্নেসা আদর্শ হাইস্কুলের হেডমাস্টারের বাড়িতে আশ্রয় নেয় সে। কিন্তু গল্পের শেষে দেখা যায় আবারো সার্কাসে ফিরে আসে কুহুরানী এবং গল্পের সমাপ্তি ঘটে।
তোমাকে
তোমাকে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে।
কাহিনী সংক্ষেপ
তোমাকে তিন বোন ও তাদের বাবাকে নিয়ে লেখা ছোট একটি গল্প। বইয়ের মূল চরিত্রে আছে নীলু ও বিলু নামের দুটি যমজ বোন। এবং তাদের ছোট বোন সেতারা। অল্প বয়সেই তাদের মা তাদের ছেড়ে অন্য আরেক জনের সাথে চলে যায়। ফলে বাবার কাছেই মানুষ হয়েছে তারা তিন বোন। নীলু ও বিলু অসম্ভব সুন্দরী। বিলু বেশ মেধাবী হলেও নীলু অতো মেধাবী ছিল না। আর তাদের ছোট বোন সেতারা ছিল বেশ ভালো গায়িকা। বইটিতে বাবা ও মেয়েদের খুনসুটির কথাই বেশি বলা হয়েছে। গল্পের শেষে তাদের বাবা মারা যান এবং তাদের মা ফিরে আসেন।
আমরা কেউ বাসায় নেই
আমরা কেউ বাসায় নেই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের পহেলা জুলাই।
কাহিনী সংক্ষেপ
এই গল্পটি একটি ছোট সামাজিক গল্প। একটি পরিবারের অভ্যন্তরীণ আনন্দ বেদনা নিয়েই বইটি লিখেছেন লেখক। বইটিতে বাবা, মা ও দুই ভাইয়ের গল্প লেখা আছে। বড় ভাইয়ের নাম টগর। টগর অত্যন্ত মেধাবী ও জেদি। অপর দিকে ছোট ভাই মনজু বোকা ধরনের। তাদের বাবার বন্ধুর মৃত্যুর পর বন্ধুর পরিবারের সাথে সংঘর্ষ হয় সম্পত্তি নিয়ে। এই নিয়েই গল্পটির কাহিনী। কিন্তু সমস্ত ঝামেলা মিটমাটের মধ্য দিয়েই গল্পের ইতি ঘটে।
রুপার পালঙ্ক
এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ এর বই মেলায়।
কাহিনী সংক্ষেপ
রুপার পালঙ্ক বইটির মূল ঘটনা তিন বন্ধুকে নিয়ে। তিন বন্ধু মোবারক, জহির ও বজলু বেশ আনন্দ ও খুনসুটি করে। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে নিয়মিত তাদের আড্ডা চলে। কিন্তু তারা বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তাই একবার এক বড় সাহেবের কাছে কিডনিও বিক্রি করতে যায় মোবারক। কিন্তু কিডনি বিক্রির আগেই বড় সাহেব মারা যায়। তখন আবারও আগের জীবনে ফিরে যায় তিন বন্ধু এবং রাতের গভীরে চাঁদের নিচে বসে আবারও আড্ডায় মেতে উঠে তারা।
আজ আমি কোথাও যাব না
আজ আমি কোথাও যাব না বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০২ এর বই মেলায়।
কাহিনী সংক্ষেপ
এই বইটির মূল চরিত্রে আছেন শামসুদ্দিন আহমেদ নামের ষাট ঊর্ধ্ব এক ব্যক্তি। তিনি আমেরিকায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন এবং ভিসা নিতে পাসপোর্ট অফিসে যান। সেখানেই তাঁর সাথে পরিচিত হয় জয়নালের। শামসুদ্দিন আহমেদ থাকেন তাঁর বোনের সাথে। শেষ পর্যন্ত তিনি অবশ্য আমেরিকায় যেতে পারেন নি কেননা গল্পটি শেষ হয় তাঁর মৃত্যু দিয়ে।
তেতুল বনে জোছনা
তেতুল বনে জোছনা বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০১ এর বই মেলায়।
কাহিনী সংক্ষেপ
“তুমি আমার জন্যে দু’ফোটা চোখের জল ফেলেছ- তার প্রতিদানে আমি জনম জনম কাঁদিব”- বিখ্যাত এই উক্তির সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই বইটির মূল চরিত্রে আছে নবনী ও আনিস। আনিস পেশায় একজন ডাক্তার এবং নবনী তার স্ত্রী। গল্পে আনিস গ্রামে অবস্থান করে চাকরি সূত্রে আর নবনী থাকে ঢাকায়। গ্রামের জনৈক হুজুরও বেশ প্রাধান্য পেয়েছে এই গল্পে। এই গল্পটি লেখকের সবচেয়ে বিখ্যাত গল্পগুলোর মধ্যে একটি।
নাহিদা