মাহামুদুর রহমান, একটি বেসরকারী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। গত বেশ কিছুদিন ধরে মাছরাঙা টিভিতে দেখছেন ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতানের ডাবিংকৃত পর্ব। সেই ছোটবেলা থেকে বিদেশী সিরিয়াল দেখে বড় হয়েছেন। তখন বিটিভির কল্যাণে পৃথিবীর নানা দেশের জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। মাঝখানে অবশ্য বিটিভি বিদেশী সিরিয়াল দেখনো বন্ধ করে দেয়। তখন ‘দ্য এ-টিম’ এর মিউজিক শুনলে ওনাদের অনেকেরই মনের গভীরে বাজনা বেজে উঠত। সিনবাদ, হারকিউলিস, রবিন হুড, নাইট রাইডার, ম্যাকগাইভার, র্যাব ভেন, আলিফ লায়লা, টিপু সুলতান, আকবর দ্য গ্রেট, ওশিন, এগেইন্সট দ্য উইন্ড, দ্য উইজার্ড, দ্য ফল গাই, টাইম ট্রেক্স, ডার্ক জাস্টিস, রোবোকপ, থিফ অফ বাগদাদ, দ্য এক্স ফাইলস আরও কত যে দারুণ সব সিরিয়াল। তখন অপেক্ষা করে বসে থাকতেন সিরিয়ালগুলো দেখার জন্য। ওই সময়ে বিটিভিতে বিদেশী ভাষার টিভি সিরিয়াল প্রচার হয়েছে বিদেশী ভাষাতেই। সেই সময়ে অভিনয় গুনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল সিরিয়ালগুলো। বর্তমানে মাহামুদুর রহমানের ছোট মেয়ে লিজা খুব ভক্ত ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান আর ‘সুলতান সুলেমানের। অনুষ্ঠানগুলো শুরু হওয়ার আগেই পড়া শেষ করে বসে পরে টিভির কাছে। মাহামুদুর রহমান আজ বাসায় এসে দেখলেন লিজার মন খুব খারাপ। ওর বন্ধুদের মনও বুঝি খারাপ ওদের পছন্দের ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান, ‘সুলতান সুলেমান বন্ধ করে দেয়ার জন্য আন্দোলন চলছে। কিন্তু কেন তার উত্তর খুঁজতে লাগলেন মাহামুদুর রহমান। সম্প্রতি দীপ্ত টিভি চ্যানেলে তুর্কি সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমান’-এর জনপ্রিয়তায় নড়েচড়ে বসেছে দেশীয় চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান বিভাগ। যার ধারাবাহিকতায় একাধিক চ্যানেল বিদেশী সিরিয়াল প্রচারে মাঠে নামায় শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। পাশাপাশি উঠে এসেছে বিদেশী চ্যানেলে দেশী বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়টিও। এ তালিকায় রয়েছে মাছরাঙার ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান’, আরটিভির ‘সিনড্রেলার বোন’, গাজী টিভির ‘আলিফ লায়লা’, একুশে টিভির ‘সীমান্তের সুলতান’ ও ‘হাতিম’। প্রাইম টাইমে বিদেশী সিরিয়ালের রমরমা অবস্থা দেখে বাংলাদেশ ডিরেক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকে এসেছে আন্দোলনের ঘোষণা। তবে এর পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। কিছু দর্শকদের মতামত হলো বাংলাদেশে টেলিভিশন চ্যানেল বাড়ছে, সেই অনুযায়ী দর্শক বাড়ছে না। নিজের ঘরের টেলিভিশন চ্যানেল ছেড়ে পাশের ঘরের টেলিভিশন চ্যানেলের দিকে ঝুঁকছিলেন অনেক দর্শক। বোধকরি এটা বুঝতে পেরে দেশের একটি নতুন টিভি চ্যানেল শুরুতেই বদলের ডাক দেয়। সুলতান সুলেমান নামে বিদেশী ভাষার একটি টিভি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম দিকে মিডিয়া সংশ্লিষ্ট অনেকে এই ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। অনেকে ভেবেছিল নতুন টিভি চ্যানেলে বিদেশী ভাষার টিভি সিরিয়াল হয়ত তেমন কেউ দেখবে না। পপুলার হবে না। কিন্তু সকল ধারণা পাল্টে দিয়েছে ‘সুলতান সুলেমান’।
বলা যায় এই একটি অনুষ্ঠানের কল্যাণে টিভি চ্যানেলটি এখন বেশ দর্শকপ্রিয়। বোধকরি এটা বলাই যায় ‘সুলতান সুলেমানের সাফল্য অন্যান্য টিভি চ্যানেলকেও উদ্বুদ্ধ করেছে। আর তাই দেশের একাধিক টিভি চ্যানেলে বাংলা ডাবিং এ বিদেশী ভাষার টিভি সিরিয়াল প্রচার শুরু হয়েছে। এই সিরিয়ালগুলোর দর্শকও প্রচুর। তবে বিদেশী সিরিয়াল নিয়ে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নির্মাতাদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে আপত্তি তুলেছেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন নব্বই দশকেও আমাদের দেশের টিভি নাটক বিদেশে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। তারা আমাদের নাটক দেখার জন্য সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করত। কিন্তু ‘টেলিভিশন শিল্পের এই মুহূর্তের কর্মপরিবেশ নাজুক। এখনই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো উচিত। বর্তমানে নাটকের অবস্থা খুবই নাজুক। সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে নাটকের আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের সংস্কৃতিকে ধারণ করে নাট্যকর্মীরা, নাট্যকাররা দীর্ঘদিন ধরে অনেক কষ্ট করে তিল তিল করে তুলেছে নাট্যাঙ্গন। এই সময় বিদেশী নাটক প্রচার করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের নাটক। আমাদের ঐতিহাসিক গল্প অবলম্বনে নাটক নির্মাণ করলে মানুষ দেখবে। তাছাড়া বিদেশী যে সিরিয়ালগুলো একযোগে জনপ্রিয় চ্যানেলগুলোর প্রচার করছে তার সঙ্গে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির কোন মিল নেই? এসব আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে এখনকার ছেলে মেয়েরা বিপথে যাচ্ছে। এসবের প্রতিরোধ এখনই জরুরী।