ভাবনগর ফাউন্ডেশনের গান পরিবেশন
বৃহস্পতিবার ইউনেস্কো ঘোষিত প্রথম আন্তর্জাতিক পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দিবস। একদিন আগেই বুধবার গান ও কথনে দিবসটি উদযাপিত হলো ভাবনগর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে।
এদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাবনগর সাধুসঙ্গের ৫১৮তম আসরে ‘প্রাচীন বাংলার চর্যাপদের গান এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়। আয়োজনের শুরুতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল-ফকির সাধকেরা সমবেত কণ্ঠে লুইপা রচিত ‘কাআ তরুবর’ শীর্ষক চর্যাপদের প্রথম পদটি পরিবেশন করেন। 
এ অনুষ্ঠানে মল্লরী রাগে ভুসুকুপা রচিত বাঙালিত্বের পরিচয়বহ চর্যাপদের গান পরিবেশন করেন সাধিকা সৃজনী তানিয়া। অন্যদের মধ্যে চর্যাপদের গান পরিবেশন করেন বরিশালের শাহ আলম দেওয়ান, মানিকগঞ্জের বাউল অন্তর সরকার, শরিয়তপুরের শিলা মল্লিক, পঞ্চগড়ের রবিউল হক, জামালপুরের হেলাল উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের সিদ্দিক ফকির, ঝিনাইদহের জ্ঞানহীন নাইম, ফতেহ কামাল, রতন মিয়া প্রমুখ। গানের পাশাপাশি বক্তব্য দেন গবেষক ও শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম নির্জন।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন নাট্যকার ও গবেষক ড. সাইমন জাকারিয়া। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষার জন্য ইউনেস্কো ২০০৩ সালে ইউনেস্কো কনভেনশন প্রণয়ন করে। তারপর থেকে বিশ্বব্যাপী ইউনেস্কো বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে তার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০২৩ সালে ৭ থেকে ২২ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর জেনারেল কনফারেন্সে প্রতিবছর ১৭ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ দা ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সেই ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ভাবনগর ফাউন্ডেশনের ভাবনগর সাধুসঙ্গের আয়োজনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে দেশের ভাবসাধকদের চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে ইউনেস্কো কনভেনশনের বাস্তবিক প্রয়োগ করছে। সেই সুবাদে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণ এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শক্তি ও ঐশ্বযের্র প্রমাণ পাওয়া যায়।
গবেষক রেজাউল ইসলাম নির্জন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসকে অনেকে সীমাবদ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে চান। কিন্তু আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে গভীরে। তাহলেই আমরা দেখতে পাবো কী সমৃদ্ধ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ভাবনগর প্রাচীন বাংলার চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে পুনর্নিমাণ করেছে।
অনুষ্ঠানের শেষে সমবেত কণ্ঠে লালনের সাঁইজির ‘আমার মনের মানুষের সনে’ গানটি গাওয়া হয়।
মনোয়ার/শহিদ
