ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

সংস্কৃতি সংবাদ

রবীন্দ্র নজরুল ও গণসংগীত উৎসবে স্নিগ্ধ শহর

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১০, ১০ মার্চ ২০২৪

রবীন্দ্র নজরুল ও গণসংগীত উৎসবে স্নিগ্ধ শহর

গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে নজরুল উৎসবে ওয়ার্দা রিহাব ও তার দলের নৃত্য পরিবেশনা

শহর ঢাকায় বইলো সুরের স্রোতধারা। সেই সুবাদে গানপ্রেমীদের জন্য দারুণ একদিন ছিল শনিবার। নানা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে সংগীতাশ্রয়ী আয়োজনসমূহ। সেথায় শোনা গেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের হৃদয়স্পর্শী গানের সুর থেকে জাতীয় কবি নজরুলের কালজয়ী গীতবাণী। শুধু কি তাই? কেউবা শুনেছে মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের বার্তাবহ গণসংগীত। এভাবেই বৈচিত্র্যময় সুরের আভায় স্নিগ্ধ রূপে আবির্ভূত হলো এই নগর। সকাল থেকেই সরব ছিল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় আঙিনা।

এখানে সারাদেশ আসা উদীয়মান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীরা মেলে ধরেছেন তাদের চর্চিত কণ্ঠস্বরকে। সন্ধ্যায় ছিল পাঠ-গানসহ প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পরিবেশনায় বর্ণিল রূপে ধরা জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন। অন্যদিকে বসন্ত বিকেল থেকে রাত অবধি গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে নজরুলসংগীতের সুরসুধায় নিমজ্জিত হয়েছে শ্রোতাকুল।

দুদিনব্যাপী নজরুল উৎসবের শেষ দিন ছিল শনিবার। এই দুই সংগীতায়োজন আরও বেশি বৈচিত্র্যময় হয়েছে আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনায়। সুন্দরের প্রতিচ্ছবিময় এ দুই আয়োজনের সমান্তরালে রাজধানীর আরেক প্রান্তঃকেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়েছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব। 
সুন্দরের হাতছানিময় নজরুল উৎসব : নজরুলসংগীত সংস্থা, গুলশান সোসাইটি ও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার আয়োজিত নজরুল উৎসবের শেষ দিন ছিল শনিবার। গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে অনুষ্ঠিত উৎসবটিতে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রখ্যাত নজরুলসংগীত শিল্পীরা। তাদের সঙ্গী হয়েছেন দেশের নানা প্রান্তের প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীবৃন্দ।

অব্যয় ঋদ্ধির গাওয়া ‘জয় আনন্দ ভৈরব’ শীর্ষক গানের সুরে পরিবেশনা পর্ব শুরু হয়। ঋতুরাজের বন্দনায় মনিষ সরকার শুনিয়েছেন ‘বসন্ত মুখর আজি’। শ্রাবন্তী ধর পরিবেশন করেন ‘আমি পথমঞ্জুরী ফুটেছি’। নাসিমা শাহীন ফ্যান্সীর গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘ছেড়ে দাও মোরে আর হাত’। শাহীন সামাদ শুনিয়েছেন ‘রঙ্গিলা আপনি রাধা’। ইয়াকুব আলী খান গেয়েছেন ‘কত ফুল তুমি পথে’। খায়রুল আনাম শাকিল গেয়েছেন ‘সাধ জাগে মনে’। নাশিদ কামালের গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘আনমনে জল নিতে’।

নজরুলসংগীতের সহযোগে নাচের পরিবেশনা উৎসবে যুক্ত করেছে বর্ণিলতা। সেই সূত্রে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব ও তার দল। ‘সৃজন ছন্দে আনন্দে’ গানের সুরে নাচ করেন র‌্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস ও তার দল। নজরুলের ‘ঈশ্বর’ শিরোনামের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী মো. শওকত আলী। এ ছাড়া আবৃত্তি পরিবেশন করেন রূপা চক্রবর্তী। এর বাইরে একক কণ্ঠের গান শোনান ফাতেমা তুজ জোহরা, গার্গী ঘোষ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, নাহিয়ান দুরদানা সূচিসহ খ্যাতিমান ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীবৃন্দ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের মধ্যে গান শুনিয়েছেন পায়েল কর, রাঘব চট্টোপাধ্যায় ও পণ্ডিত তুষার দত্ত। 
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন : জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ আয়োজিত তিনদিনের ৪২তম বার্ষিক অধিবেশন বা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ছিল শনিবার। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত আয়োজনে এদিন সকালে সাধারণ বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে ‘রবীন্দ্র শিক্ষাদর্শ ও বাংলাদেশের নবশিক্ষাযাত্রা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। নাচ-গান ও কবিতার আশ্রয়ে সজ্জিত ছিল সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব : কণ্ঠ ছেড়ে গান গেয়ে, কণ্ঠরোধের সব কালাকানুন ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হলো উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত দ্বাদশ সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতা। শনিবার উৎসবের সমাপনী দিনের অনুষ্ঠানমালা আয়োজিত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। উদীচী সংগীত বিভাগের পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব।

পরিবেশিত হয় ‘মারো জোয়ান হেইয়ো’, ‘তুমি মানুষ আমি মানুষ সকল এক মায়ের সন্তান’ ও ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান’ শিরোনামের তিনটি গান। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসব ও প্রতিযোগিতা প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ সেলিম। উৎসব ও প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের হাতে ফুল, ক্রেস্ট এবং সনদপত্র তুলে দেন উদীচী কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। 
সাংস্কৃতিক পর্বে সংগীত পরিবেশন করে শ্রেয়া রায়, তীর্থ বিশ্বাস, তনুশ্রী পাল, অনুশ্রী শর্মা, রাহমিম ইয়াসরীব সামিন, ইমন দাস, জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ ও অলি উল্লাহ। এ ছাড়া আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে একক সংগীত পরিবশন করেন প্রলয় সাহা। সমবেত সংগীত পরিবেশন করে আমন্ত্রিত দল বহ্নিশিখা এবং চারণের শিল্পীরা।

×