প্রদর্শনী চলাকালে নিত্যপুরাণ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধের প্রতিবাদে শিল্পকলা একাডেমির গেটের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন নিত্যপুরাণ নাটকের নাট্যকার ও
থিয়েটার সংস্কৃতিতে নাট্য প্রদর্শনী চলকালে বন্ধ করে দেওয়া গর্হিত কাজ। কিন্তু সেই অন্যায় কাজটি ঘটেছে শনিবার সন্ধ্যায়। পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টি করে এদিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া হয়। একজন ব্যক্তির মতামতকে দলের ওপর চাপিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে শিল্পকলা একাডেমি তার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
সে কারণেই সেখানে সেনাবাহিনী অবস্থান করলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করেছে। তাই মাঝপথে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার দায়ভার শিল্পকলা একাডেমিকেই নিতে হবে। সেই দায় নিয়ে একাডেমিকে এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় নিত্যপুরাণ নাটকের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। ভিডিও ফুটেজ দেখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
একডেমিতে সাংস্কৃতিক চর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি একাডেমি থেকে সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নিতে হবে। সেনাবাহিনীর অবস্থানের কারণে সেখানে মঞ্চশিল্পীসহ সংস্কৃতিকর্মীরা স্বাচ্ছন্দ্যে প্রবেশ করতে পারে না। নাট্যকর্মী থেকে দর্শকসহ সকলের সাধারণ নাগরিকসহ সকলের নিত্যপুরাণ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধের ঘটনায় এভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মঞ্চশিল্পীর।
সোমবার বিকেলে একাডেমির নাট্যশালার গেটের প্রতিবাদী সবাবেশে এসব কথা বলেন অভিনয়শিল্পী, নির্দেশক, নাট্যকারসহ মঞ্চশিল্পীরা। নাটকসহ সাংস্কৃতিক আয়োজন বন্ধের প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীবৃন্দ।
মঞ্চশিল্পীদের এই সোচ্চার অবস্থান থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক কর্মকা- গতিশীল করতে সাত দাফ দাবি পেশ করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিত্যপুরাণ নাটকের রচয়িতা ও নির্দেশক মাসুম রেজা, অভিনেতা ও নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম পাভলে, মঞ্চশিল্পী সামিনা লুৎফা নিত্রা, শিক্ষিক নির্দেশক সাইদুর রহমান লপিন ও কামাল উদ্দনি কবরি।
সমাবশে ৭ দফা দাবি পেশ করেন নির্দেশক মো. আলী হায়দার। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে সাত দিনের মধ্যে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রর্দশনীর আয়োজন করতে। শিল্পকলা একাডেমির খরচসহ তত্ত্বাবধানেই এই প্রদর্শনী হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে শিল্পকলা একাডেমি থেকে সেনা সদস্যদরে প্রত্যাহার করতে হবে।
নিয়মকানুন তুলে দিয়ে সাধারণ নাট্যর্কমী, দর্শক নাগরিকদের জন্য শিল্পকলা একাডেমি উন্মুক্ত করে দিতে হবে। একাডেমির সব হল খুলে দিয়ে সংস্কৃতি ও নাট্যর্চচার স্বাভাবকি পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। শিল্পকলা পরিষদের আমলানর্ভিরতা কমানো একং শিল্পকলায় থিয়েটার দলগুলোর প্রর্দশনী বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা।
নাট্যদল প্রাচ্যনাটের অধিকর্তা আজাদ আবুল কালাম বলেন, শিল্পকলা একাডেমিতে গত ১ নভেম্বর যারা মব ভায়োলেন্স করে নাটক বন্ধ করতে এসেছিলেন তারা মোটেই দুর্বল নন। এদের পেছনেও একটি ষড়যন্ত্রকারী শক্তি রয়েছে। কারা সেই শক্তি আমরা জানি না। শিল্পকলা একাডেমিকে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
সেদিন যারা সন্ত্রাসের চূড়ান্ত রূপ দেখিয়েছেন, তাদের সবার বিরুদ্ধে শিল্পকলাকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, মগের মুল্লুক কথাটিকে তারা যেন মবের মুল্লুকে পরিণত করেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে সেদিনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
নাটক বন্ধের ঘটনায় সংস্কৃতি অঙ্গণে অনেকে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদকে দোষারোপ করছেন। এ প্রসঙ্গে মাসুম রেজা বলেন, জামিল ভাই বলেছেন, খ-যুদ্ধে হেরে গেছেন, বড় যুদ্ধে তাকে জিততে হবে। আমার প্রশ্ন, ক্ষুদ্র প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে পারলেন না সেদিন। বড় যুদ্ধ জিতবেন কী করে? নাটক বন্ধের ঘটনায় সরকার ও শিল্পকলার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। নাটক বন্ধের তৎপরতায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়ে মাসুম রেজা বলেন, এই প্রক্রিয়ায় যেন কোনো গাফিলতি না হয়। এই তদন্ত যেন নিরপেক্ষ হয়।
সামিনা লুৎফা নিত্রা বলেন, আমরা যারা নাটকের দল করি, থিয়েটার করি, তাদের মধ্যে কেউ বিএনপি, কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বা বাম দলের সমর্থক। আমাদের মধ্যে যতই মতপার্থক্য থাক না দিনশেষে আমরা সবাই একটা পরিবার। একদল এসে বলল, আমাদের নাটকের কাউকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। সেটি তো থিয়েটারকর্মীরা মানবে না। তারা ভাবছেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে যেমন চাইবেন তেমন হবে। তাদের বলছি, বিচার বিভাগ রয়েছে। তাদের কাজটি তাদের নিয়মমাফিক করতে দেন।
মনোয়ার/শহিদ