অনলাইন ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা কবরীর মৃত্যুর পর গভীর শোক প্রকাশ করছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। অভিনেতা অভিনেত্রীরা ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে মারা যান কবরী।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের সুতরাং ছবির মাধ্যমে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে নায়িকা হিসেবে তার অভিনয় জীবনের সূচনা হয়েছিলো। গত ৫ই এপ্রিল করোনাভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পরে আটই এপ্রিল তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর অবস্থার আরও অবনতি হলে বৃহস্পতিবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুক্রবার মধ্যরাতে মারা যান কবরী।
মৃত্যুকালে কবরীর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। সিনেমায় অভিনয় ছাড়াও সিনেমা প্রযোজনা এবং পরিচালনার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।
২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বস্তরেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফেসবুক সয়লাব হয়ে যায় তাকে ঘিরে দেয়া নানা ধরণের পোস্টে।
কেউ কেউ কবরী অভিনীত গান বা চলচ্চিত্রের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার প্রতি।
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলা চলচ্চিত্রের বিকাশে তার অবদান মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশের চলচ্চিত্রে কবরী এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনৗতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিরোধী দল বিএনপিও।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল কবরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এর বাইরেও মধ্যরাতে কবরীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক হয়ে ওঠে বিষাদময়।
ফেসবুকে নির্বাচনী প্রচারণার সময়কার তার একটি ছবি শেয়ার করে ইউসুফ আল মামুন নামে একজন লিখেছেন, ".....বিদায় কিংবদন্তী, ওপারে ভালো থাকবেন। আপনার স্মৃতি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সম্পদ"।
আশিকুর রহমান শোভন লিখেছেন, "...কিংবদন্তীর মৃত্যু হয় না। শুধু দেহটাই চলে যায়। বিদায় সারাহ বেগম কবরী........"।
জর্জিনা মৌটুসি সরকার প্রয়াত নায়ক রাজ্জাকের সাথে কবরীর একটি সিনেমার দৃশ্যের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, "চিরদিন আপাকে মনে থাকবে"।
১৯৫০ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামে জন্ম হয় কবরীর। তার আসল নাম ছিল মিনা পাল।
সুভাষ দত্তের সুতরাং ছবির মধ্যে দিয়ে যখন সিনেমায় অভিষেক হয় তখন তার নতুন নাম হয় কবরী।
এরপরের দুই দশকে 'রংবাজ', 'নীল আকাশের নীচে', 'দ্বীপ নেভে নাই', 'তিতাস একটি নদীর নাম', 'সুজন সখী', 'সারেং বৌ'য়ের মত বহু ব্যবসা সফল এবং আলোচিত সিনেমায় প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন।
নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী শফিউদ্দিন সারওয়ারকে বিয়ের পর তিনি কবরী সারওয়ার নামে পরিচিত পান। ২০০৮ সালে তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয়। এরপর যখন রাজনীতিতে আসেন এবং সংসদ সদস্য হন, তখন থেকে তিনি সারাহ বেগম কবরী নামে পরিচিত।
সিনেমায় অভিনয় ছাড়াও সিনেমা প্রযোজনা এবং পরিচালনার সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।
সূত্র : বিবিসি বাংলা