নাট্যোৎসবের মঞ্চে অতিথিরা
রংপুরে শুরু হয়েছে ছয় দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরপূর্তি উপলক্ষে রংপুর নাট্যকেন্দ্র এ উৎসবের আয়োজন করেছে। বুধবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান আন্তর্জাতিক এ নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম। রংপুর নাট্যকেন্দ্রের সভাপতি মাহবুবুল আলম খানের সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক মুরাদ।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গেল দুই বছর আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গন যেমন পিছিয়ে ছিল। তেমনি আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম, শিল্পকারখানাসহ অন্যান্য দিকগুলোতে একটা বিপর্যয় দেখা গেছে।
আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে যাওয়াতে সাংস্কৃতিক চর্চাও থমকে ছিল। সেই থমকে যাওয়া পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে রংপুর নাট্যকেন্দ্রের এ ধরনের আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব প্রশংসার দাবি রাখে।
তিনি আরও বলেন, রংপুর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অনেক সমৃদ্ধ। উত্তরের সংস্কৃতি উর্বর জেলা রংপুর। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি নাট্যচর্চাতেও রংপুর বেশি এগিয়ে। নাট্যকেন্দ্র দেশ ও দেশের বাইরে বহুবার বিভিন্ন উৎসবে অংশ নিয়ে রংপুর তথা বাংলাদেশের সুনাম বয়ে এনেছে। আমাদেরকে এ অঞ্চলের শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের পৃষ্টপোষকতা বাড়ানো দরকার।
নাটকের মাধ্যমে সমাজের যেমন অসঙ্গতির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে, তেমনি সচেতনতার বার্তাও মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে আমাদের প্রজন্মকে বাঁচাতে হবে। সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোই অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা আমাদের সংবিধানের চেতনাকে ধারণ করে।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, সমাজে আমরা যা দেখি, তার প্রতিচ্ছবি নাটকে দেখা যায়। শিল্পীরা তাদের অভিনয়ের মাধ্যমে আমাদের সমাজের অসঙ্গি, সমস্যা, সম্ভাবনা ও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন। নাট্যকর্মীরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধির জন্য লড়ছেন। অনিয়ম, দুর্নীতি, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নাটকের ভাষা অনেক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে আসছে।
গেল দুই যুগ ধরে রংপুর নাট্যকেন্দ্র সেই আন্দোলনে দেশ ও বিদেশের নাটকের মাধ্যমে আমাদের রংপুর অঞ্চল তথা দেশের সুনাম ধরে রেখেছে। নাটকের এই গৌরবান্বিত অর্জনে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন প্রজন্ম নাট্যচর্চায় আরো বেশি করে যুক্ত হোক।
রংপুর নাট্যকেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক মুরাদ বলেন, নাটক অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেতুবন্ধন। আমরা সেই সেতুবন্ধনে এবার প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনব্যাপী নাট্যোৎসব করছি। আন্তর্জাতিক এ উৎসবে ভারতের দুটি নাট্য দলসহ ১২টি দল অংশ নিচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটক মঞ্চায়ন হবে।
উৎসবের উদ্বোধনী দিনে আয়োজক দল রংপুর নাট্যকেন্দ্র পরিবেশন করে পালাকার সায়িক সিদ্দিকীর রচনা ও নির্দেশনায় নাটক ‘নিল লিলতার গীত’। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় একই মঞ্চে ‘কমলীকথা’ নাটকটি মঞ্চায়ন করবে ভারতের (কলকাতা) চাকদহ নাট্যজন। এ নাটকটির রচয়িতা দীপক নায়েক, নির্দেশক রাহুল দেব ঘোষ। তৃতীয় দিন শুক্রবার ভারতের (রাজস্থান) বঙ্গ সংস্কার থিয়েটার গ্রুপ সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় রচিত ও মোনালিসা দাস নির্দেশিত ‘জগাই দাদা’ নাটকটি মঞ্চায়ন করবে।
এছাড়া ৫ নভেম্বর শনিবার রংপুর শিশু নাট্যকেন্দ্র, রংপুর নাট্যচক্র, সারথি নাট্য সম্প্রদায়, তারাগঞ্জ থিয়েটার, রোববার চেতনা নাট্যগোষ্ঠী, রংপুর থিয়েটার, কানাসাস, রঙ্গপুর নাট্যধারা এবং সমাপনী দিনে রংপুর নাট্যকেন্দ্র নাটক মঞ্চায়ন করবে।
এসআর