বলিউডের নায়িকা কাজল
বলিউডের এক সময়ের পর্দা কাঁপানো নায়িকা কাজল। যার মায়াবী জাদুতে একসময় মুগ্ধ হয়েছে পুরো বলিউড দুনিয়া। সেলুলয়েডে যার অসাধারণ অভিনয়, আহ্লাদিপনা, পাগলামি আর দুষ্টুমিষ্টি হাসি এখনো লুকিয়ে আছে বলিউড ছবিপ্রেমীদের চোখের কোণে। ফিল্মফেয়ার যাকে তুলে দিয়েছে সর্বাধিক পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার। ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি ‘বেখুদি’ খুব বেশি সাড়া জাগাতে না পারলেও পরের বছরেই মুক্তি পায় আব্বাস-মস্তানের ‘বাজিগর’। সুপারহিট এই ছবিটিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন শাহরুখের বিপরীতে। আর এই ছবির জনপ্রিয়তাই কাজল-শাহরুখের ক্যারিয়ারের বাঁক হিসেবে ধরা হয়।
তবে সবার জীবনে কম বেশি উত্থান পতন আছে। অভিনেত্রী কাজলও এর বাইরে নয়। সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত কাজল অভিনীত ‘দো পাত্তি’ ওয়েব ফিল্ম দেখলে দর্শকের কাজল সম্পর্কে কিছুটা এমন ধারণা হওয়া স্বাভাবিক। কারণ এটিতে কাজল দর্শককে কিছুটা হলেও হতাশ করছেন। এখানে তার অভিনয় মন ভরাতে পারেনি। এটা কি সিনেমার চিত্রনাট্য দুর্বল নাকি অভিনেত্রীর দুর্বলতা সেদিকে চোখ ফেরানো যাক। ‘দো পাত্তি’ পরিচালনা করেছেন শশাঙ্ক চতুর্বেদী। এতে আরও অভিনয় করেছেন কৃতি শ্যানন, শাহির শেখসহ আরও অনেকে।
প্রথমে চোখ ফেরানো যাক চিত্রনাট্যর দিকে। ওয়েব ফিল্মটির চিত্রনাট্য করেছেন কণিকা ধিলো। তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিত্রনাট্যে তুলে আনেন আমাদের চারপাশের চেনা নারীদের গল্প। যারা একই সঙ্গে অসহায় আবার নিজের মতো করে শক্তিশালী। তার লেখা সিনেমা ‘মনমর্জিয়া’, ‘হাসিন দিলরুবা’ আলোচিত হয়েছে। কিন্তু এই সিনেমায় তার চেষ্টা ব্যার্থ।
ছবিতে মূলত থ্রিলারের মোড়কে পারিবারিক নির্যাতনকে বার্তা দিতে চেয়েছেন নির্মাতা। উদ্দেশ্য সৎ কিন্তু পরিবেশনা একেবারেই যথাযথ নয়। দুর্বল চিত্রনাট্য ছবির সবচেয়ে বড় সমস্যা। আজকাল কেউ ছবিতে বার্তা দিলেও সেটা এমনভাবে আসে, যেন আরোপিত মনে না হয়। কিন্তু ‘দো পাত্তি’তে সেটা এসেছে অতি আরোপিতভাবে। শুধু তা–ই নয়, ছবির নানা জায়গাতেও সেটা জোর করে প্রচার করা হয়েছে, যা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। চিত্রনাট্যের খামতিতে ঝুলে পড়েছে গোটা সিনেমাটাই।
গল্প দুই যমজ বোনকে ঘিরে। ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে রেষারেষি। সেটা বড় হয়ে প্রেমিক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও চলে আসে প্রবলভাবে। একজন তাকে বিয়ে করে। এরপর থেকেই বিপত্তি, স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া দাঁড়ায় প্রতিদিনের ঘটনা। কিন্তু স্বামী এত অপরাধ করলেও স্ত্রী অভিযোগ জানাতে নারাজ। এর মধ্যে নতুন এক রহস্যে হাজির হয়। সমাধানে নামেন পুলিশ কর্মকর্তা জ্যোতি কানওয়া (কাজল)। গল্প শুনে রোমাঞ্চকর মনে হলেও আদতে তা নয়।
ছবিতে যমজ দুই বোনের পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে খুবই ক্লিশেভাবে। এক বোন রক্ষণশীল, অন্যজন উদারমনা। এটা বোঝাতে নির্মাতা সেই চিরাচরিত পোশাকের আশ্রয় নিয়েছেন। আরও পাঁচ দশক আগের হিন্দি সিনেমায় দেখা যেত। এ ছবিত সবচেয়ে বাজে অভিনয় করেছেন কাজল। এতে প্রথমবারের মতো পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
ছবির শুরুটা তাকে দিয়ে, প্রথম কয়েক মিনিট দেখার পরেই বুঝে যাবেন, এই চরিত্রটি তার জন্য ছিল না। সবচেয়ে হতাশার উচ্চারণ। ছবিতে স্থানীয় উচ্চারণে হিন্দি বলতে গিয়ে বারবার গুলিয়ে ফেলেছেন, নিজের অভিনয়টাই ভুলে গেছেন অভিনেত্রী।
ছবির একমাত্র ইতিবাচক দিক কৃতি শ্যানন। যমজ দুই বোনের চরিত্রে তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে আবেগের দৃশ্যগুলো তিনি ছিলেন অনবদ্য। এ ছবি আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে ‘মিমি’র জন্য ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রী হওয়াটা মোটেও ‘ঝড়ে বক পড়া’ ছিল না। ছবিটি দিয়েই প্রযোজনায় যুক্ত হয়েছেন কৃতি।
‘দোপাত্তি’র বড় অংশের শুটিং হয়েছে নৈনিতাল, দেরাদুনসহ উত্তরাখন্ডের মনোরম পাহাড়ি অঞ্চলে। একঘেয়ে গল্প দেখার মধ্যে এই যা স্বস্তি!
পান্ডে/শহিদ