ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

কেন অবহেলিত ছিলেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা 

প্রকাশিত: ১৯:১১, ৫ অক্টোবর ২০২৪

কেন অবহেলিত ছিলেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা 

সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা 

‘আমিতো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের চর্চা করি। সব সরকারেরইতো নজরুল সংগীত শিল্পীদের প্রয়োজন। কিন্তু কেন তার বঞ্চিত হবেন? যেসব শিল্পী বিভিন্ন দলের গান করেন, তাদের বেলায় হয়ত এ ধরনের বাঁধা আসতে পারে। আমরাতো কারো পক্ষে বা বিপক্ষে গান করি না। আমরাতো নজরুল চর্চা করি। ওকে বাদ দাও এই বাক্যের সম্মূখীন আমরা কেন হব? একজন শিল্পীতো এক দিনে তৈরী হয় না। অনেক ত্যাগের ফলে একজন শিল্পী তৈরী হয়। 

অনেক সাধনার ফলে এক সময় এসে একজন শিল্পী তৈরী হয়। আমার সংগীত জীবন শুরু হয়েছিল স্কুল লাইফে। তখন সময়টা ছিল ১৯৭২ সাল। আমার চেয়ে বয়সে বড় সংগীতের ভূবনে তারা অনেক পরে এসেছে। এইসব শিল্পীদের একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক দেওয়া হলো। অথচ আমার নামটিও উল্লেখ করা হয় না’-এমন আক্ষেপ নিয়ে একথা জনকণ্ঠকে বলছিলেন দেশের স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা।

নজরুল সংগীতের শ্রোতাপ্রিয় শিল্পী ফেরদৌস আরা। ক্যারিয়ারে অসংখ্য গান উপহার দিয়েছেন। অথচ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে গান করতে পারতেন না। এমনকি সরকারী কোনো অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে পারেননি এই শিল্পী।

মতের অমিলের কারণে জানা গেছে বিগত সরকারের আমলে অনেক শিল্পীই সেই কালো তালিকাভুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় বেতার ও টিভি চ্যানেলে কোন কোন শিল্পী পরিবেশন করতে পারবেন, আর কে কে পারবেন না তা ছিল একটি অঘোষিত তালিকা। এমনকি একটি কালো তালিকাও ছিল। সেই কালো তালিকায় নাম ছিল ফেরদৌস আরার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের ফলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও বিটিভি ও বেতারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন এই গায়িকা।

ফেরদৌস আরা বলেন, কোথাও কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন পেলেও শেষ পর্যন্ত আমার নাম কেটে দেওয়া হাতো। কারা এমন করতেন? কেন করতেন? আজও পর্যন্ত আমি জানিনা। এরফলে এক ধরণের অভিমানেও অনেক আর্টিস্ট চিরতরে চলে গেছেন। যেমন চলে গেছেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ। এত সাধনার পর যখন কোন আর্টিস্ট হেয় প্রতিপন্ন হন, তখন তার মধ্যে এক ধরণের বৈকল্য দেখা দেয়। যেটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে।  আমি কখনও কারো সাথে বিরোধীতা বা অভিযোগ করিনি, ওমুক একুশে পদক পেয়েছেন, স্বাধীনতা পুরষ্কার পেয়েছেন আমার কেন নয়।  শুধু এইটুকু ভেবেছি, শুরু করেছিলাম সংগীত সাধনা দিয়ে কিছু পেতে নয়। নজরুলের ভাষায় বলতে হয় ‘আমি ভালোবাসা পেতে এসেছিলাম আর গালাগালকে গলাগলিতে পরিণত করতে এসেছিলাম’।

ফেরদৌস আরা বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারও আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান বিটিভিতে গাইতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। শিল্পী তৈরিতে এ প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা বর্ণনাতীত। কিন্তু কী কারণে আমাকে দীর্ঘদিন কোনো অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি জানি না। শুনেছি অনেক শিল্পী রাজনীতি করার কারণে বিটিভি-বেতারে নিষিদ্ধ ছিলেন। কিন্তু আমি তো রাজনীতি করি না। আমাকে কেন এত বছর বঞ্চিত করা হয়েছে?
 

 

গৌতম/শহিদ/

×