ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

অবিকৃতভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা লিখেছেন আবু ইসহাক’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২০:৫২, ৪ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২০:৫৩, ৪ নভেম্বর ২০২৪

অবিকৃতভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা লিখেছেন আবু ইসহাক’

বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘আবু ইসহাক : কথাসাহিত্যে জনজীবনের স্মৃতি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাশিল্পী আহমাদ মোস্তফা কামাল।

আমাদের জাতীয় জীবনে আবু ইসহাক একটি বিশেষ কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এমন সব মানুষ নিয়ে লিখে গেছেন, যাদের কথা কোনো ইতিহাস বইতে লেখা হয় না। আমাদের দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা তিনি লিখে গেছেন অবিকৃতভাবে, কোনো রকম ভনিতা ছাড়া, কোনো রকম প্রলেপ ছাড়া।

তাদের সংস্কার-কুসংস্কার-মূল্যবোধ-বিশ্বাস-প্রেম প্রীতি-ভয়-ঘৃণা-ক্ষোভ-বিদ্বেষ-জয়-পরাজয় কোনোকিছুই তাঁর কলম থেকে ছুটে যায়নি। সর্বোপরি তিনি দেখিয়ে গেছেন এদেশের অন্ত্যজ শ্রেণির প্রান্তিক মানুষদের নিরন্তর লড়াই জীবনের পক্ষে, বেঁচে থাকার পক্ষে। এভাবেই কালজয়ী কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের সাহিত্যকর্মের মূল্যায়ন করলেন আরেক খ্যাতিমান কথাশিল্পী আহমাদ মোস্তফা কামাল। সোমবার বাংলা একাডেমি আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।   

বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষেক থাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে  আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।  এতে ‘আবু ইসহাক : কথাসাহিত্যে জনজীবনের স্মৃতি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমাদ মোস্তফা কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হোসনে আরা। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।  স্বাগত বক্তব্য দেনা একাডেমির সচিব মোহাঃ নায়েব আলী। 


প্রবন্ধে আহমাদ মোস্তফা কামাল আরো বলেন,  আবু ইসহাকেরসূর্য দীঘল বাড়ী এবং পদ্মার পলিদ্বীপ দুটো উপন্যাসেরই বিষয়বস্তু গ্রামের মানুষ, গ্রামীণ সমাজ ও জীবন। কিন্তু গল্পে তিনি কাজ করেছেন বিবিধ বিষয় নিয়ে। এইরকম বিভিন্ন গল্পে সমাজের, জীবনের, মানুষের বিবিধ রূপ দেখিয়েছেন তিনি। গল্পগুলো তাই কেবল ‘গল্প’ই হয়ে থাকেনি, হয়ে উঠেছে তৎকালীন সমাজবাস্তবতা অনুধাবনের এক উত্তম দলিল। 


আলোচকবৃন্দ বলেন, গল্প, উপন্যাস, রহস্যোপন্যাস এবং স্মৃতিগদ্য, কিশোর নাটক এবং অভিধানচর্চায় আবু ইসহাক বিশিষ্টতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের খ্যাতির তলে তাঁর অন্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রায় যেন হারিয়ে গেছে। তাঁর প্রণীত বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান’ও এক বিস্ময়কর সৃজনকর্ম। তাঁরা বলেন, আবু ইসহাকের সাহিত্য পরিবেশপ্রসঙ্গ, ইকো-ফেমিনজম, গ্রামীন রক্ষণশীলতা আর তৃণমূলের মানুষের বেঁচে থাকার সর্বাত্মক লড়াই যে অসাধারণ দক্ষতায় উদ্ভাসিত হয়েছেÑতা তাঁকে বাংলার পাঠকের মনে অমরতা দান করেছে। 


অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, আবু ইসহাক বহুলপঠিত লেখক। তাঁর কাহিনীনির্ভর গল্প-উপন্যাস আমাদের সাহিত্যের প্রথাসিদ্ধ ধারাকে প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং একইসঙ্গে পূর্ববাংলার বৃহত্তর জনমানুষের জীবনকে ধারণ করেছে। তিনি বলেন, তাঁর সাহিত্যের প্রধান চরিত্রের নাম সংগ্রাম। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে পর্যুদস্ত হয়েও খেটে খাওয়া নারী-পুরুষের আমৃত্যু সংগ্রাম আবু ইসহাক স্বতন্ত্র শক্তিমত্তায় প্রকাশ করেছেন।

মনোয়ার/শহিদ

×