ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

গ্যালারি কায়ায় প্রখ্যাত শিল্পীদের প্রদর্শনী অ্যাবস্ট্রাকশন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:০৬, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

গ্যালারি কায়ায় প্রখ্যাত শিল্পীদের প্রদর্শনী অ্যাবস্ট্রাকশন

প্রদর্শনী

অর্ধ-বিমূর্ত রীতির অনুসরণে আঁকা হয়েছে চিত্রকর্মটি। পেন্সিলের আশ্রয়ে  রেখাচিত্রের মাধ্যমে মূর্ত হয়েছে ছবির বিষয়। সুনিপুণ ড্রইংয়ে উপস্থাপিত হয়েছে গ্রামীণ জীবনের দৃশ্যকল্প।  সেখানে   সূক্ষ্ম রেখার টানে  মূর্ত হয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ। ওই ফসলি জমিকে ঘিরে চোখে পড়ে বহুমুখী কর্মযজ্ঞ। সেই তৎপরতায় ফসল  তোলায় ব্যস্ত দেখা যায় চড়া রোদে টুপিতে মাথা ঢেকে রাখা একঝাঁক কৃষককে। আর ওই কৃষিভূমির অদূরে মেঠোপথ ধরে গৃহপালিত পশুকে নিয়ে গন্তব্যের দিয়ে এগিয়ে চলেছে রাখাল বালক। লোকায়ত জীবনের প্রতিচ্ছবিময় চিত্রকর্মটির ¯্রষ্টা পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ। ১৯৯৮ সালে ছবিটি এঁকেছিলেন প্রয়াত এই চিত্রকর। ছবিটি ঠাঁই করে নিয়েছে উত্তরার গ্যালারি কায়ায়। প্রদর্শনালটিতে সফিউদ্দিনের মতো  কিংবদন্তি শিল্পীদের সমান্তরালে প্রখ্যাত ও প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পীদের বিমূর্ত  ও অর্ধ-বিমূর্ত ধারার চিত্রকর্ম নিয়ে চলছে প্রদর্শনী। যৌথ এই প্রদর্শনীর শিরোনাম অ্যাবস্ট্রাকশন। 

অ্যাক্রেলিক, জলরং, তেলরং, কাঠখোদাই চারকোলসহ নানা মাধ্যমের বৈচিত্র্যময়  চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে এই শিল্পায়োজনে। সঙ্গে রয়েছে  ব্রোঞ্জ, লোহাসহ নানা মাধ্যমে গড়া ভাস্কর্য। সেই সুবাদে শহরের শিল্পানুরাগীদের নজর কেড়েছে প্রদর্শনীটি। বৃহস্পতিবার প্রদর্শনালয়টিতে দেখা হয় তেমনই এক শিল্পরসিক ফারহা আফরিনের সঙ্গে। শিল্পায়োজনটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই আয়োজনটি আমার কাছে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা হয়ে ধরা দিয়েছে। এক আঙিনায় খ্যাতিমান শিল্পীদের বিমূর্ত ধারার শিল্পকর্মসমূহ দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে দেশে প্রতিথযশা শিল্পীদের শিল্পচর্চার  পরম্পরার সন্ধান মেলে। বিমূর্ত রীতিতে চিত্রিত ছবিগুলোতে টেক্সচারের সঙ্গে  ফর্মের খেলা যুক্ত হয়েছে। একইভাবে রংয়ের ব্যবহারেও  ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের প্রয়োগ  ঘটেছে।  নিরীক্ষাধর্মিতার এই পথরেখায় প্রথিতশা শিল্পীদের কাজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা মেলে। পাশাপাশি  এই শিল্পীগেদর  কাজের দক্ষতা এবং কৌশল উন্মোচিত হয়েছে এই প্রদর্শনীতে।   

রঙের  বৈভবে ক্যানভাস সাজিয়েছেন মাকসুদা ইকবাল নীপা। কয়েকটি স্তরে লাল রংয়ের ব্যবহার করেছেন এই শিল্পী।  সেই লাল জমিনে ঈষৎ বাদামির রংয়ের মিশ্রণে ভিন্ন আবহ সৃষ্টি করেছেন; যা  কিনা শিল্পরসিকের  মননে বুনে দেয় ভাবনার বীজ।  ব্রোঞ্জ মাধ্যমে গড়া ভাস্কর্যে চিন্তাশীল ব্যক্তির অবয়ব তুলে এনেছেন আইভি জামান।  আরেক ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের লোহায় গড়া কম্পোজিশননির্ভর পাশাপাশি অবস্থানরত দুজনের মানুষের অস্তিত্ব মূর্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে ২৬ শিল্পীর শিল্পকর্ম ঠাঁই পেয়েছে এই প্রদর্শনী।  সেই তালিকার শিল্পীরা হলেন মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীর, দেবদাস চক্রবর্তী, সেয়দ জাহাঙ্গীর, কাজী আবদুল বাসেত, নিতুন কুন্ডু, আবু তাহের, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, হাশেম খান, মাহমুদুল হক, সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ, হামিদুজ্জামান খান, কালিদাস কর্মকার, আবুল বারক্্ আলভী, মোহাম্মদ ইউনুস, রতন মজুদার, তাজউদ্দীন আহমেদ, রেজাউন নবী, আইভি  জামান, রাশেদুল হুদা, রাফি হক, অনুকুল মজুমদার, মাকসুদা ইকবাল নীপা ও মো. টোকন। ৫৪টি শিল্পকর্মে সজ্জিত এই প্রদর্শনী চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

মনোয়ার/ শহিদ

×