মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ পাকে বিপাকে নাটকের দৃশ্য
থিয়েটারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পারিপার্শ্বিকতাকে ধারণ করা। সমাজ-রাষ্ট্র কিংবা চারপাশের চেনা জগৎকে মেলে ধরা। অন্যায় ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে জ্বলে উঠে প্রতিবাদী চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া। সেই সুবাদে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জীবনের গল্পকে ধারণ করেই নির্মিত হয় মঞ্চনাটক। সেখানে উদ্ভাসিত হয় যাপিত জীবনের বহুবিধ দৃশ্যচিত্র।
সংলাপময় সেই ক্যানভাসে চিত্রিত হয় সুখ-দুঃখ কিংবা সমকালীন প্রসঙ্গ। কখনো উঠে আসে প্রতিবাদের আখ্যান। তেমনই এক প্রতিবাদের গল্পময় নাটক ‘পাকে বিপাকে’। যে নাটকের গল্পে নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় নির্যাতিত। শেষ অবধি নির্যাতিতের সংগ্রামের কাছে পরাস্ত হয় নির্যাতনকারী। পদাতিক নাট্য সংসদের ৪৩তম প্রযোজনাটি মঞ্চস্থ হয় রবিবার সন্ধ্যায় মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে। মনোজ মিত্রের রচনা অবলম্বনে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সঞ্জীব কুমার দে।
নাটকের কাহিনীতে এক নিঝুম রাতে গ্রামের আল পথ ধরে কাপা গলায় গান গাইতে থাকে জনার্দন। হঠাৎ তার আর্তচিৎকারে কেঁপে ওঠে বিলের চারধার। যেন বিষাক্ত সাপ দিয়েছে ছোবল। জনার্দন চিৎকার করে দৌড়ে ছুটে যায় এক লণ্ঠনের আলো বরাবর; যেখানে চুপিসারে বসে আছেন একজন। জনার্দন তার কাছে যতই সাহায্য চায় ফিরে তাকায় না সে। বরং ইশারায় তাকে চলে যেতে বলে। হাবলা জনার্দন ইশারা বোঝে না, সে ক্ষতের জ্বালায় গ্রামের জোয়ার্দার নবকৃষ্ণ বাবুর কুকীর্তির বয়ান ক্রমাগত পেশ করতে থাকে। এই নবকৃষ্ণের জন্যই তিন বছর ধরে লালন পালন করা গাই গরু কসাইয়ের কাছে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছে জনার্দন। নইলে সেই গরুটি নিজের বলে বাড়ি নিয়ে যেত নবকৃষ্ণ।
ক্ষতের জ্বালা বাড়ে-কমে, বারবার সাহায্য চেয়েও না পেয়ে ক্ষেপে গিয়ে কাথা ধরে টান দেয় জনার্দন। ফলে উন্মোচিত হয় অবগুণ্ঠনে থাকা নবকৃষ্ণ বাবু। যে কি না নিজের জমিতে টহল দিচ্ছিল বর্গাদারকে ফাঁকি দিয়ে ধান লুট করবে বলে। এদিকে জনার্দন নাছোড়বান্দা। সে তার মহাজনকে গালাগাল করেছে তাই ক্ষমা না পাওয়া পর্যন্ত সে ওই স্থান ছেড়ে যাবে না। অন্যদিকে বর্গাদার পান্তু দাস চলে এসে ধান লুট ঠেকিয়ে দেয় কি নাÑ সেই ভয়ে অস্থির নবকৃষ্ণ। কোনোক্রমে জনার্দনকে সরায় সে। আবার অপেক্ষা।
পান্তুর ভাই ডালিম উপস্থিত হয়। এই ডালিম নবকৃষ্ণের হয়ে অনাবাদী জমিতে ফলানো ধান লুট করবে তার লোকজন নিয়ে। নবকৃষ্ণ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইকে দাঁড় করায়। এরই মাঝে অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে দূর্বা। গ্রামের সবাই জানে এই দূর্বা হলো নবকৃষ্ণের পালিত রক্ষিতা। তবে সেই রাতে এই বিলের ধারে তার উপস্থিতি নবকৃষ্ণের বন্দুক লুট করে পান্তুকে সাহায্য করা। এভাবেই ঘটনা এগিয়ে যায় এবং জোতদার নবকৃষ্ণ পরাজিত হয় হাবলা জনার্দনের কাছে।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন শাখাওয়াত হোসেন শিমুল, ইমরান খান, শরিফুল ইসলাম ও মৃত্তিকা রহমান। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন সৈয়দা শামছি আরা। ইকরাম সরকারের আলোক পরিকল্পনায় রূপসজ্জা করেছেন শুভাশিস দত্ত তন্ময়।