আসাদুজ্জামান নূর
দীর্ঘদিনের কর্মস্থল দেশ টিভি ছাড়লেন বরেণ্য অভিনেতা সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশনটির সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন তিনি। দেশ টিভি গঠন, পরিচালনা, নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণÑ সর্বোপরি বিজ্ঞাপনের সংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারপর অনেকটা হঠাৎ করেই সরে দাঁড়ালেন তিনি। গত ১ জুলাই থেকে টেলিভিশনটির সঙ্গে অভিনেতা আর নেই বলে জানা গেছে।
কিংবদন্তি অভিনয় তারকা আসাদুজ্জামান নূর মঞ্চে বহু কাজ করেছেন। ততোধিক জনপ্রিয় টেলিভিশনে। বিটিভির স্বর্ণযুগের অভিনেতা ২০০৮ সালের দিকে বেসরকারী টেলিভিশন দেশ টিভির এমডি হিসেবে যোগ দেন। অনএয়ারে আসার আগে থেকে কাজ শুরু করেন তিনি। আসাদুজ্জামান নূরের টেলিভিশনে যোগদান তখন বিপুলভাবে আলোচিত হয়। এর বেশ কয়েক বছর পর ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। মন্ত্রী থাকাকালীন ৫ বছর নূর দেশ টিভির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। পরবর্তী পর্যায়ে ২০২০ সালের দিকে দেশ টেলিভিশনের উপদেষ্টা হিসেবে পুনরায় কাজ শুরু করেন। উপদেষ্টা হিসেবেই দেশ টিভির সার্বিক দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
জানা যায়, এ সময় টেলিভিশনটিতে চলমান নানা সমস্যা সঙ্কট দূর করে নতুন করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এমডি পরিবর্তনসহ দেশ টিভিতে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন ঘটে। শুরু থেকে টেলিভিশনটির সঙ্গে যারা ছিলেন এবং নূর যাদের ওপর আস্থা রাখতেন বলে অনুমান করা হয় তাদের অনেকে চাকরিচ্যুত হন বা চাকরি ছেড়ে যান। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে অব্যাহতি নেন টেলিভিশনটির এডিটর সুকান্ত গুপ্ত অলক। পাশাপাশি বিনোদন নির্ভর টেলিভিশনটি বর্তমানে সংবাদ ভিত্তিক চ্যানেলে রূপান্তরের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। দেশ টিভির একটি সূত্র বলছে, নূর নিজেও অনেক দিন ধরে অস্বস্তিতে ছিলেন। পতদ্যাগের কথা ভাবছিলেন। শেষতক তাই করেছেন। দেশ টিভির সঙ্গে প্রায় ১৪ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন তিনি।
অবশ্য আসাদুজ্জামান নূর এসব বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি। হঠাৎ করে টেলিভিশন ছাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আসলে ওটা ব্যক্তিগত। আমাকে অনেক কিছুতে সময় দিতে হয়। অভিনয়, রাজনীতি, আবার ছোটখাটো ব্যবসাও আছে। এতসব করে নিজের জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে যায়। তাই দেশ টিভি ছেড়েছি। সব মিলিয়ে কী অভিজ্ঞতা হলো টেলিভিশনে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী এবং শিল্প সংস্কৃতির প্রতি নিবেদিত প্রাণ মানুষ। প্রগতিশীল চিন্তা ও বাঙালী সংস্কৃতিকে উর্ধে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি সব সময়। দেশ টিভিতে যোগ দেয়ার সময়ও একই চিন্তা মাথায় ছিল। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন একটি প্রতিষ্ঠান তো কেউ একা চালাতে পারেন না। সবাই মিলে কাজ করতে হয়। সবাই মিলে কাজ করেছি আমরা। হয়তো কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল। টেলিভিশনের এসব অভিজ্ঞতাও তাকে সমৃদ্ধ করেছে বলে জানান অভিনেতা।
এদিকে, অনেক বছর টেলিভিশনটির খুব গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ‘বেলা অবেলা সারাবেলা’ সঞ্চালনার দায়িত্বও পালন করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। এ অনুষ্ঠানে তার অতিথি হয়ে এসেছেন দেশের কিংবদন্তি তুল্য ব্যক্তিরা। আর্কাইভ সমৃদ্ধ করার কাজটি কি এখানেই থেমে যাবে? জানতে চাইলে নূর বলেন, হতে পারে। নাও হতে পারে। আমার কিছু গুণী মানুষের সঙ্গে প্রাথমিক কথা বলা আছে। তবে তাদের নিয়ে বসা হবে কিনা, সেটা এখন আর তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান।