
শিল্পকলায় বেলুন উড়িয়ে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
এই শহরে শিশুদের জন্য কোনো আয়োজন বা আনুষ্ঠানিকতার খোঁজ সহজে মেলে না। নাটক থেকে সিনেমা, আবৃত্তিসন্ধ্যা, সঙ্গীতানুষ্ঠান কিংবা শিল্পকর্ম প্রদর্শনী- সবকিছুই যেন বড়দের জন্য। আর এমন বাস্তবতায় শুধু ছোটদের নিয়ে শুরু হলো নান্দনিক এক উৎসব। ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’ স্লোগানে বৃহস্পতিবার থেকে ১৬তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা হলো। তিন দিনব্যাপী আয়োজনটি শেষ হবে কাল শনিবার। চাইলেই বাড়ির ছোট্ট সদস্যকে সঙ্গী করে অভিভাবকরাও শামিল হতে পারেন এ উৎসবে। বিনা দর্শনীতে উপভোগ করা যাবে বাংলাদেশসহ ৪০টি দেশের ১০১টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র।
শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তন ও ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ-এ দুই ভেন্যুতে দেখা যাবে দেশ-বিদেশের বিচিত্র বিষয়ের শিশুতোষ চলচ্চিত্র। আজ শুক্র ও কাল শনিবার বেলা ১১টা, দুপুর দুটা ও সন্ধ্যা ছয়টায় মোট তিনটি করে প্রদর্শনী হবে। একেকটি প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হবে একাধিক ছবি। সুন্দরের প্রতিচ্ছবিময় উৎসবটির আয়োজক চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উৎসবের উদ্বোধন হয়। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা আঙিনায় একঝাঁক বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এর আগে ছোটরা গেয়ে শোনায় ‘আলো আমার আলো’ শীর্ষক উদ্বোধনী সংগীত। সেই সুরটি থামতেই সকলের সমবেত কণ্ঠে উচ্চারিত হয় জাতীয় সংগীত। জাতীয় সংগীতের সুরকে সঙ্গী করে উত্তোলিত হয় জাতীয় পতাকা ও চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটির পতাকা।
উৎসবের উদ্বোধনী বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্ল¦েবর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এগিয়ে যেতে পারে, আমরা সেই বাংলাদেশ রচনা করতে চাই। সেটি করার ক্ষেত্রে শিশুদের প্রতিভা বিকাশ ঘটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে এই শিশু চলচ্চিত্র উৎসব অনন্য ভূমিকা রাখছে। এ ধরনের উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে বোঝা যায় আমাদের শিশুরা অনেক মেধাবী। তাদের সেই মেধাকে বিকশিত করতে পারলে তারা দেশ ও সমাজ গঠনে এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি স্থাপনে বিরাট ভূমিকা রাখবে। এ ক্ষেত্রে শিশু চলচ্চিত্র উৎসব অনেক বড় ভূমিকা রাখে, কারণ এখানে শিশুরা নিজেরাই ছোট ছোট চলচ্চিত্র বানায়। তারাই পুরো উৎসবটির আয়োজন করে। ১৬ বছর ধরে ধারাবাহিক এ উৎসব আয়োজন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
চিত্রশালার মিলনায়তনে উদ্বোধনী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, উপদেষ্টা ড. ইয়াসমিন হক ও শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালারউদ্দিন আহাম্মদ। এ ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন উৎসব পরিচালক শাহরিয়ার আল মামুন এবং জুরি বোর্ডের দুই তাবাসসুম আভা ও অরিত্র মৃধা। সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শিত হয় নুরুজ্জামান নির্মিত শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘আম কাঁঠালের ছুটি’।
এ আয়োজনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, তহবিলের অভাবে এক সপ্তাহের পরিবর্তে এবার তিনদিনের উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুধুমাত্র শিশুদের বিনোদনের কথা চিন্তা করেই এ ধরনের উৎসবে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু এবার কোনো সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়নি। অথচ শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে এমন উৎসব বিশেষ গুরুত্ববহ। সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে সেটা ঘটবে না, বরং বিনোদনের অভাবে শিশু-কিশোদের জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
মোরশেদুল ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র ধারাবিহকতা রক্ষায় এবারের উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কারণ, সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। বেসরকারিভাবে স্কয়ার টয়লেট্রিজ কিছু সহায়তা করেছে। অথচ এ উৎসবে যে প্রাণ রয়েছে, তা অনেক উৎসবেই নেই। কারণ, ছোটরাই পুরো উৎসবটির আয়োজন করে। উৎসবের ছবি বাছাই থেকে প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরির দায়িত্বও তারা পালন করে। এটাই এ উৎসবের বড় বৈশিষ্ট্য।
এবারের উৎসবের সচেয়ে আকর্ষণীয় বিভাগটি হচ্ছে বাংলাদেশী শিশুদের নির্মিত প্রতিযোগিতা বিভাগ। এ বিভাগে নির্বাচিত নয়টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে তিনটি চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে। বিশেষ চলচ্চিত্র বিভাগে নির্বাচিত দুটি ছবি প্রদর্শিত হবে। তরুণ বাংলাদেশী নির্মাতা বিভাগে প্রদর্শিত হবে ১৫টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে দুটি চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে। আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগে প্রদর্শিত হবে ৭৫টি ছবি।
শিশু নির্মাতাদের চলচ্চিত্র বিচারকার্যে জুরি বোর্ডের সবাই শিশু-কিশোর। অর্থাৎ ছোটদের নির্মিত শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলো বাছাই করবে ছোটরাই। তরুণ বাংলাদেশী নির্মাতা বিভাগের চলচ্চিত্রগুলো বিচার করার জন্য জুরি বোর্ডে রয়েছেন উদীয়মান চলচ্চিত্র নির্মাতারা। এ ছাড়া নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম, শামীম আকতার ও রাকা নওশিন নাওয়ারকে সদস্য করে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগের চলচ্চিত্রের জন্য একটি জুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।