ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১

দর্শকের আগ্রহে বিদেশী সিরিয়াল

দুর্বল গল্পে ধারাবাহিক নাটক

এন আই বুলবুল

প্রকাশিত: ০০:২৯, ৪ জুলাই ২০২৪

দুর্বল গল্পে ধারাবাহিক নাটক

’৯০ দশকের জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’

জৌলুস হারাচ্ছে টিভি ধারাবাহিক নাটক। একটা সময় টিভি ধারাবাহিক নাটকের দর্শক ছিল ভরপুর। নব্বইয়ের দশকের ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘এই সব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘আজ রবিবার’ পরবর্তীতে ‘বন্ধন’, ‘৫১বর্তী’, ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘৪২০’, ‘হাউসফুল’, ‘সাকিন সারিসুরি’, ‘আলতা সুন্দরী’ ও ‘নোয়াশাল’সহ অনেক ধারাবাহিকের কথা আজও দর্শক মনে রেখেছেন। এ সময়ের অনেক তারকাও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন এ টিভি ধারাবাহিক নাটক থেকেই।

সেই টিভি ধারাবাহিকের দর্শক এখন শূন্যের কোটায় প্রায়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ধারাবাহিক নাটক প্রচার হলেও এগুলো আর আগের মতো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না। কোন চ্যানেলে কোন ধারাবাহিক প্রচার হচ্ছে এটিও অধিকাংশ টিভি দর্শক খবর রাখে না। মূলত দুর্বল গল্প ও দুর্বল নির্মাণের কারণেই এসব নাটক থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নেয়। একই কারণে চলতি সময়ের অনেক তারকাও টিভি ধারাবাহিকে কাজ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। ছোটপর্দায় বর্তমানে তারকার অভাব নেই।

তবে তারা খণ্ড নাটক ও ওটিটির কাজের প্রতিই বেশি মনোযোগী। আবার যারা নিয়মিত ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করতেন তারাও অনেকে এখন আর আগের মতো ধারাবাহিকে কাজ করছেন না। অন্যদিকে ভারতীয় চ্যানেলের পাশাপাশি দর্শকের আগ্রহ এখন বিদেশী টিভি সিরিয়ালে। প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলে বাংলায় ডাবিংকৃত বিদেশী টিভি সিরিয়াল প্রচার হচ্ছে। দর্শক এসব সিরিয়াল দেখছে বলেও জানান টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষরা। একই চ্যানেলে দর্শক বিদেশী সিরিয়াল দেখলেও কেন দেশীয় সিরিয়াল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? এমন প্রশ্ন অনেকের মুখে শোনা যায়।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘স্যাটেলাইট চ্যানেলের শুরুর দিকে যেসব ধারাবাহিকগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে এখনো অনেক নির্মাতা সেই ধারাবাহিক নাটকগুলোর ছায়া অবলম্বনে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করছেন। দর্শক একই গল্প আর কত দেখবে? সময়ের সঙ্গে সবকিছু বদলে গেছে। কিন্তু আমাদের টিভি ধারাবাহিকের গল্প এখনো সেই গ্রামীণ পটভূমির মধ্যেই বেশিরভাগ আটকে আছে। এছাড়া অনেক ধারাবাহিক নাটকেই দেখা যায় একটা সময় শিল্পীর চরিত্রের বৈচিত্র্যতা থাকে না। অকারণেই একটি চরিত্রকে লম্বা করা হয়।

টিভি ধারাবাহিকে দর্শক ফেরাতে হলে সময়োপযোগী গল্প নির্বাচন করতে হবে। নির্মাতাকে বুঝতে হবে দর্শক এ সময়ে কি চাচ্ছে? বিদেশী সিরিয়াল কিংবা ভারতীয় সিরিয়ালগুলো কেন দর্শক দেখছে? একজন নির্মাতা যদি এ বিষয়গুলো ভালোভাবে খেয়াল করে তার নাটক নির্মাণ করেন তাহলে সে ধারাবাহিক দর্শক দেখবে বলে মনে করি’। চলতি সময়ের অনেক তারকাই মনে করেন, খ- নাটকে অল্প সময়ে দর্শকের কাছ থেকে যতটা সাড়া পাওয়া যায় ধারাবাহিক নাটকে সেটি সম্ভব না। যার কারণে নতুন প্রজন্মের তারকারা একক নাটকেই নিয়মিত কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ বলেন, আমাদের এখন শুধু নাটকের গল্প দুর্বল হচ্ছে বলা ঠিক হবে না। নাটকের বাজেটও অনেক সংকট। টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশী সিরিয়ালের বাজেট নিয়ে যতটা মনোযোগী দেশীয় সিরিয়ালের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম। আরও কয়েক বছর আগেও একটা ধারাবাহিক নাটকের জন্য যে বাজেট পাওয়া যেত এখন আর সেটি অনেক নির্মাতাই পাচ্ছেন না। তাহলে কিভাবে ভালো নাটক নির্মাণ সম্ভব হবে? দিন শেষে সবকিছুর জন্য ভালো অর্থেরও প্রযোজন আছে।

এছাড়া যারা ধারাবাহিক নাটকে কাজ করতে চান না, তারা অল্প সময়ে তারকাখ্যাতি পাবার জন্যই একক নাটক বেছে নেন।’ নাটক সংশ্লিষ্টদের মতে, টিভি ধারাবাহিক নাটক জৌলুস হারানোর জন্য শুধু একটি পক্ষকে দায়ী করলে হবে না। এখানে যেমন- দুর্বল স্ক্রিপ্টে নাটক হচ্ছে তেমনি টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষদের আছে উদাসিনতা। 
বিভিন্ন চ্যানেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে টিভি নাটকের খারাপ সময় যাচ্ছে। তারা যদি ভালো বাজেট দিতেন তা হলে অনেক তারকা-শিল্পী এখানে কাজ করতে আগ্রহী হতেন। ভালো বাজেটের সংকটের কারণে নির্মাতারও বিকল্প পথে হাঁটছেন। একইসঙ্গে শিল্পীরাও ইউটিউব ও ওটিটির কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

×