আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদকে স্মরণ
পেশায় তিনি ছিলেন শিক্ষক। উল্টোদিকে প্রাচীন আমলের পুঁথি সংগ্রহ করা ছিল তার নেশা। মধ্যযুগের মুসলিম সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ছিল তার আগ্রহের বিষয়। সেই সুবাদে তার সংগৃহীত পুঁথির অধিকাংশই মুসলিম কবিদের রচিত। পাশাপাশি হিন্দু কবিদের পুঁথিও যুক্ত হয়েছে তার সংগ্রহের তালিকায়। সাহিত্যের ঐতিহ্য অন্বেষণকারী এই কীর্তিমান মানুষটি হলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ।
বৃহস্পতিবার এই খ্যাতিমান গবেষককে স্মরণ করলো বাংলা একাডেমি। এদিন বিকেলে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ১৫৩ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে করে বাংলা একাডেমি।
একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। আলোচনায় অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব মোহাঃ নায়েব আলী।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, আবদুল করিম নিছক সাহিত্যবিশারদ ছিলেন না; তাঁর স্থান এই দেশের কেন, দুনিয়ার যে কোন দেশের ইতিহাস-বিশারদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাবের আগে যে কয়জন অগ্রণী চিন্তাবিদ বাঙালি মুসলমান সমাজে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন তাদের মধ্যমণি। তাই আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদকে পুঁথি-সংগ্রাহক পরিচয়ের ক্ষদ্র পরিসরে আবদ্ধ করে রাখাটা ঠিক নয়। আবদুল করিম একাধারে ছিলেন সাহিত্যের ইতিহাসকার, ইতিহাস তত্ত্ববিদ এবং নিষ্ঠাবান গবেষক। হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে থেকে জাতীয় মঙ্গলের অভিপ্রায়ে তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। এভাবেই তিনি ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বৈ থেকে কাজ করেছেন ।
সুমন সাজ্জাদ বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের বিশেষত্বময় গদ্যশৈলী, প্রখর ইতিহাসবোধ এবং আত্মপরিচয়ের উৎসমূল অনুসন্ধান তাকে আজও আমাদের আগ্রহ ও আবিষ্কারের কেন্দ্রে রেখেছে।
মোহাম্মদ আজম বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের কাজ আসলে ইতিহাসেরই কাজ। তাঁকে অনবরত পাঠ করলে আমরা তাঁর জেদ ও লড়াইয়ের মাত্রা অনুভব করবো। তার জন্ম ও সাধনভূমি চট্টগ্রাম অঞ্চল ঘিরে বিশেষ অনুরাগের কথা মাথায় রেখেও বলা যায় তিনি সামগ্রিকভাবে জাতীয় সাহিত্যের মধ্য দিয়ে জাতীয় চেতনা বিকাশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন।
মোহাঃ নায়েব আলী বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি জীবনের নানা ঘাত- প্রতিঘাত অতিক্রম করে সাফল্যের চূড়া স্পর্শ করেছেন এবং আমাদের আলোকিত করেছেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মাহবুবা রহমান।
মনোয়ার/শহিদ