মুহিন খান
এদেশে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়, কিন্তু তাদের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় না, শেষ বয়সে হাতপাততে হয়- পুরস্কারপ্রাপ্ত হোক বা না হোক! সত্যি এবার আর শুনে থাকলে চলবে না, কারণ এবার তো আমি দেখছি! সংস্কৃতি রক্ষা করাও খুব জরুরি হয়ে পড়েছে, শক্তভাবে- অসাধু চক্রের কাছ থেকে এদেশের সংস্কৃতি তথা- গান, নাটক, চলচ্চিত্রসহ জড়িত সকল অঙ্গনকে বাঁচাতে হবে।’
আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, আমরা শুনেছি। এ প্রজন্ম দেশের জন্য ভাববে, দেশটা আরও সুন্দর হবে, নিয়মনীতি ঠিক থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি ৮০-৯০ দশকের গান নিয়ে ভাবলে বুঝতে পারি, আমাদের দেশ গানের সুন্দর একটা স্বর্ণালী সময় পার করেছে। ঠিক তেমনি আধুনিক, ব্যান্ড বা অন্য যে কোনো ধরনের নতুন গান এসেছে ৯০- বিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায়। গান প্রকাশ হয়েছে অসংখ্য, কিন্তু কেউ ভাবেননি এই গানগুলো সংরক্ষণ বা ব্যবসায়িক ব্যবহারের কথা, ভাবেননি ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা। এক কথায় প্রকৃত কপিরাইট আইনের প্রয়োগ এবং তা থেকে বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোতে, সেসব গান বা শিল্পকর্মের কীভাবে বাণিজ্যিক মেধাস্বত্ব বিতরণ করা হবে- তা নিয়ে।
এভাবে কথাগুলো বললেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী মুহিন খান। বিভিন্ন রিয়েলিটি শো থেকে যে কজন শিল্পী পরবর্তীতে নিজের গায়কী ও মেধা দিয়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম এ গায়ক। গানের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও লেখেন তিনি। আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে সঙ্গীতের সমসাময়িক নানা বিষয়েও কথা বলেন। জানালেন জাতীয় চলচ্চিত্র নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, ‘এদেশে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়, কিন্তু তাদের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় না, শেষ বয়সে হাতপাততে হয়- পুরস্কারপ্রাপ্ত হোক বা না হোক! সত্যি এবার আর শুনে থাকলে চলবে না, কারণ এবার তো আমি দেখছি!
সংস্কৃতি রক্ষা করাও খুব জরুরি হয়ে পড়েছে, শক্তভাবে- অসাধু চক্রের কাছ থেকে এদেশের সংস্কৃতি তথা- গান, নাটক, চলচ্চিত্রসহ জড়িত সকল অঙ্গনকে বাঁচাতে হবে।’ কপিরাইট আইন নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এদেশের জাতীয় কবির গান, কবিতা ও তার সকল কর্ম এদেশের জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া ও সেই সঙ্গে সংরক্ষণ করা হোক। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করতে চাইলে, শিল্পীদের এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মের সকল মাধ্যমকে একই ছাতার নিচে এনে, রয়্যালিটি সিস্টেমকে শক্ত করা জরুরি। আমার মনে হয় ভাবনাটা এদেশের কোটি কোটি তরুণ প্রজন্মের, যুবকের বা বৃদ্ধ সকলের, যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত।’
আমাদের দেশে নানা পেশার লোক আছেন। তারা তাদের সেসব পেশায় নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন। কিন্তু সঙ্গীতশিল্পীদের ক্ষেত্রে তার বিপরীত। এটি নিয়েও শিল্পী তার ক্ষোভ জানান। তিনি বলেন, পুরস্কারপ্রাপ্তির পর মনে হয় সত্যি আমাদের জাতীয়করণ জরুরি, তা না হলে এমন সঙ্গীত শিক্ষালয়, বা সংস্কৃতিবিষয়ক শিক্ষালয়ের দরকার কি? বেতার ও টেলিভিশনের সকল তালিকাভুক্ত শিল্পীকে শিল্পীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য শিল্পীকে পেশা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হোক। আপনি কি করেন? এই প্রশ্ন থেকে আজও এই শিল্পীসত্তার মানুষ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই বেঁচে থাকবে তা না করলে।’