ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১

নায়ক-খলনায়ক জুটি

জসিম-আহমেদ শরীফ

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

নায়ক-খলনায়ক জুটি

আহমেদ শরীফ

জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবির মধ্যে যেমন প্রথম অ্যাকশন দৃশ্যের প্রচলন শুরু হয়, ঠিক তেমনি ‘খলনায়ক বা ভিলেন’ চরিত্রটিও প্রথম পর্দায় দর্শকরা দেখতে পায়। যেখানে ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা জসিম। সেই সূত্রে জসিম হলেন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রথম ‘খলনায়ক’। কিন্তু এই খলনায়কই একটা সময় নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং তুমুল জনপ্রিয়তা পান।

তার নায়ক হওয়া সিনেমাগুলোতে বেশিরভাগ সময় ভিলেন হিসেবে দেখা গেছে আহমেদ শরীফকে। এ জুটির প্রায় সব সিনেমাই ব্যবসা সফল ছিল। তাদের উল্ল্যেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো-‘কালিয়া’, ‘স্বামী কেন আসামী, ‘সন্ত্রাসী রাজা’, ‘নাগ নাগিনীর প্রেম’, ‘টাইগার’, ‘জিদ্দী, ও ‘গরীবের ওস্তাদ’।
ইলিয়াস কাঞ্চন-এটিএম শামসুজ্জামান : গ্রামীণ, মধ্যবিত্তের সিনেমার গল্পে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলা যুবকের চরিত্রে জনপ্রিয় ছিলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

একজন ডাইনামিক, স্টাইলিশ, জাত অভিনেতা তিনি। তার সঙ্গে দেখা গেছে সময়ের সেরা সব খল অভিনেতাদের। তবে এটিএম শামসুজ্জামানের কূট চালের শিকার কাঞ্চনের সিনেমাগুলো দর্শককে আন্দোলিত করত। প্রবীণ এই খল অভিনেতার সঙ্গে দারুণ জমজমাট ছিল নায়ক কাঞ্চনের সিনেমাগুলো, যা আজও সেসব যুগের ভক্তদের নস্টালজিয়ায় নিয়ে যায়। তাদের জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর কয়েকটি হলো-‘দায়ী কে’, ‘বদ সুরুত’, ‘ইনসাফ’, ‘বাপ বেটা ৪২০’, ‘মনে রেখ পৃথিবী’, ‘মর্যাদা’ ও ‘অন্ধ ভালোবাসা’।
রুবেল-হুমায়ূন ফরীদি : ঢাকাই সিনেমায় জসিমের পর অ্যাকশনে নতুন মাত্রা নিয়ে আসেন চিত্রনায়ক রুবেল। মার্শাল আর্টে পারদর্শী এই নায়ক নান্দনিক সব কৌশলে মারপিটের দৃশ্য দিয়ে জয় করে নিয়েছিলেন নব্বই দশকের তরুণ দর্শকের মন। তার সঙ্গে হুমায়ূন ফরীদির রসায়ন ছিল অন্য রকম। ফরীদিকে ‘সন্ত্রাস’ সিনেমাতে নিয়ে আসেন শহীদুল ইসলাম খোকন। ক্যারিয়ারের প্রথম ছবিতেই তিনি মুখোমুখি হন নায়ক রুবেলের।

সেই থেকে শুরু। এরপর প্রায় পঞ্চাশটি চলচ্চিত্রে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেছে রুবেল-ফরীদিকে। ‘বিশ্ব প্রেমিক’ সিনেমাটি ছিল এই জুটির ভিন্ন মাত্রার বিনোদনের একটি ছবি। যেখানে রুবেল ও ফরীদির সঙ্গে ছিলেন নায়িকা মৌসুমী। তাদের আরও কিছু সিনেমা হলো-‘সুখের আশায়’, ‘ভ-’, ‘যোদ্ধা’, ‘অকর্মা’, ‘অপহরণ’, ‘চারিদিকে শত্রু’, ও ‘ঘৃণা’।
সালমান শাহ-ডন :
সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিটি দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সালমান শাহ ও মৌসুমির। তাদের সঙ্গে অভিষিক্ত হয়েছিলে খল অভিনেতা ডনের। চলচ্চিত্রে সালমান শাহ যতদিন নায়ক হিসেবে বাজিমাত করেছেন, ততদিন খল অভিনেতা হিসেবে তার ছবিগুলোতে দর্শক মাতিয়েছিলেন ডন। প্রায় সব ছবিতেই সালমানের সঙ্গে দেখা যেত ডনের বিরোধ, মারামারি। তুমুল জনপ্রিয় ছিল সালমান-ডন জুটি। এ জুটির কয়েকটি সিনেমা হলো, ‘প্রেম যুদ্ধ’, ‘আশা ভালোবাসা’, প্রেম পিয়াসী’ ও ‘তোমাকে চাই’।
মান্না-ডিপজল : ঢাকাই সিনেমায় সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার গল্প বলতে গেলে সবার আগে চলে আসবে যে নামটি, তিনি হলেন নায়ক মান্না। তিনি এককভাবে নায়ক হিসেবে আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছিলেন নব্বই দশকের শেষদিকে। তার একক আধিপত্যের পেছনে যুক্ত ছিল আরও একটি নাম। 
তিনি হলেন ডিপজল। যিনি ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর চরিত্রের ভিলেন হিসেবে জনপ্রিয়। 
মান্নার সঙ্গে এই অভিনেতার জুটির জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। ‘আম্মাজান’, ‘বর্তমান’, ‘কষ্ট’, ‘গু-া নাম্বার ওয়ান’ ইত্যাদি সিনেমাগুলো সেই প্রমাণই দেয়। এই জুটির পর ঢাকাই সিনেমাতে এত সফল নায়ক-ভিলেন জুটি আর দেখা যায়নি।
শাকিব-মিশা : শাকিবের সঙ্গে সব থেকে বেশি দেখা গেছে মিশাকে। 
প্রায় এক যুগ ধরেই ঢাকাই সিনেমার একক আধিপত্য নিয়ে সিনেমা করে চলেছেন এ অভিতো। আর তার প্রায় নব্বই ভাগ সিনেমাতেই ভিলেন হিসেবে কাজ করেছেন মিশা। তাদের উল্ল্যেখযোগ্য কিছু সিনেমা হলো-‘টপ লিডার’, ‘ভাড়াটে খুনি’, ‘ক্যাপ্টেন খান’, ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’, ‘প্রিয় আমার প্রিয়া’।

×