ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নজরুলের নাটক নিয়ে শুরু সপ্তাহব্যাপী উৎসব

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ১ জুন ২০২৪

নজরুলের নাটক নিয়ে শুরু সপ্তাহব্যাপী উৎসব

মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মঞ্চস্থ বউয়ের বিয়ে নাটকের দৃশ্য

নাটক নিয়ে ভিন্নধর্মী এক আয়োজন। সেই ভিন্নতা হচ্ছে শুধু নজরুলের নাটক নিয়ে সাজানো গোটা এক নাট্যোৎসব। সব মিলিয়ে জাতীয় কবির লেখা দশটি নাটক মঞ্চস্থ হবে এই নাট্যায়োজনে। এর মধ্যে রয়েছে লেটো আঙ্গিকের ছয় এবং প্রসেনিয়াম ঘরানার চারটি নাটক।  

সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের জীবনাশ্রিত যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী নজরুল’।  নজরুলের লেখা নাটক নিয়ে প্রথমবারের মতো ভিন্নধর্মী এ উৎসবের  আয়োজক নজরুল চর্চা কেন্দ্র বাঁশরী। শনিবার থেকে মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে শুরু  হলো সপ্তাহব্যাপী বাঁশরী নজরুল নাট্যসমারোহ। 
বিকেলে এই নাট্যাসমারোহের সূচনা হয়। উৎসব উদ্বোধন করেন নাট্যজন আতাউর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন অনুবাদক ও লেখক অধ্যাপক আব্দুস সেলিম। সভাপতিত্ব করেন বাঁশরীর সভাপতি ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও উৎসব সমন্বয়ক গোলাম সারোয়ার। 
উদ্বোধনী বক্তব্যে আতাউর রহমান বলেন, আমি যাত্রাপালা ভালো বুঝি কিন্তু  লেটো শিল্প আঙ্গিকটা ভালো বুঝি না। অথচ নজরুল মাত্র দশ বছর বয়সে সেটা করেছেন।  আমি মনে করি নজরুল শুধু জাতীয় কবি না তার সৃজন বিশ্বজনীন। গোলাম সারোয়ার বলেন, কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিকের  সমান্তরালে অনন্য এক নাট্যকার নজরুল।

তার রচিত শতাধিক নাটকের মধ্যে আমরা ৭৭টি সংগ্রহ করেছি।  সেখান থেকে দশটি নিয়ে এবারের উৎসবে পরিবেশনা হচ্ছে। সঙ্গে নজরুল ইসলামের জীবনাশ্রয়ী যাত্রাপালা পরিবেশিত হচ্ছে। এই উৎসবের মাধ্যমে নজরুলের নাট্যকার সত্তাকে সন্ধানের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

খালেকুজ্জামান বলেন, নজরুল ইসলামের নাটক নিয়ে এমন উৎসব বাংলাদেশসহ  বহির্বিশ্বে বিরল এক ঘটনা। প্রথম দিন   যেভাবে দর্শক-শ্রোতা উৎসাহ নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন আশা করি আগামী ছয় দিনও সকলে নজরুলের নাটক দেখতে আসবেন। 
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে দিনে মঞ্চস্থ হয় দুটি নাটক।  প্রথমে রবীন্দ্র সৃজনশীল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্চস্থ করে কবির লেখা বউয়ের বিয়ে শিরোনামের নাটক। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন ধীমান চন্দ্র বর্মণ। গ্রামীণ জীবনের হাস্যরসাত্মক গল্প নিয়ে আবর্তিত হয়েছে প্রযোজনাটির কাহিনী। লেটো আঙ্গিকের এই নাট্যপালায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুয়েল চৌধুরী, পলক চক্রবর্তী, সানজিত ইসলাম সুপ্ত, রিফাত আরা জুই প্রমুখ।
এদিন মঞ্চস্থ নজরুল রচিত দ্বিতীয় নাটকটির শিরোনাম  ছিল সেতুবন্ধ।   বাঁশরী রেপার্টরী প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন  গোলাম সারোয়ার। নাটকের কাহিনীতে  দেখা যায়, স্বর্গের দেবী পদ্মা জানতে পারে স্বচ্ছ জলরাশি নিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীতে যন্ত্রদাবকুল বাঁধ নির্মাণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

পদ্মা দেবী এই অপমান সইবে না। পদ্মার গতিবেগ রুখে দিয়ে জলাশয়কে নষ্ট করে দেওয়ার দানবকুলের অভিলাষকে রুখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মেঘরাজ পবন ও অন্য দেবতাদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন। মেঘরাজ, পবণ, ঝঞ্ঝা তরঙ্গ সেনাদল নিয়ে পদ্মা দেবীর সহায়তায় এগিয়ে আসে মেঘদেবী। শুরু হয় তুমুল লড়াই।

লড়াইয়ে বিদ্ধস্ত হয়ে যায় দানবকুলের ষড়যন্ত্র, স্বর্গরাজ্য প্রবেশের সকল প্রচেষ্টা হয়ে যায় ব্যর্থ। তবু মৃত্য কাতর কণ্ঠে যন্ত্রদানব উচ্চারণ করে- আমার মৃত্যু নেই দেবী, আমি আবার নতুন দেহ নিয়ে ফিরে আসব। পদ্মা দেবীও জবাব দেয়Ñ  জানি যন্ত্ররাজ তুমি বারে বারে আসবে কিন্তু প্রতিবারেই তোমার এমনি মৃত্যুদন্ড নিয়ে ফিরে যেতে হবে।
সেতুবন্ধ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের অভিনয় করেছেন শারমিন সঞ্জিতা খানম পিয়া, সুরভী রায়, চন্দ্রিমা দেওয়া, জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপী প্রমুখ।
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নিদের্শক গোলাম সারোয়ার বলেন, প্রত্যেক নাট্যকারের নাটকে একটি বিশেষ  বৈশিষ্ট থাকে। কবি নজরুলের নাটকের বেলায় থাকবে না তা তো নয়। সেতুবন্ধ কবির একটি অনব্য সৃষ্টি। এ নাটকে কবিতা, গান, আবৃত্তি, নৃত্যের সমন্বয়ে মিলিয়া মিশিয়া একাকার হয়েছে। অথচ তা নৃত্যনাট্য নয়, আবার গীতিনাট্য বলা যাবে না। 
আজ রবিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মঞ্চস্থ হবে ‘সুদখোর ব্রজেন মুখার্জী।’ থিয়েটার ৫২ প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন জয়িতা মহলানবীশ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মঞ্চস্থ হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গভূমির প্রযোজনা ‘বউয়ের বিয়ে’। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মোসাদ্দেক হাবিব মুন্না।

আগামীয় সাত জুন পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। আগামী শুক্রবার সমাপনী দিনের সকালে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ‘নজরুলের নাটকের কথা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল পাঠ করবেন ড. আমিনুর রহমান সুলতান।

×