শিল্পকলায় একাডেমিতে লালন স্মরণ উৎসবে সংগীত পরিবেশনা
উৎসবের শুরুটা হয়েছিল বৃহস্পতিবার। শেষ হলো শনিবার। আর এই তিনদিনের আয়োজনে সমবেত হয়েছিলেন কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের বাউলেরা। তারা কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন অধ্যাত্মবাদী ভাবধারা থেকে মানবতার জয়ধ্বনিময় লালন সাঁইয়ের গান। সেই সুরের আবেশে সিক্ত হয়েছে শ্রোতার অন্তর। মুগ্ধতার আবেশে ঝরেছে করতালি। কখনো বাবা বাউলের কণ্ঠের সঙ্গে তাল রেখে গেছেন শ্রোতারা।
অন্যদিকে গানের সঙ্গে লালনের মানবতাবাদী দর্শননির্ভর আলোচনা ঋদ্ধ করেছে শহরের সংস্কৃতি অনুরাগীদের। সেই সুবাদে কৌতূহল নিয়ে শুনেছে লালনের গানের ভাবানুষঙ্গনির্ভর আলাপচারিতা। এসবের সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ ছিল সাধুমেলা। আর এভাবেই আপন সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তার প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত লালন স্মরণোৎসব। বাউলসাধক ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শনিবার উৎসবের সমাপনী দিনে আলোচনা এবং গানÑএই দুই পর্বে বিভক্ত ছিল আয়োজন। সন্ধ্যার অবকাশে একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘ধরো মানুষ রূপ নেহারে’ শিরোনামের সংগীতাসর। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি পরিবেশনাসমূহ উপস্থাপন করেন দেশের খ্যাতিমান বাউলেরা। তাদের পরিবেশিত গানের টানে ভিড় জমেছিল শ্রোতাদের। সেইসব গানপ্রেমীর হৃদয়ে ভালোলাগার অনুভব ছড়িয়ে রফিক তালুকদারের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ধর্ম-বর্ণের পরিচয় ছাপিয়ে সম্প্রীতির বারতা। তিনি গেয়েছেনÑ জাত গেল জাত গেল বলে/একি আজব কারখানা ...।
রোকসানা আক্তার রূপসার গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘কৃষ্ণপ্রেমে পোড়া দেহ বলো কি দিয়ে জুড়াই বলো সখী’ ও ‘আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে’ শীর্ষক লালনসংগীত। আবিদা রহমান সেতু পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘দেখ না মন ঝাকমারি এই দুনিয়াদারি’ ও ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’। সাঁইজির ভাববাণীকে সমবেত কণ্ঠে ধারণ করে একাডেমির শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ ও ‘মিলন হবে কত দিনে’।
মেহরাজ হক তুষারের পরিচালনা এবং নির্ঝর চৌধুরীর সংগীতায়োজনে পরিবেশিত হয়েছে ‘সহজ মানুষ’ শীর্ষক খ-নৃত্যের পরিবেশনা। এ ছাড়া লালনের ভাববাণীকে সঙ্গী করে একক কণ্ঠে গান শোনান ফরিদা পারভীন ও শফি মন্ডল। এর বাইরে সাঁইজির ভাববাণীকে সঙ্গী করে যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করে একাডেমির শিল্পীবৃন্দ।
সংগীতাসরের পূর্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ। একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেবেন একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল।
এর আগে বিকেলে নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘জাতিসত্তার প্রশ্ন এবং বাউল-ফকির পরিবেশনার রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা। এ আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক আ-আল মামুন।
আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম, লেখক ও সাংবাদিক এবং পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ এবং নাট্যকার, লেখক, গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।