ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

সালমান শাহ’র মৃত্যু: কী ঘটেছিল সেদিন

প্রকাশিত: ১৪:০২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সালমান শাহ’র মৃত্যু: কী ঘটেছিল সেদিন

সালমান শাহ

আজ থেকে ২৮ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দিনটিতে বাংলা সিনেমার একটি ক্ষণস্থায়ী উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।মাত্র ২৫ বছর বয়সে মারা গেছেন সালমান—অমর এই নায়কের চলে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড তা আজও রহস্য। 

সে রহস্যের সন্তোষজনক কিনারা হয়নি আজও। এখনো তার মৃত্যু নিয়ে চলে আলোচনা-সমালোচনা। তবে ঘটনা যাই হোক অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে তিনি পেয়েছেন বিপুল জনপ্রিয়তা। তৈরি করেছেন অসংখ্যা ভক্ত। মুত্যর পরও তার জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। 

সালমানের অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৮৫ সালে, বিটিভির ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটক দিয়ে। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে আসেন চলচ্চিত্রে।প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। পরের তিন বছরে অভিনয় করেছেন ২৭টি ছবিতে। অধিকাংশই হয়েছে দর্শকপ্রিয়, বাণিজ্যিকভাবে সফল। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাবনূর, মৌসুমীসহ অনেক তারকা।

আজ ৬ সেপ্টেম্বর সেই কালজয়ী নায়কের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু সেদিন তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছিল, ২৮ বছর পর আজও জানা গেলো না সেই রহস্য। মামলার তদন্তভার বারবার বদল হলেও, এখনও রয়ে গেছে ধোঁয়াশা।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী বলেন, “সালমানের বাবা সকালে তার বাসায় যায়। কিন্তু বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ'র বাবাকে তাঁর ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না।”

নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, "বলেছে স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ'র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ'র বাবা) জোর করে উপরে গেছেন। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ'র স্ত্রী)।"

"উনি (সালমান শাহ'র বাবা ) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ'র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।"

বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ঐ টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ'র বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন। সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী।

নীলা চৌধুরী বলেন, "খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ'র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে। আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে।”

ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে।

সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তাঁর ভক্তদের মাঝে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের। দেশজুড়ে তাঁর অসংখ্য ভক্ত এ মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি। এমনকি এতে বেশ কয়েকজন তরুণীও আত্মহত্যা করেছে বলেও তখনকার পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। 

বরাবরই পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল, তারা হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে।

দিবা

×