শুকবার ছিল সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলম-এর সম্পাদক, সাহিত্যিক ও শিল্প সমালোচক আবুল হাসনাতের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। এ শুক্রবার সন্ধ্যায় আবুল হাসনাতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কালি ও কলম ‘আবুল হাসনাত স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করে ।
ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ‘গণমুক্তি ও মানুষের মুক্তিসাধনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রাবন্ধিক ও কবি আবুল মোমেন। এমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে আলোচনায় অংশ নেন লেখক ওয়াসি আহমেদ, কালি ও কলম সম্পাদক সুব্রত বড়–য়া। স্মৃতিচারণ করেন আবুল হাসনাতের স্ত্রী নাসিমুন আরা হক মিনু এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।
দীর্ঘ প্রবন্ধে আবুল মোমেন বলেন, গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশক ছিল বাঙালি মুসলমানের জাগরণের কাল। তখন রাজনীতির সাথে সঙ্গীত ও সংস্কৃতির বন্ধন গড়ে উঠেছিল স্বাভাবিক আবেগ ও ভালোবাসা থেকে। নাগরিক বাঙালির জীবনে আজ হয়ত সুরের পিপাসা কমে এসেছে, কিন্তু এর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অনুধাবন করেছিলেন সেকালের মানুষ।
আবুল হাসনাত ছিলেন সেই সময়ের এক অগ্রসর মানুষ। তিনি আরো বলেন, সংস্কৃতি নিছক আর্ট বা শিল্পকলা নয়, এর বিস্তার নিত্যদিনের প্রতিটি কাজ-সাজ, চলা-বলা, শখ-প্রবণতা, সকল কর্মকা-েই প্রকাশ পাবে।
কিন্তু আমাদের পরীক্ষা-নির্ভর মুখস্থ বিদ্যার ফলাফল-কেন্দ্রিক শিক্ষায় বৈচিত্র্য ও বহুত্বের স্বাদ-সামর্থ্য নিয়ে সংবেদনশীল, রুচিশীল, আত্মবিশ^াসী মানুষ হয়ে ওঠার কোনো অবকাশ রাখা হয়নি। মানববিকাশের এই সংকট গভীর হলে সে সমাজে গণতন্ত্র যথার্থ রূপে বিকশিত হতে পারে না।
লাজুক মানুষ আবুল হাসনাত ব্যক্তিত্বের বর্ম পরে থাকতেন। কিন্তু এই বর্ম তার ক্ষেত্রে ভেঙে দিয়েছিলেন বলে জানান কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদ। তিনি বলেন, লেখালেখির শুরুতে আবুল হাসনাত তাকে উজ্জীবিত করেছেন এবং তার তাড়নাতেই সাহিত্যচর্চা বেগবান হয়েছে।
ওয়াসি আহমেদের মতে সমাজে বৃহত্তর পরিসরে একটি মুক্ত আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমাদের সবার শিল্প সাহিত্যের চর্চা ও মনন বিকাশের জন্য কাজ করে যাওয়া উচিত। তাহলেই হয়তো একটি সত্যিকারের মুক্ত পরিবেশ আমরা পাবো।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আবুল হাসনাত অনেক মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। সাহিত্যের গভীরে যেসব বিষয়ের সংযোগ থাকে তা তিনি নিজের মাঝে ধারণ করতেন। প্রবন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, গণমুক্তির অর্থ শুধু রাজনৈতিক মুক্তি নয়; মানুষের চিন্তার মুক্তি।
আমাদের জ্ঞানমুক্তির হাতিয়ার বদলে গেছে। বইয়ের জায়গা দখল করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কিন্তু এসবের ভালো-খারাপ নির্ণয় করার চিন্তা নিরপেক্ষভাবে আমরা করতে পারছি না। ফলে মানুষ এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। যা মননশীল সমাজ ও রাষ্ট্রের বিকাশের অন্তরায়।