ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

শিল্পকলার কার্যক্রম হবে জনবান্ধব  

সংস্কৃতি প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিল্পকলার কার্যক্রম হবে জনবান্ধব  

নবনিযুক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রমে কোনো শাসকের গুণগান করা হবে না। সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে না একাডেমি।  একইভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রচারযন্ত্র হিসেবে কাজ করবে না। শাসকের জায়গা নয়, একাডেমির হবে জনগণের জায়গা।  একাডেমির কার্যক্রম পরিচালিত হবে জনগণের স্বার্থে। ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোত্র নির্বিশেষে একাডেমির কার্যক্রম হবে জনবান্ধব। 

প্রাধান্য দেওয়া হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুত্ববাদের সংস্কৃতিচর্চাকে। বিবিধ সংস্কৃতির হাজার মালভূমি দিয়ে গঠিত সৃষ্টি-কৃষ্টির যৌথ জমিন হবে একাডেমি। সামষ্টিক জনগোষ্ঠীর চিন্তার প্রতিফলন থাকবে কর্মকান্ডে। সেই প্রেক্ষাপটে শুধু বিনোদন না ভেবে সংস্কৃতিচর্চাকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সংস্কৃতিখাতের বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

মোট বাজেটের ৩ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে সংস্কৃতি খাতে। অন্যদিকে শিল্পকলা একাডেমির প্রশাসন হবে দুর্নীতিমুক্ত।  সকল কাজে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে ১৯৮৯ সালের শিল্পকলা একাডেমি আইনের সংস্কার করা হবে। একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত শিল্পকলা একাডেমি পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে একাডেমির কার্যক্রম।

এভাবে শিল্পকলা একাডেমিকে নবরূপে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানান একাডেমির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ।  সোমবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন প্রখ্যাত এই নাট্যনির্দেশক ও শিক্ষক। 

বুধবার একাডেমির নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে নতুন রূপকল্প, পরিচালন-নীতি ও আশু করণীয় বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমি পুনঃসচল, রূপান্তর ও সংস্কার শীর্ষক এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালনের মাধ্যমে সভার সূচনা হয়। 

প্রাথমিকভাবে প্রধান তিনটি লক্ষ্যে কথা তুলে ধরে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেগুন বাগিচাস্থ শিল্পকলা একাডেমির মূল কার্যালয়ের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সচল করা হবে। বিভিন্ন নাট্যদলের নাট্য মঞ্চায়নে নাট্যশালার তিনটি মঞ্চ খুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। অনুশীলনের জন্য মহড়া কক্ষগুলো খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন এবং জাতীয় চিত্রশালা খুলে দিয়ে নাচ-গান, আবৃত্তি ও চারুশিল্প চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত করে সংস্কৃতি স্রোতধারা পুনরায় গতিশীল করা হবে। সেই সমান্তরালে দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সংস্কার  করে সেখানকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড চালু করা হবে। অন্য দু’টি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, একাডেমির আর্থিক কাজের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করা হবে।

শিল্পকলা একাডেমিকে গণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, আমরা দেশের প্রতিটি মানুষকে শিল্পবান্ধব করে গড়ে তুলতে চাই। সেক্ষেত্রে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রতিটি জেলার সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ওই জেলার মানুষের চাহিদার প্রতিফলন ঘটবে। লোকজ শিল্পীদের প্রাধান্য দেওয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রমে। এসময় তিনি প্রয়োজনে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসা শিল্পীদের আবাসন সংকট দূরীকরণে কেন্দ্রীয়ভাবে ডরমেটরি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা জানান।

যাত্রাদলের পালা মঞ্চায়নে জেলা প্রশাসকের  অনুমতিসংক্রান্ত জটিলতা বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ জামিল বলেন, পালা মঞ্চায়নে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার ব্রিটিশ আমলের পুরনো প্রথা আমরা বাতিল করতে চাই। বরং কোনো অশ্লীলতা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে পালা মঞ্চায়নের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

নতুন রূপকল্প অনুযায়ী একাডেমিকে জনগণতান্ত্রিক শিল্প-পরিসর হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সৈয়দ জামিল বলেন, এক জাতি, এক রাষ্ট্র, এক নেতা, এক ভাষা, এক ধর্ম ও এক মতাদর্শভিত্তিক সংস্কৃতিচর্চাকে সর্বদা ‘না’ বলা হবে। বরং বহু জাতি, ভাষা, ধর্ম ও ভাবাদর্শের সংস্কৃতিকে লালন করা হবে।  দেশজ সংস্কৃতির সঙ্গে বৈশ্বিক সংস্কৃতির সেতুবন্ধন রচনা করে নতুন দিনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সাংস্কৃতিক কূটনীতির সৃজনশীল ভরকেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে শিল্পকলা একাডেমি।

 

মনোয়ার/শহিদ

×