ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

উদিত নারায়ণ-কুমার শানু যুগলবন্দি

গৌতম পাণ্ডে

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ২১ অক্টোবর ২০২৪

উদিত নারায়ণ-কুমার শানু যুগলবন্দি

উদিত নারায়ণ-কুমার শানু।

সংগীত জগতের কিংবদন্তিতুল্য অন্যতম দুজন প্লেব্যাক সিঙ্গার ও শিল্পী উদিত নারায়ণ এবং কুমার শানু। এ দুজন নব্বইয়ের দশকে বলিউড কাঁপিয়েছেন সমানতালে। এই দুই কিংবদন্তির পরষ্পরের কথোপকথন এবং গান সম্পর্কে যুগল আলোচনার পূর্বে এদের জীবনের যৎকিঞ্চিত জেনে নেওয়া যাক।

উদিত নারায়ণ ৩০টি ভাষায় ১৫ হাজারেরও বেশি গান গেয়ে রেকর্ড করেছেন। নেপালের সান্ডারি জেলায় ১৯৫৫ সালে উদিতের জন্ম। পুরো নাম উদিত নারায়ণ ঝা। নেপালী ছাড়া বেশ কিছু ভোজপুরি ছবিতে গান গেয়েছেন। সংগীতশিল্পী রাজেশ রোশান তাকে প্রথমবার বলিউডে পা রাখার সুযোগ করে দেন 'উনিশ বিশ' ছবিতে। তবে আমিন খানের 'কয়ামত সে কয়ামত তক' ছবিই উদিতের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এ ছবির 'পাপা হতে হ্যায় বড়া নাম করেগা' আজও সমান জনপ্রিয়। তাকে ২০০৯ সালে ভারত সরকার 'পদ্মশ্রী' সম্মানে ভূষিত করে। তিনি তিনবার জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন। 'দিল ওয়ালে দুল হানিয়া লে যায়েঙ্গে'', 'রাজা হিন্দুস্তানি', 'হম দিল দে চুকে সনম', 'আশিকি', 'লগান' এর মতো সুপারহিট ছবির জন্য ফিল্মমেকার পেয়েছেন ৫বার। ইদানিং সিনেমায় আর সেভাবে শোনা জায় না উদিতের কণ্ঠ। 

অন্যদিকে আরেক কিংবদন্তি শিল্পী কুমার শানু। তার নাম বললেই চোখে ভাসবে নব্বইয়ের দশকের ‘মেলোডি কিং’-এর ছবি। হিন্দি সিনেমাকে বহু হিট গান উপহার দিয়েছেন শানুই। ‘নজ়র কে সামনে জিগর কে পাস’, ‘চুরা কে দিল মেরা’-র মতো বহু গান গেয়ে দর্শকদের মন জয় করেছিলেন তিনি। আসল নাম কেদারনাথ ভট্টাচার্য।

কলকাতা এবং মুম্বাইয়ের হোটেলে গাইতেন তিনি। জগজিৎ সিংহের মাধ্যমে তার যোগাযোগ হয় বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক জুটি কল্যাণজি-আনন্দজির সঙ্গে। তাারা মুম্বইয়ের সম্মুখানন্দ প্রেক্ষাগৃহে একটি অনুষ্ঠানে সুযোগ দিয়েছিলেন কেদারনাথকে। 

শানু বলেন, কল্যাণজি-আনন্দজি মনে করতেন, বাঙালি শিল্পীদের উর্দু উচ্চারণ ভাল নয়। তাদের মনে হয়েছিল, আমার উর্দু উচ্চারণ যথেষ্ট ভাল, তবে ভট্টাচার্য পদবিটা আমার গায়ে বাঙালির যে তকমা সেঁটে দেবে, সেটা মুম্বইতে আমার কেরিয়ারে সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই ওটা বদলে দেন তারা। তারাই আমার নাম রাখেন কুমার শানু। শানু ছিল আমার ডাকনাম। আসলে ছিল ছানু, যেটা এসেছিল ছানা (মিষ্টি জাতীয় খাবার) থেকে। আমি খুব গোলগাল চেহারার ছিলাম। তাই বাড়িতে সবাই আমায় ছানা বলত। সেখান থেকেই ছানু আর শেষমেশ শানু। কলকাতাতেও প্রথমে স্বীকৃতি পাননি তিনি। আশির দশকে হোটেলে গান গেয়ে কিছু টাকা উপার্জন করতেন।

গায়ক বলেন, হোটেলে গান গেয়ে যে টাকা পেতাম, তাই দিয়ে ক্যাসেট বানিয়ে সঙ্গীত পরিচালকদের কাছে দিতাম কাজ পাওয়ার আশায়। কিন্তু তারা আমায় ফিরিয়ে দিতেন। তারা বলতেন, আমি কিশোর কুমারের মতো গাই। শানুর কথায়, তারা বলতেন, কিশোরদাই তো বেচে আছেন। তাকে দিয়েই গাওয়াব। তোমায় নেব কেন? শানু জানান, গুলশনের কোম্পানিতে তিনি কভার সং গাইতেন। ‘জিনা তেরি গলি মে’ ছবিতে দুটো গান গাওয়ার সুযোগ পান। গান দুটো সুপারহিট হয়। সেখান থেকেই ‘আশিকি’-তে গাওয়ার সুযোগ আসে শানুর।

সেই থেকে সাড়ে তিন দশক ধরে গান গাইছেন শানু। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শিল্পীকে। তিনি জানান, ছাব্বিশটি ভাষায় একুশ হাজার গান গেয়েছেন। এ বছরে একটি রিয়েলিটি শোতে দুজনেই উপস্থিত হয়েছিলেন। ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে যেখানে কুমার শানু বিচারক, সেখানে উদিত নারায়ণ অতিথি হয়ে আসেন বিশেষ পর্বে।

এসে হাস্যরসে উদিত নারায়ণ জানান, সবাই মনে করে গান নিয়ে আমাদের মাঝে দ্বন্দ্ব আছে। আসলে বিষয় সেটি নয়। আমাদের মাঝে একজনকে নিয়েই ছিল যত টানাহেচড়া। আর তিনি হলেন ‘রোমান্স’ কুইন অলকা ইয়াগনিক।

এই দুই শিল্পীই অলকার সাথে জুটি বেঁধে দারুণ সব গান উপহার দিয়েছেন। এর মাঝে যেমন আছে অলকা-উদিতের ‘কহোনা পেয়ার হ্যায়’, ‘কিতনি বেচেন হোকে’ গানগুলি, তেমনই আছে, অলকা – শানুর ‘তুমহে আপনা বানানে কি কসাম’, ‘মেরে দিলভি কিতনা পাগল হ্যায়’র মত অমর কিছু গান।
এর আগেও 'কপিল শর্মা' শোতে উপস্থিত হয়েছিলেন উদিত নারায়ণ ও কুমার শানু। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী অনুরাধা পড়োয়াল। হাসি, ঠাট্টা, আড্ডার মাঝে প্রকাশ পেল নানা ব্যক্তিগত মজার ঘটনা। তা সে উদিতের তোয়ালে প্রীতি হোক বা শানুর প্রেম জীবন। সেই পর্বে শানু এবং উদিতের খুনসুটির ঝলক মিলেছিল।
সেই প্রসঙ্গে কুমার শানুকে নিয়ে মজা করতে ছাড়লেন না উদিত। বললেন, ‘ধীরে ধীরে শানুর জীবনে তো অনেক মহিলাই এলেন আর গেলেন। এখনও বাকি রয়েছে। মন ভরেনি শানুর। এই পর্বের শুরুর দিকেই কুমার শানু উদিতকে নিয়ে ঠাট্টা করেছেন। উদিতও তাকে জবাব দিলেন একই ভাবে। কী হয়েছিল? কপিল শর্মার কথায় জানা যায়, উদিত নাকি বাড়িতে কোনও পোশাক পরেন না, কেবল তোয়ালে পরে থাকেন। কিন্তু এখন তো তার ছেলে আদিত্য নারায়ণের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে পূত্রবধূ শ্বেতা আগরওয়াল রয়েছেন। উদিতকে কপিলের প্রশ্ন ছিল, ‘তাতে সমস্যা হয়?’ উদিত বলেন, ‘এখনও তোয়ালে পরেই ঘুরে বেড়াই। বাড়িতে বৌমা আসায় কোনও অসুবিধা হয়নি।’ গায়কের উত্তরে হাসির রোল আরও বেড়ে যায়। উদিত বলেন, ‘কৃষকের ছেলে আমি। অভ্যাস যায় না অত সহজে।’’ঠাট্টা মশকরায় আরও ইন্ধন জুগিয়ে কুমার শানু বলেন, ‘কৃষকের ছেলে হয়ে কোনও দিন ক্ষেত দেখেননি উদিত। কিন্তু তোয়ালে দেখে নিয়েছেন।

এম হাসান

×