রাধারমন দত্ত
‘রাধারমন কমপ্লেক্স নির্মান এখন সময়ের দাবী’ এই স্লোগান নিয়ে আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে বাংলা একাডেমীর নজরুল চত্ত্বরে রাধারমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের উদ্যেগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আলোচনা ও তিনদিনব্যাপী লোকসংগীত অনুষ্ঠান।
বুধবার (২৩ নভেম্বর ২০২২) বেলা ১১টার এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রাধারমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র।
আগামী ২৫ তারিখ উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি, উদ্বোধন করবেন প্রবীন কীর্তনীয়া যশোদা রানী সূত্র ধর এবং শেষ দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল-উল-আলম হানিফ। অনুষ্ঠানে প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশ বরেণ্য শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন।
রাধারমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রর সাধারন সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, বিগত ১১বছর যাবৎ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত চত্তরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও যুগপূর্তি রাধারমন লোকসংগীত উৎসব পালন করার জন্য এবার শিল্পকলার উন্মুক্ত চত্ত্বর বরাদ্ধ পাওয়া সম্ভব হয়নি। যার ফলশ্রুতিতেই বাংলা একাডেমিতে এই আয়োজন করা হয়।
লোকসংগীত শিল্পী আকরামুল ইসলাম বলেন, রাধারমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র সব সময় চেষ্টা করে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকসংগীত শিল্পীদের সুযোগ করে দেওয়া। এ কারনে আমি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে বিশ্বজিৎকে ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালক সংগঠনের সহসভাপতি নারায়ণ চন্দ্র শীল বলেন, লোকসংগীত প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমান প্রজন্ম যারা লোকসংগীত চর্চা করে তাদের মধ্যে বেশীরভাগই ফিউশন করে সুরের বিকৃতি ঘটায়। আমরা রাধার রমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের মাধ্যমে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
স্বাগত বক্তব্যে রাধার রমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক মাহমুদ সেলিম বলেন, রাধার রমন কমপ্লেক্স নির্মাণ এখন সময়ের দাবী। ২০১৫ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি ভবনের ভিত্তির প্রস্তর স্থাপন করেন। নানা জটিলতায় এই ভবন নির্মানের কাজ আটকে আছে।
তিনি বলেন, সাধক রাধারমন দত্ত বহু-সম্পত্তির মালিক ছিলেন। যা ভূমি দস্যুদের দ্বারা বেহাত হয়ে গেছে। এই মুহুর্তে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে রাধারমনের স্মৃতি রক্ষা করা দুরুহ ব্যাপার হয়ে যাবে।
রাধারমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সারাদেশে রাধারমনের গানের চর্চা বেড়ে গেছে। গত বছর থেকে আমরা রাধারমনের গানের সঙ্গে আরো লোক মহাজনদের গান আমাদের উৎসবে অন্তর্ভূক্তি করেছি।
তাদের মধ্যে সৈয়দ শাহনূর (১৭৩০), শেখ ভানু (১৮৪৯), হাসনরাজা (১৮৫৪), ফকির দ্বীন হীন (১৮৫৫) মনমোহন দত্ত (১৮৭৭) আরকুম শাহ (১৮৭৭), উকিল মুন্সি (১৮৮৫), দ্বীন শরৎ (১৮৮৭), জালাল উদ্দীন খাঁ (১৮৯৪) অখিল ঠাকুর (১৯১৩) শাহ আব্দুল করিম (১৯১৬), দুর্বীন শাহ( ১৯২১), অমর শীল (১৯৩১) কফির উদ্দীন সরকার (১৯৩২) রশিদ উদ্দীন (১৮৮৯) এবং বিজয় সরকার (১৯০৩) প্রমুখের গান। তিন দিনে প্রায় ১০০জন শিল্পীর পরিবেশনা থাকছে এবারের অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানটি সহযোগীতা করছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ব্যাংক এশিয়া, হুয়াওয়ে, পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিঃ এবং রবি। সভার সঞ্চালনা করেন রাধার রমন সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সাধারন সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়।
প্রসঙ্গগত
রাধারমণ দত্ত জন্মসূত্রে সিলেটি । তিনি ১৮৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং মৃত্যুবরন করেন ১৯১৫সালে। তিনি একজন বাংলা সাহিত্যিক, সাধক কবি, বৈঞ্চব বাউল, ধামালি নৃত্য-এর প্রবর্তক হলেও সংগীতানুরাগীদের কাছে তিনি রাধারমণ বলেই সমাধিক পরিচিত। বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা লোককবি রাধারমণ দত্ত। তার রচিত ধামাইল গান সিলেট ও ভারতের বাঙ্গালীদের কাছে পরম আদরের ধন।
রাধা রমন নিজের মেধা ও দর্শনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। কৃষ্ণ বিরহের আকূতি আর না-পাওয়ার ব্যথা কিংবা সব পেয়েও না-পাওয়ার কষ্ট তাকে সাধকে পরিণত করেছে। তিনি দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইলসহ নানা ধরনের কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন ।
এমএস