ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

সুজেয় শ্যামের শেষকৃত্য হওয়ার কথা রয়েছে যেখানে

সংস্কৃতি প্রতিবেদক।

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ১৮ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ১৫:৫৯, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

সুজেয় শ্যামের শেষকৃত্য হওয়ার কথা রয়েছে যেখানে

সুজেয় শ্যাম

স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক সুজেয় শ্যামের শেষকৃত্য হওয়ার কথা রয়েছে সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের শ্বশানে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের গানের কথায়-সুরে মুক্তিকামী মানুষেরা হতেন উদ্দীপ্ত, তাদেরই একজন একাত্তরের কণ্ঠসৈনিক সুজেয় শ্যাম মারা গেছেন।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে  এই সংগীত পরিচালক ও সুরকার মারা গেছেন বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

সুজেয় শ্যামের মেয়ে রূপমঞ্জুরী শ্যাম লিজা শুক্রবার  বলেছেন, তার বাবার মরদেহ সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে রাখা হয়।
এরপর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।
শরীরে ক্যান্সার নিয়েই কাটছিল সুজেয় শ্যামের দিন; সঙ্গে ডায়েবেটিস, কিডনিসহ নানা জটিল রোগও ছিল।

গত জুন মাসেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শিল্পী। গত সেপ্টেম্বর তার হার্টে পেসমেকার বসানোর পর ইনফেকশন হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন লিজা।

“বাবার পেসমেকার বসানোর কারণে ইনফেকশন হলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম।"

ওই সময় আইসিইউতে শয্যা খালি না থাকায় তাকে সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।

১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেওয়া সুজেয় শ্যামকে সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। তার আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে সুজেয় শ্যামের নাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’, ‘আহা ধন্য আমার’,‘আয়রে চাষী মজুর কুলী’।
তার সুর করা গানের মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি বাংলাদেশের যে কোনো জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যামকে বলা হল, বিজয়ের গান করতে।

এরপর শহীদুল ইসলামের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই/ খুশির হাওয়ায় উড়ছে/ উড়ছে উড়ছে উড়ছে/ বাংলার ঘরে ঘরে’ গানটিতে সুর করেন সুজেয় শ্যাম।

মাত্র ১৫ মিনিট লেগেছিল গানটি লেখা ও সুর করতে; এরপর রেকর্ডিং। আর পুরো গানটার জন্ম হয়েছিল মাত্র এক ঘণ্টায়।

গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু হয় সুজেয় শ্যামের। পরে তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন।
১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সুজেয় শ্যাম। ঢাকাই চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

বাংলাদেশ বেতারের প্রধান সংগীত প্রযোজক পদ থেকে ২০০১ সালে অবসরে যান সুজেয় শ্যাম।

২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান’ শিরোনামে একটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন তিনি।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান-২’ নামে আরেকটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন শিল্পী। ‘টুনাটুনি অডিও’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সংগীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

এছাড়া মঞ্চনাটকেও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যুক্ত ছিলেন সুজেয় শ্যাম। তিনি আরণ্যক নাট্যদল প্রযোজিত 'এবং বিদ্যাসাগর', 'ময়ূর সিংহাসন', 'দি জুবিলি হোটেল' নাটকের সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন।
গৌতম পাণ্ডে

গৌতম পাণ্ডে/টুম্পা

×