শাহনাজ
নব্বই দশকে এক ঝাঁক নতুন নায়ক-নায়িকার মধ্য দিয়ে বাংলা সিনেমায় দারুণ পরিবর্তন আসে। সব শ্রেণীর দর্শকের কাছে সিনেমা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে। সে সময়ের প্রায় সব নায়ক-নায়িকাই গ্ল্যামার ও অভিনয় দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। এদের অনেকেই এখন সিনেমায় নেই। তবুও দর্শক তাদের ভালবাসেন। সিনেমার পর্দায় না থাকলেও তারা দর্শকের স্মরণে আছেন। সেই সময়ের জনপ্রিয় তিন নায়িকা শাহনাজ, লিমা ও শিল্পী। এরা তিনজনই প্রয়াত নায়ক সালমানের সঙ্গে পর্দা ভাগ করেছেন। উপহার দিয়েছেন ব্যবসাসফল সিনেমা। তাদের নিয়ে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন...
শাহনাজ : বাংলা সিনেমার ‘লক্ষ্মী’ নায়িকা বলা হয় শাহনাজকে। যার কোন সিনেমা ফ্লপ হয়নি সিনেমা সংশ্লিষ্টদের অভিমত। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার ভাগলপুরের মেয়ে। তার জন্ম ১৫ জুন ১৯৬৯। পারিবারিক নাম ফাতেমা আক্তার রিতা। ১৯৯২ সালে পরিচালক চাষী হুমায়ুন কবিরের ‘পদ্মার চর’ সিনেমা দিয়ে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তবে ‘জ্যোতি’ সিনেমার মধ্য দিয়ে নিজের জায়গা শক্ত করেন। এছাড়া সালমান শাহর বিপরীতে ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমাতে অভিনয় করে সালমান ভক্তদের মনে অন্যরকম ভাবে আসন নেন। শাহনাজ অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো ‘দেশের মাটি’, ‘চালবাজ’, ‘হুলিয়া’, ‘বাবা মাস্তান’, ‘অন্ধ আইন’, ‘আত্মত্যাগ’, ‘বাংলার মা’, ‘মহৎ, ‘মোনাফেক’। সালমান শাহ, অমিত হাসান, ওমর সানী, আমিন খান, মান্নাসহ অনেক নায়কের সঙ্গেই তিনি উপহার দিয়েছেন সুপারহিট সিনেমা। ২০০২ সাল পর্যন্ত একটানা কাজ করেছেন তিনি। এরপর সিনেমা থেকে আড়ালে থাকছেন অভিনেত্রী। সিনেমা সংশ্লিষ্ট কোনকিছু বা কারও সঙ্গেই তার যোগাযোগ নেই। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঢাকাতেই থাকেন শাহনাজ। বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। মন দিয়েছেন ধর্ম কর্মে। বাইরে খুব একটা যান না। যদিও বা যান বোরখায় নিজেকে ঢেকে রাখেন। জীবন থেকে রঙিন দুনিয়ার সবকিছুই মুছে দিয়েছেন তিনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এখনো শাহনাজের নামের মুগ্ধতা ছড়ান তার ভক্তরা। নায়ক মান্নার ভক্তরাও তাকে খুব মিস করেন, নানা স্ট্যাটাসে সেটাই প্রকাশ করেন তারা। ক্যারিয়ারের শেষদিকে মান্নার সঙ্গে জুটি বেঁধে বহু হিট-সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন এ অভিনেত্রী।
লিমা : শামীমা আলী লিমা। তিনি লিমা নামে চিত্রজগতে খ্যাতি অর্জন করেন। কমল সরকার পরিচালিত ‘সুখের আগুন’ সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। তিনি ক্যারিয়ারে মোট ২৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। লিমার ক্যারিয়ার বদলে দেয় নব্বইয়ের দশকের ছবি ‘প্রেমগীত’। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় এটি। সেই ছবির ‘আমার সুরের সাথী আয় রে’ গানটি এখনো অনেকেরই মনে আছে। দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর এ ছবির পরই ব্যস্ততা বেড়ে যায় অভিনেত্রীর। তাকে প্রয়াত নায়ক নায় সালমান শাহর বিপরীতে দেখা যায় ‘প্রেম যুদ্ধ’ ও ‘কন্যাদান’ সিনেমাতে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য আরও কিছু সিনেমা হলো ‘গরিবের সংসার’, ‘জজ ব্যারিস্টার’, ‘নীল সাগরের তীরে’, ‘চাকরানী’ ও ‘হুলিয়া’। নায়িকা হিসেবে ঢালিউডে লিমার আত্মপ্রকাশ ১৪ বছর বয়সে। এর আগে বিটিভির অঙ্কুর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিল্পাঙ্গনে যাত্রা শুরু করে তার। ক্রমেই অভিনয়, নাচ, গানে ভাল করতে থাকেন তিনি। তারপর যুক্ত হন সিনেমায়। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে হঠাৎ অভিনয় থেকে দূরে চলে যান তিনি। বাণিজ্যিক ধারার জনপ্রিয় সিনেমার নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ছবিতেই বেশি অভিনয় করেছেন লিমা। এই নির্মাতা বলেন, ‘ভাল একটা ক্যারিয়ার ছেড়ে হঠাৎ চলে গেল লিমা। এখন আর তার খবর কেউই জানি না।’ জানা যায়, এ অভিনেত্রী এখন থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে।
চিত্রনায়িকা শিল্পী : ‘বাংলার কমান্ডো’ সিনেমার মধ্য দিয়ে রূপালী পর্দায় অভিষেক হয় নব্বইয়ের জনপ্রিয় নায়িকা শিল্পীর। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন বাপ্পারাজ, আমিন খান ও হুমায়ুন ফরীদি। ১৯৯৫ সালের ১১ মে মুক্তি পায় এটি। তবে এ অভিনেত্রী প্রথম সাইন করেন আওলাদ হোসেনের ‘নাগ-নর্তকী’তে। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘প্রিয়জন’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘শেষ প্রতীক্ষা’, ‘মুক্তি চাই’, ‘লাভলেটার’, ‘বীর সন্তান’, ‘মিথ্যার মৃত্যু’, ‘দোস্ত আমার দুশমন’, ‘গৃহবধূ’, ‘কে আমার বাবা’, ‘রাজপথের রাজা’, ‘শক্তের ভক্ত’, ‘সুজনবন্ধু’ ইত্যাদি। পাঁচ বছরে ৩৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। দুই দশক আগে রূপালি পর্দা ছেড়েছেন তিনি। এরপরেও দর্শক তাকে প্রায়ত নায়ক সালমানের নায়িকা হিসেবে মনে রেখেছেন। সালমান শাহ অভিনীত ‘প্রিয়জন’ সিনেমার নায়িকা হিসেকে শিল্পীকে দর্শকের কাছে দারুণ জনপ্রিয় করে তোলে। জানা যায়, সিনেমায় কখনও ফেরার ইচ্ছে নেই এ অভিনেত্রীর। একমাত্র ছেলে সানাত ইকবাল আর মেয়ে এ্যাঞ্জেলিনা ইকবালই নিয়ে এখন তার গোটা ভুবন। ২০১১ সালে ব্যবসায়ী আলমগীর ইকবালকে ভালবেসে বিয়ে করেন তিনি। ২০১২ সালের প্রথম সন্তান জন্মের সময় চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর আর মিডিয়ামুখো হননি।