মিহির ও হিমু
জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃত্যুতে দেশের মিডিয়াপাড়া বেশ তোলপাড়। এ মৃত্যুর কারণ জানতে উদগ্রীব মিডিয়াকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ সবাই। জানা যায় হিমুর মৃত্যুর সময় প্রেমিক উরফি জিয়া ছাড়াও সেখানে ছিলেন মেকআপ আর্টিস্ট মিহির।
এ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে ইতোমধ্যে উরফিকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব তাজিন আহমেদের মৃত্যুর সময়ও পাশে ছিলেন। এমনকি দুজনকে হাসপাতালে নেয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসকের মৃত ঘোষণা পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন মিহির।
রবিবার (৫ নভেম্বর) সকালে আলোচিত মিহির নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন। সেখানে তিনি হুমায়রা হিমুর মৃত্যু নিয়ে কথা বলেন। সঙ্গে রাখেন বেশ কয়েকটি প্রশ্নও। ১৫ মিনিটের সেই লাইভের শুরুতেই মিহির জানান, তিনি প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। এজন্য তিনি বিষয়টি সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে লাইভে এসেছেন।
মিহির বলেন, ‘ফেসবুকে আমাকে নিয়ে ঝড় তুলছে কিছু মানুষ। আমি হেন, আমি তেন, আমি ড্রাগ ডিলার। তারপর তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এরপরও পুলিশ আমাকে রিমান্ডে নেয় না কেন? তিনি বলেন, আপনারা যে এটা লিখেছেন; আপনারা কি জানেন, আমি এই তিনদিন কোথায় ছিলাম? আমি হিমুকে বাসা থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেছি, যখন ডাক্তার ঘোষণা দিয়েছে যে, হিমু মৃত সঙ্গে সঙ্গে হিমুর বয়ফ্রেন্ড দুটি মোবাইল নিয়ে পালিয়ে গেছে।
তারপর ওর (হিমুর) খালারা আসে, আমরা থানায় গিয়েছি, স্টেটমেন্ট দিয়েছি। তখন থেকে আমি কালকে পর্যন্ত থানায় বসে ছিলাম। কালকে সকালে ওসি আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পুরান ঢাকা পাঠিয়েছেন। ওখানে গিয়ে আমি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বাক্ষী দিয়েছি। তারপর ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে বলেছেন যে, ঠিক আছে আপনি এখন যেতে পারেন।
এসআই সাব্বির ভাই বললো, আপনার আর কোনো কাজ নেই আপনি যেতে পারেন। এই তিনদিন ধরে আমাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে, নজরবন্দিতে রেখেছে। আমার ফোন টেপ করা হয়েছে। আমাকে হাজার হাজার প্রশ্ন করা হয়েছে।
আমাকে পুলিশ আর কি রিমান্ডে নেবে, আমাকে কি নিয়ে ফাঁসি দিয়ে দিবে- এমন প্রশ্ন রেখে মিহির বলেন, আমি কি ক্রাইম করছি। আমার কাজ বন্ধ, আমি একটা সিরিয়াল করছি ওইটার পেমেন্ট আজকে ছয় মাস ধরে বিটিভিতে আটকানো, বাসা ভাড়া দিতে পারি না। আমার বাড়িওয়ালি আমার রুম তালা মেরে দিয়েছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে হিমুর বাসায় ছিলাম। আর এমনিতেও থাকতাম। রাতে হয়ত আমি আমার বাসায় থাকতাম, দিনে আমি হিমুর দেখাশুনা করতে চলে আসতাম। কারণ হিমুর মাকে আমি মা ডেকেছি, উনাকে আমি আম্মা বলতাম। হিমুর মা আমাকে বলছে যে, আমি না থাকলে আমার মেয়ের দেখাশুনা করিস।
তাজিন আপা মারা গেছে আমি ছিলাম, হিমু মারা গেছে আমি ছিলাম এ বিষয়টি আপনাদের ভাবিয়ে তুলেছে জানিয়ে মিহির বলেন, এই পাঁচ বছরের ব্যবধানে দু’জন মানুষ মারা গেছে, আমি ছিলাম। এরা আমার নিকটআত্মীয় ছিল, ফ্যামিলি মেম্বারের মতো। তাজিন আপা আমাকে বলতো, মুন্নার সঙ্গে আমার যখন বিয়ে হয়েছে, তোর মতন ছেলে হইত আমার। তাজিন আপা আমাকে নিজের ছেলের মতো সম্বোধন করতো। তাজিন আপার বাসায় ছিলাম বলে আমি আপাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছি। চিকিৎসা করিয়েছি।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় উনি তিন-চার ঘণ্টা পরে মারা যান। আর না হলে তো তাজিন আপা স্ট্রোক করে বাসায় মৃত্যুবরণে করতেন। লাশ পড়ে থাকত বাসায়। সাতদিন ধরে দরজা বন্ধ থাকত পরে লাশ বাহির করতে হতো। আপনারা খবর পেতেন। আমি ছিলাম বলে এরকম কিছু হয়নি। এটা কেউ বলে না যে, তুই ছিলি বলে আমরা তাজিন আপাকে ফ্রেশ তরতাজা দাফন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমি না থাকলে হিমুর বয়ফ্রেন্ড তাকে ঘরের ভেতর ঝুলিয়ে রেখে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যেত। এটা তো কেউ বলেন না যে, তুই ছিলি বলে হিমুকে আমরা বের করে আনতে পেরেছি বা ওকে (বয়ফ্রেন্ড) ধরতে পেরেছে পুলিশ।
হিমুর বয়ফ্রেন্ড ইন্ডিয়ান। না হলে তো ওই ছেলে হিমুকে রেখে কবে ঠান্ডা মাথায় পালিয়ে যেত। আমি ভালো করছি এটা কেউ বলে না। সব খারাপ করছি, আমি রাবন। আমাকে পারলে ফাঁসি দিয়ে দেন। আপনারা একটা মানুষ আছেন, কেউ আছেন যে আমার পাশে দাঁড়াবেন। আমার খোঁজ নিয়েছেন। আমি কেমনে আছি, আমার মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি মানুষ না। আমার কষ্ট হচ্ছে না, হিমু আমার বোনের মতো। সে মারা গেছে, আমার কি ভেতরে সুখ লাগছে, আমার ভালো লাগছে? আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলার জন্য সকলে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
মিহির বলেন, হিমু মারা গিয়েছে আমি ছিলাম। এখন আমি করছি, না ওই ছেলে করছে- সেটা তো সেই ছেলে নিজেই স্বীকার করছে। তারপরও কেনো আপনাদের ভেতর এতো দ্বিধাদ্বন্দ্ব যে মিহির ছিল। মিহির ছিল বলেই তো ফ্রেশ হিমুরে বের করে হাসপাতালে নিয়ে আসছে। আমি উপকার করছি এই জন্য আমাকে সকলে মিলে ফাঁসি দিয়ে দেন। আমার কেউ নেই তো, কোনো বড় লেভেলের মানুষ নেই, যে আমাকে সাপোর্ট দিবে এবং ব্যাকআপ দিবে। আমি মনে করতাম মিডিয়া আমার ফ্যামিলি, আমি কাজ করি, সবাই আমার পরিবার, আমি যখন যেখানে কাজ পাই তাদের জন্য মন থেকে কাজ করি। এমনকি অতিরিক্ত কাজও করে দেই।
তাদের যে কাজ আমার করার না এগুলোও আমি করি শুটিংয়ের সেটে। আমি সেটে সবাইকে আপন করার চেষ্টা করি। সবাইকে ভালো করে সার্ভিস দেই। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি এত বছরের সার্ভিসে। আমার ভুলটা কোথায় একজন বের হন, একজন গাইড করেন আমাকে। তা না খালি আমাকে নিয়ে বড় বড় কথা আর বদনামি করবেন, করেন। আমি যদি কোনো ধরণের খারাপ কাজ করতাম তাহলে ভয়ে পালিয়ে যেতাম।
আমার ভেতরে ভয় লাগে না। আমার ভেতরে ঘৃণা লাগছে, ভেতরে কষ্ট হচ্ছে। আপনাদের জন্য মায়া হচ্ছে যে, আপনারা এতটা নেগেটিভ যে আপনারা মানুষকে নিয়ে ভাবতে পারেন না। মানুষকে সাহায্য করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, হিমুর মা মারা গিয়েছে পাঁচ বছর হয়েছে। এ পর্যন্ত আমি কাউকে দেখিনি তার খোঁজখবর নিতে। হিমু না খেয়ে কান্নাকাটি করতো আমি শুটিং থেকে ছোট ভাইকে ফোন করে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে ওর জন্য রুমে খাবার পাঠাতাম। ওর জ্বর, অসুখ বিছানা থেকে উঠতে পারে না। কাউকে তো দেখিনি ওকে খাবার দিতে, ওর খেয়াল নিতে, ওর পাশে এসে দাঁড়াতে। আপনারা কলিগ, ও মরার পর ওরে নিয়া বিভিন্ন মিটিং মিছিল করবেন। কিন্তু জীবিত থাকতে তো ওরে নিয়া এরকম নাচেন নাই কেউ। এখন এগুলো বললে তো আমি খারাপ। আমি অবশ্যই খারাপ, আমাকে নিয়া ফাঁসি দিয়ে দেন।
এসময় মিহির জানান, ডিবি বলেন, র্যাব বলেন, উত্তরা থানার পুলিশ বলেন যে কোনো স্যার আমাকে যে কোনো মুহূর্তে ফোন দিবেন আমি আপনাদের সামনে হাজির হব। আমি কোথাও পালাবো না। পালিয়ে যাওয়ার ছেলে আমি না। আমি কোনো ধরণের ক্রাইম করিনি, কোনো ধরণের নেগেটিভ কাজ করিনি। আমি সদা সর্বদা মানুষের উপকার করেছি, মানুষের সাহায্য করেছি। আমার ন্যাচারটাই এ ধরণের। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। আমি যদি কারো অগোছালো কাপড় দেখি ধাম করে কিছু না বলে ভাজ করে ফেলি। এটাই আমার চরিত্র। আমি কারো জুতা নোংরা দেখলেও মুছে ফেলি।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় কি হিমু ফাঁসি দিতেই পারে না, হিমু ফাঁসি দেয় নাই। হিমু এত স্ট্রং, এত স্ট্রং, হিমুর সঙ্গে কোনো কিছু একটা হয়েছে। দুর্ভাগ্য যে আমি দেখতে পারিনি। আমি অন্যরুমে ঘুমিয়ে ছিলাম। ওর রুমে ওর বয়ফ্রেন্ড ছিল। ওর বয়ফ্রেন্ড আসছে ওর রুমে গিয়ে তো আমি তাকঝাঁক করতে পারি না।
আমাদের সম্পর্ক ভাইবোনের সম্পর্ক। বোনের বয়ফ্রেন্ড রুমের মধ্যে আমি রুমের মধ্যে গিয়ে তাকঝাঁক করতে পারি না। কান পেতে শুনতে পারি না ওরা কি বলে। তাই আমি আমার মতো ঘুমাচ্ছিলাম। আমার ভেতরে তো এটা ছিল না যে ও (বয়ফ্রেন্ড) হিমুর সঙ্গে ঝগড়া করবে বা এখানে খুনাখুনি হবে, হিমু মরবে এগুলো আমি আইডিয়া করিনি। ও যখন আমাকে ডেকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে দেখিয়েছে তখন আমি ওকে প্রশ্ন করেছি যে আপনি রুমে থাকতে ও (হিমু) এ ঘটনা ঘটাবে কিভাবে? তখন বলে, আমি বাথরুমে ছিলাম। একটা মানুষ বাথরুমে থাকবে আর আরেকটা মানুষ ফাঁসি দিয়ে ফেলবে এটা আমি ভাবতে পারছিলাম না। আমি কোনো কিছুই মেনে নিতে পারিনি।
মিহির আরও বলেন, ওর বয়ফ্রেন্ডকে র্যাব ধরেছে, ওর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আমি রাজ স্বাক্ষী। ওসি মাসুদ ভাই আমাকে কালকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে পাঠিয়েছেন আমি স্বাক্ষী দিয়ে আসছি। এগুলো তো থামছে। এখন নতুন করে আপনারা ফেসবুকে আমাকে নিয়ে যেগুলো শুরু করেছেন এগুলো আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমি ডিপ্রেশনে আছি। আমার মনে হচ্ছে আমার মরে যাওয়া উচিত। আমি জানি না আমি যদি কোনো ধরণের অ্যাকসিডেন্ট ঘটাই এটার জন্য পুরো মিডিয়ার মানুষ দায়ী থাকবে। যারা আমার পেছনে এভাবে উঠে পড়ে লেগেছেন আমি যদি দুর্ঘটনা ঘটাই এটার জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন। এই লাইভটা এই জন্যই করা, সবাইকে বলে রাখা। এরপরে আপনারা তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিয়েন।
এস