রবীন্দ্র প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সমবেত সংগীত পরিবেশনা
শরতের সন্ধ্যায় সুরের খেলা ভেসে বেড়ায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে। সংগীতের মায়াজাল ছড়ানো সে আয়োজনটি উপভোগে রাজধানীর নানা প্রান্তের শ্রোতারা সমবেত হয়েছিলেন সেথায়। সুররসিকদের স্বতঃস্ফূর্ত আগমনে পরিপুর্ণ ছিল মিলনায়তন। পিনপতন নীরবতার মাঝে সেখানে শুধুই শোনা গেছে সুরেলা শব্দধ্বনি। তন্ময় হয়ে গানপ্রেমীরা শুনেছেন প্রকৃতির বন্দনা থেকে ভালোবাসার বার্তা দেওয়া কিংবা হৃদয় উদ্দীপ্ত করা বিচিত্র বাণীর গান। প্রায় দুই ঘণ্টার সেই সুর সুফরের মাঝে খুঁজে নিয়েছেন ভালোলাগার অনুভব। আর এই সংগীতাসরটি সাজানো ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐশ্বর্যময় সৃষ্টির নির্যাসমাখা গানের সুরে। পরিবেশিত হয়েছে একক থেকে সম্মেলক কণ্ঠের পরিবেশনা। সঙ্গে ছিল পাঠ ও আবৃত্তি। কবিগুরুর প্রয়াণবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে শুক্রবার ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হয় এই সংগীতানুষ্ঠান।
সম্মেলক সুরের আশ্রয়ে পরিবেশনা পর্বের সূচনা হয়। বৃষ্টিস্নাত দিনের সন্ধ্যায় অন্তরীক্ষ থেকে ঝরে পড়া জলের ধারার প্রতি প্রকাশিত হয় সুরাশ্রিত অনুরাগ। অনেকগুলো কণ্ঠ মিলে যায় এক স্বরে। সকলে মিলে গেয়ে শোনায়- শ্রাবণের ধারার মতো পড়–ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে/তোমারি সুরটি আমার মুখের ’পরে, বুকের ’পরে ...। একক কণ্ঠের পরিবেশনায় মাকসুরা আখতার অন্তরা শুনিয়েছেন- ভয় হতে তব অভয় মাঝে নূতন জনম দাও হে/দীনতা হতে অক্ষয় ধনে, সংশয় হতে সত্যসদনে ...। জেগে ওঠার বারতায় এটি এম জাহাঙ্গীর শুনিয়েছেন- আপনি অবশ হলি, তবে বল দিবি তুই কারে ...।
সত্যম কুমার দেবনাথ পরিবেশন করেন ‘বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে’। ভয় ছেড়ে অভয়ের পথরেখা সন্ধানের প্রত্যাশায় তানিয়া মান্নান গেয়েছেনÑ আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে/আমার ভয় ভাঙা এই নায়ে ...। অনেকটা একই রকম অনুভবের প্রকাশে অভিজিৎ দাস পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘নিশি-দিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে’। রবীন্দ্র রচনা থেকে ‘সত্যের আহ্বান’ শীর্ষক পাঠ পরিবেশন করেন সুমনা বিশ্বাস। অসীম দত্ত গেয়ে শোনান ‘তবু, পারিনে সঁপিতে প্রাণ’ শিরোনামের সংগীত। আইরিন পারভীন অন্না গেয়েছেন ‘তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে’। মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য পরিবেশন করেন ‘প্রচ- গর্জনে আসিল একি দুর্দিন’।
‘এই কথাটা ধরে রাখিস’ শিরোনামের গান শোনান অমী দেবনাথ। তাহমিদ ওয়াসীফ ঋভু শুনিয়েছেন ‘পিনাকেতে লাগে টঙ্কার’। আজিজুর রহমান তুহিন পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘এখন আর দেরি নয়’। এর পর শিশুতীর্থ শীর্ষক আবৃত্তি পরিবেশন করেন জয়ন্ত রায়। প্রতিকূলতার মাঝে উদ্দীপ্ত হওয়ার অভয় বাণীতে সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি, বারে বারে হেলিস নে ভাই’। এর পর প্রতিবাদী উচ্চারণে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয় ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো’। জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।