ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

শামসুর রাহমানের কবিতায় রয়েছে রক্তরাঙা বর্তমান ও অনন্ত আগামী

সংস্কৃতি প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৩ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২২:৪৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

শামসুর রাহমানের কবিতায় রয়েছে রক্তরাঙা বর্তমান ও অনন্ত আগামী

বক্তব্য রাখছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক  মোহাম্মদ আজম। 

কবিতায় তিনি ধারণ করেছিলেন সমকালীনতাকে।  কবিতার আশ্রয়েই  আশ্রয়েই ব্যক্ত করেছেন শোষণমুক্ত সমাজের আকাক্সক্ষা। অসম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণ ও  গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশাও ব্যক্ত হয়েছে তার কবিতার পঙ্ক্তিমালায়। কাব্যের ছন্দেই তিনি উচ্চারণ করেছেন পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার মন্ত্র। স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ  সেই কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিন ছিল বুধবার। 

এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত কবিকে নিবেদিত এক আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, এদেশের লড়াকু মানুষের মুখাবয়ব চিত্রিত করেছেন কবি শামসুর রাহমান। তার কবিতায় রয়েছে রক্তরাঙা বর্তমান ও অনন্ত আগামী। তিনি নতুন বাংলার জন্য স্মৃতির জন্ম দিয়েছেন। তার নাগরিক বোধ চূড়ান্ত বাংলাদেশ-চিন্তার দিকে নিয়ে গেছে পাঠককে। কবিতায় বাংলাদেশের  যে ছবি তিনি এঁকেছেন তা জনগোষ্ঠীর জ্যান্ত ইতিহাসকে নিয়ে বর্তমানে প্রবেশ করে এবং ভবিষ্যত নির্মাণে প্রণোদনা দেয়।  এ কারণেই শামসুর রাহমান রাহমান সব সময়ই চিরকালীনতাকে ধারণ করে বিস্ময়করভাবে সমসাময়িক ছিলেন।

বুধবার বিকেলে  একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে 'বাংলাদেশের স্মৃতি নির্মাণের কবি: শামসুর রাহমান' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি মৃদুল মাহবুব। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি মজিদ মাহমুদ, কবি চঞ্চল আশরাফ এবং পিআইবি'র মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক  মোহাম্মদ আজম।  অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সায়েরা হাবীব।

কবি মৃদুল মাহবুব বলেন, শামসুর রাহমান নতুন  দেশ নির্মাণের উপদান তৈরির  যে শক্তি  দেখিয়েছেন তা বাংলা ভাষায় বিরল ঘটনা। তিনি নতুন বাংলার জন্য স্মৃতির জন্ম দিয়েছেন। তার কবিতায় এমন এক নাগরিক বোধ আমরা খুঁজে পেলাম যা নিয়ে গিয়েছে চূড়ান্ত বাংলাদেশ-চিন্তার দিকে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একটা দেশের জন্য  যৌথ চেতনা তৈরি করেছেন বছরের পর বছর ধরে। ফলে তার কবিতা পড়তে গিয়ে বাংলাদেশের এমন সব স্মৃতি আমাদের মনে পড়ে যাবে যাকে দিয়ে এই দেশের মাটিতে আপনি নোঙর ফেলতে পারবেন। রাহমান যে বাংলাদেশের ছবিটা তাঁর কবিতায় এঁকেছেন তা পড়লে আমার জনগোষ্ঠীর জ্যান্ত ইতিহাসকে নিয়ে বর্তমানে প্রবেশ করতে পারবো যা আমাদের ভবিষ্যত নির্মাণে প্রণোদনা দেবে।

আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কবি শামসুর রাহমান । তিনি বাংলাদেশের কবিতার নিজস্ব ভাষা নির্মাণে যেমন অবদান রেখেছেন তেমনি কবির সামাজিক মার্যাদা প্রতিষ্ঠায়ও তাৎপর্যবহ ভূমিকা পালন করেছেন। রাহমান সব সময় চিরকালীনতা ধারণ করে বিস্ময়করভাবে সমসাময়িক ছিলেন। তাঁরা বলেন, তাঁকে পাঠের খ-িত প্রয়াস থেকে বেরিয়ে সমগ্র শামসুর রাহমান অনুধাবন বাংলাদেশের কবিতা ও ইতিহাস-পাঠের নতুন পরিসর তৈরি করতে পারে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, শামসুর রাহমান আমৃত্যু কবিতাচর্চায় সামষ্টিক স্মৃতি  তৈরি করে  গেছেন; এই স্মৃতিতে আমাদের ইতিহাসের দীর্ঘ পরম্পরা যেমন আছে, তেমনি ছিল কবির রক্তরাঙা বর্তমান এবং অনন্ত আগামী। ঢাকাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের লড়াকু মানুষের মুখাবয়ব চিত্রিত করার  ক্ষেত্রে তার কাব্যিক লড়াই এককথায় অতুলনীয়।

স্বাগত বক্তব্যে একাডেমির সচিব  মোহাঃ নায়েব আলী বলেন, কবি শামসুর রাহমান যেমন বাংলাদেশকে তাঁর কবিতায় বিপুলভাবে ধারণ করেছেন তেমনি বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশের জনমানুষ তাঁকে সবসময় স্মরণে রেখেছে। আমাদের স্বাদেশিক সকল সংগ্রামে শামসুর রাহমান  প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন।

মনোয়ার/শহিদ

×