ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

তারকাদের বিদ্বেষ-বিভেদ

আনন্দকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২১:৪২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তারকাদের বিদ্বেষ-বিভেদ

ফেরদৌস, অরুণা বিশ্বাস ও তারিক আনাম খান

শোবিজে গেল দুই মাসেরও বেশি সময় শিল্পীরা কাজ থেকে দূরে আছেন। নাটকে টুকটাক শূটিং হলেও বন্ধ আছে সিনেমার শূটিং। এখন পর্যন্ত নতুন কোনো সিনেমার খবর আসেনি। এরমধ্যে ডিপজলের একটি সিনেমা মুক্তি পেলেও সেটি কোনো সাড়া ফেলেনি। অন্যদিকে সংগীতশিল্পীরাও স্টেজ শো থেকে দূরে আছেন। এ নিয়ে অনেক শিল্পীই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

জানান, এভাবে আর কতদিন কাজ থেকে দূরে থাকবেন? তবে কাজ থেকে দূরে থাকলেও বন্ধ নেই শোবিজে তারকাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ। সাংগঠনিক মতোবিরোধের বাইরে শোবিজে তারকাদের মধ্যে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ ও বিভেদ। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় চোখ রাখলেই সেটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একে অপরের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ফেসবুক পোস্ট ও বিভিন্ন জনের পোস্টের কমেন্টে। অনেকেই এটিকে শোবিজের জন্য মারত্মক অসনিসংকেত হিসেবে দেখেছেন। 
একটা সময় সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে পারস্পরিক যে সম্পর্ক, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল তা এখন তেমন নেই। একজন উঠতি তারকাও সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা করছেন তার এক যুগ আগে আসা কোনো সিনিয়রের। যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন ন্যায় অন্যায়ের। 
শোবিজের কারও কারও মন্তব্য, দেশের অন্যসব সেক্টরের মতো এ অঙ্গনেও গেল পনেরো বছর নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। কেউ কেউ দলীয় পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অন্যরা তাদের ক্ষোভ ও আক্রোশের মাধ্যমে সে সব প্রকাশ করছেন । ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই এ আক্রোশ বাড়ছে।

সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় নায়ক  ফেরদৌস, রিয়াজসহ আরও অনেকে গা ঢাকা দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এদের নিয়ে সাধারাণ মানুষদের পাশাপাশি অন্য তারকারাও সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। এরইমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ফাঁস হয় শিল্পীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’।  গ্রুপের স্ক্রিনশট ফাঁস যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু শিল্পীর জন্য।

তাদের নিয়ে সর্বত্র চলছে সমালোচনার ঝড়। এর রেশ ধরে সাধারণ শিল্পী ও আরও অনেকের আক্রোশের মুখে আছেন অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, সোহানা সাবা, সাজু খাদেম, জ্যোতিকা জ্যোতি, ভাবনাসহ এক ঝাঁক মুখ। কেউ কেউ এদের শাস্তিরও দাবি করছেন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘আলো আসবেই’ এটির রেশ ধরে একটা পক্ষ অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচিতদের পদত্যাগের দাবিও করছেন।

অভিনয় শিল্পী সংঘের কার্যনির্বাহী পরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সংস্কারকামী অভিনয়শিল্পীরা বলছেন, ‘আমরা আর আপনাদের নির্বাচিত অভিভাবক মানি না।’ মঙ্গলবার বিকেলে ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবরের ‘কথা বলতে চাই, কথা শুনতে চাই’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা থেকে এই ঘোষণা দেন অর্ধশতাধিক সংস্কারকামী অভিনয়শিল্পী। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর সংস্কারকামী অভিনয়শিল্পীরা বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় অভিনয় শিল্পী সংঘের যাঁরা একটি নির্দিষ্ট শাসনকাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে অশিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন, তাদের সবাইকে পুরো জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে।

পিছিয়ে নেই গানের মানুষেরাও। অনেকের ফেসবুক পোস্টের কমেন্টস বক্সে দেখা যায় কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নিকে কেউ কেউ বিগত সরকারের দালাল বলছেন। গান বাংলার নিয়মিত শিল্পীদের নিয়েও অনেকের আক্রোশ দেখা যায়। গান বাংলার হয়ে যে সব শিল্পী নিয়মিত গান করতেন তাদের নিয়েও সামাজিক যোগাযোগেমর মাধ্যমে অনেক সমালোচনার পোস্ট এরই মধ্যে দেখা গেছে। 
বর্ষীয়ান অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরেই শিল্পীদের কাজকর্ম নেই। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে শিল্পীদের বিভাজন ভালো লাগছে না। বিভেদ-বিভাজন কখনই কাম্য নয়। আমি শুনব না, কথা না শুনলে থাকব না ভেঙে দেব। এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। অভিনেতা আরও বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সামনে কিভাবে আমরা শুরু করতে পারব, এটি ভাবার বিষয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আগে বাঁচানো দরকার। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।

×