ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

অন্তরা মেহরুখের ক্যানভাসে ধরিত্রী রক্ষার আহ্বান

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ২০ অক্টোবর ২০২৪

অন্তরা মেহরুখের ক্যানভাসে ধরিত্রী রক্ষার আহ্বান

‘সোলাস্ট্যালজিয়া : ফ্র্যাগমেন্টস অফ এ  ফেডিং হরাইজন’ শীর্ষক প্রদর্শনীর চিত্রকর্মসমূহ

মানুষের মুনাফার লোভে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রকৃতিবিনাশী কর্মকান্ড। অপরিকল্পিত শিল্পায়নের সূত্র ধরে গড়ে উঠছে ইটের ভাটা। একইভাবে কারখানা থেকে ফিটনেসবিহীন যানবহনের বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। ফলশ্রুতিতে প্রাণ ও প্রকৃতিতে নেমে আসছে অভিঘাত। এভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আক্রান্ত হচ্ছে গোটা দুনিয়া।  

সেই সুবাদে প্রায়শই বানের জলে ভাসছে দেশের নানা প্রান্ত।  বন্যায় নিমজ্জিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। আর সেই প্রকৃতিবিনাশী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অন্তরা মেহরুখ আজাদের ক্যানভাস। পরিবেশকে বিপন্ন করার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে রং-তুলির আঁচড়মাখা চিত্রপট। তাই ধরিত্রীকে রক্ষার আকুতি জানিয়ে ছবি এঁকেছেন এই চিত্রকর। সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে বারিধারার প্রগতি সরণির প্ল্যাটফর্মস গ্যালারিতে চলছে প্রদর্শনী। শিল্পায়োজনটির শিরোনাম ‘সোলাস্ট্যালজিয়া : ফ্র্যাগমেন্টস অফ এ  ফেডিং হরাইজন’। 

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সূর্য থেকে নিঃসৃত অতিবেগুনি  রশ্মির বিপজ্জনক প্রভাবকে ভিন্নভাবে ক্যানভাসে তুলে এনেছেন অন্তরা মেহরুখ। সেই বাস্তবতায় গোলাপী রংকে প্রাধান্য দিয়ে সাজিয়েছেন চিত্রপট।  তেমনই এক ছবিতে ধরা দিয়েছে বন্যাপ্লাবিত কোনো এক গ্রামের দুর্দশার চিত্র। কোমর জলে নিমজ্জিত গ্রামটি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে একদল নর-নারী ও শিশু। এর মধ্যে সামর্থ্যবান পুরুষরা  ডুবে যাওয়া টিনের ঘর মাথায় নিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছেন। নিরুপায় শিশুকে পিঠে তুলে নিয়ে অথৈ জলের মাঝে হেঁটে চলেছে  এক বৃদ্ধ। আরেক ছবিতে টিনের চালসহ ঘরের প্রয়োজনীয় নানা পণ্য নৌকায়  চাপিয়ে স্থানান্তরিত হচ্ছে আরেকদল বানভাসি মানুষ। আরেক ছবিতে উঠে এসেছে অপরিকল্পিত নগরায়নের দৃশ্যকল্প। জমিতে কৃষকের ফসলের বীজ বোনার উল্টোপিঠে  সেই ফ্রেমে ধরা দিয়েছে বিশালাকৃতির অট্টালিকা, অজ¯্র যানবাহনসহ ট্র্যাফিক সিগনাল বাতি।     

প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে অন্তরা মেহরুখ বলেন, ২০১৮ সালে পাকুরিয়ায় বন্যা-আক্রান্ত মানুষের  সাথে কাজ করতে গিয়ে নিজের ভেতর ভিন্ন এক অনুভূতি তৈরি হয়।  বন্যার্তদের  জীবনচিত্র এবং আক্রান্ত অঞ্চল দেখে বুঝতে পারি যে কিছু মানুষের অবহেলার কারণেই এমন দুর্যোগ ঘটছে। আমার কাজের নিয়ন  গোলাপী জল এই সংকটের অস্বাভাবিক মনুষ্যসৃষ্ট উপাদানগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে; যা  কিনা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটেছে। আর এটা শুধু আমাদের দেশের নয়, বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। 

সব মিলিয়ে প্রদর্শনীটি পরিবেশগত পরিবর্তনের ব্যক্তিগত এবং সার্বজনীন অভিজ্ঞতার সন্ধান করে।  অন্তরা  মেহরুখ আজাদের সেই শিল্পিত উপলব্ধিতে জলবায়ু-প্ররোচিত বন্যার প্রভাব এবং গ্রামীণ ও শহুরে পরিবেশের মধ্যে উত্তেজনাকে অন্বেষণ করে। সুন্দরবন থেকে ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকার পরিবেশগত অভিঘাতের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিয়েছে অন্তরার চিত্রকর্মসমূহ।  তার কাজে পরিবেশবিনাশী মানুষের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এবং পরিবেশগত সংকটের দ্বারা পর্যবেক্ষণমূলক  আবেগের প্রকাশ ঘটেছে।  তাই বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ শহর ঢাকায় বেড়ে ওঠা এই শিল্পীর সৃজনশীলতা স্পর্শ করেছে প্রাণ ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর কর্মকা-কে। চিত্রকর্ম সৃজনের মাধ্যমে সেই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জানিয়েছেন প্রতিবাদ। 

প্রদর্শনীটির কিউরেটর রায়ানা হোসেন বলেন, অন্তরার কাজগুলোয় রয়েছে পরিবেশগত সংকটের প্রভাব। নিয়ন জল এবং ভাসমান দ্বীপের চিত্রের মাধ্যমে   অন্তরা খ-িত অথচ আন্তঃসংযুক্ত গল্পসমূহকে ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন। তাই তার চিত্রকর্মসমূহ  যেন পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রান্তে থাকা মানুষের সম্মিলিত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। যেখানে উঠে এসেছে স্থানান্তরিত মানুষের বেদনার্ত অধ্যায়। আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাতহ আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। 

মনোয়ার/শহিদ

×