সাজু আহমেদ ॥ সাম্প্রতিক সময়ের সঙ্গীত অঙ্গনের অন্যতম চমকপ্রদ কণ্ঠশিল্পীর নাম ঐশী। পুরোনাম ঐশী ফাতিমা তুয্ জাহ্রা। বর্তমানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের লাইভ শো, স্টেজ প্রোগ্রামে ফোকগান গেয়ে মাতিয়ে দিচ্ছেন দর্শক-শ্রোতাদের। ঐশীর কণ্ঠে রক এ্যান্ড ফোকের সমন্বয় দু’একজন ছাড়া আগে কখনও কোন শিল্পীর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। বলাবাহুল্য ঐশীর গলা এত উঁচুতে যায় তা কখনও মেয়েদের ক্ষেত্রে দু’একজন ছাড়া চোখে পড়েনি। সুর, তাল, লয় এবং আবেগের তেজে সমন্বয়ে আবেদনসমৃদ্ধ কণ্ঠ ঐশীর। ‘ঐশী এক্সপ্রেস’, বেলাল খান ফিচারিং ‘ঐশী’স মায়া’ এ দুটি এ্যালবামের মাধ্যমেই শিল্পী হিসেবে রীতিসিদ্ধ নিজের সাঙ্গীতিক সত্তার জাত চিনিয়েছেন ঐশী। শীঘ্রই সিএমভির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করতে যাচ্ছেন ঐশী। জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রথমেই একটি সলো এ্যালবাম তৈরি করবে সিএমভি। এরপর পর্যায়ক্রমে মিক্সড এ্যালবামে সংযুক্ত হবেন ঐশী।
এম এইচ শমরিতা মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ঐশীর সঙ্গীত শিক্ষায় হাতেখড়ি তার মায়ের কাছে। ঐশীর বাবা মোঃ আবদুল মান্নান, মা নাসিমা আক্তার অন্যতম অনুপ্রেরণা। ২০০০ সালে রংপুর শিশু একাডেমিতে সঙ্গীতে ঐশীর একাডেমিক শিক্ষা শুরু। তারপর ২০০৩-২০০৭ নোয়াখালীর মৌমাছি কচিকাঁচার মেলায় সঙ্গীত প্রশিক্ষক মোঃ শরীফের তত্ত্বাবধানে সঙ্গীতশিক্ষা চলে। ২০০৮ থেকে নোয়াখালীর হাফিজউদ্দিন বাহারের কাছে তালিম নিচ্ছেন। ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়া অবস্থায় ঐশী বিটিভি ও এনটিভিতে গান করেন। বর্তমানে দেশের সব টেলিভিশন-চ্যানেলে ঐশী পারফর্ম করছেন। মঞ্চেও সাবলীল ঐশী। একাধিক কণ্ঠশিল্পী ঐশীর পছন্দের শিল্পীর তালিকায় আছেন। তবে তার আইডল গুণীশিল্পী রুনা লায়লা। সবধরনের গান শুনতে ও গাইতে ভালবাসেন ঐশী। তবে আধুনিক, নজরুল ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি রক মেলোর প্রতি তার দুর্বলতা একটু বেশি। ইংলিশ গানও করেন। তবে ইংলিশ গান সে অর্থে খুব বেশি গাওয়া হয়নি।
ঐশী ‘হৃদয় মিক্সড থ্রি’ এ্যালবামের জন্য প্রথম গান করেন। এরপর ২০১০ সালে শিহাব রিপনের সঙ্গীতায়োজনে ঐশীর প্রথম মিক্সড এ্যালবাম। ২০১২ সালে হৃদয় মিক্স-৩ এ্যালবামের কাজে গুঞ্জন রহমানের লেখা গান ‘দক্ষিণা হাওয়া’ যাতে ঐশী শ্রোতাদের কাছ বেশ সাড়া পেয়েছেন। ২০১৪ সালে আরও কয়েকটি মিক্সড এ্যালবামে কাজ করেন। ২০১৫ সালে লেজার ভিশনের ব্যানারে ঐশীর প্রথম একক ‘ঐশী এক্সপ্রেস’ এ্যালবাম বের হয়। ইমরান মাহমুদুলের সুরে ও সঙ্গীতায়োজনে কোন মেয়ের প্রথম সলো এ্যালবাম। এ এ্যালবামের ‘তুমি চোখ মেলে তাকালে’ ভিডিওটি দর্শকপ্রিয়তা পায়। ইউটিউবের দুটি সাইটে প্রায় ১৯ লাখ ভিউয়ার্স। এছাড়া গান-বাংলা (জিবি) ও এয়ারটেলের প্রকল্প স্পটলাইটে একটি লোকসঙ্গীতের কভার করে প্রশংসিত হয়েছেন ঐশী। সিলেটের বাউল শিল্পী কামাল উদ্দিন পাশা আর পবন দাস বাউলের গাওয়া ‘তোমার দিল কি দয়া হয় না’ গানটির ভিডিও ১০১৫ সালের ১ জুন থেকে একাধিকবার গান বাংলা টিভি ও ইউটিউবে প্রকাশ হয়। অদিতের কম্পোজিশন, ফারজানা মুন্নির ব্যবস্থাপনা, রোম্য খানের পরিচালনায় গানটি প্রশংসিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর ভিউয়ার্স প্রায় ২২ লাখ। চলতি বছর ২০১৬ সালে বেশকিছু কাজ করছে ঐশী। এর মধ্যে ইশতিয়াক মার্সেলের সঙ্গীতায়োজন এবং ঈগল মিউজিকের ব্যানারে দুটি গানই ইতোমধ্যে শ্রোতাপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সবার প্রিয় ‘একখান আকাশ ঘর ছিলো তার’। আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ গানশালার ব্যানারে প্রকাশিত ‘এক নির্ঝরের গান’ ‘প্রকল্পে এনামুল করিম নির্ঝরের কথা ও সুরে ৪১ জন কণ্ঠশিল্পীর ১০১টি গানের এগারোটি সিডির ‘তিল থেকে তাল’ সিডিতে ঐশীর একটি গান ‘পরীক্ষাতে যাবো কেমন করে’ স্থান পেয়েছে। এতবড় একটি প্রকল্পে কাজ করতে পেরে ঐশী গর্ববোধ করেন। এছাড়া সুমন কল্যাণের একটি গান, বাসুদেব ঘোষের কয়েকটি গান প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।
তবে ঐশীর উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে লেজার ভিশনের প্রযোজনায় বেলাল খান ফিচারিং ‘ঐশীস মায়া’ এ্যালবাম। ইতোমধ্যে প্রতিটি গান শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। সব গানের মিউজিক ভিডিও তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে চন্দন চৌধুরীর ‘মায়া’ গানের ভিডিওটি ইউটিউবে ঝর তুলেছে। এছাড়া জিডি মিউজিকে অদিত ফিচারিং ঐশীর ‘কাজল ভ্রমরা’ কভার গানটি যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছে। শহীদুল্লাহ ফরায়জীর লেখা, সুমন কল্যাণের সুর ও সঙ্গীতায়োজনে বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে একটি ডুয়েট গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ঐশী। অচিরেই আসছে মিক্সড এ্যালবাম।
কুমার বিশ্বজিতের সুর ও সঙ্গীতায়োজনে প্রসূন রহমানের কথায় ঐশী প্রথম চলচ্চিত্রে গান করেন। এছাড়া ‘অধিকার’, ‘তুখোড়’ ‘গেম-২’ ‘কত স্বপ্ন কত আশা’ ‘হারজিত’ ‘ভ্রমর’ চলচ্চিত্রে গেয়েছেন। সঙ্গীতচর্চার সাফল্য হিসেবে ‘চ্যানেল আই-সিম্ফনি মিউজিক এ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। নিজের সঙ্গীত ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে ঐশী জনকন্ঠকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হয়ে মানবসেবা করার স্বপ্ন দেখছি আমি। আর সঙ্গীত আমার রক্তে মিশে আছে। সুতরাং, দুটোকেই আমার বাল্যান্স করে চলতে হবে। সুন্দর গান শ্রোতাদের মন ভাল করে দেয়। আমি সুন্দর গান গাইতে সদা-সচেষ্ট। নিজের সাঙ্গীতিক কর্মকা- সম্পর্কে ঐশী বলেন, গান আমি শুধু নিজের জন্যে করি না। মানুষকে আনন্দ দেয়া আমার লক্ষ্য। বলা হচ্ছে, সুন্দর কণ্ঠের পাশাপাশি চমৎকৃত গ্ল্যামার ঐশীর ক্যারিয়ারে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। তরুণ কণ্ঠপ্রতিভা এবং সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের কারণে ঐশী এখন বাংলাদেশের সঙ্গীতের অন্যতম সম্পদ। এক্ষেত্রে তারকাখ্যাতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে যদি তিনি নিজের জন্য চর্চা অব্যাহত রাখেন, তবে সে বাংলা গানের সম্পদ, বাংলা গানের শিল্পীদের মধ্যে অনন্য হয়েই থাকবেনÑ এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্ভাবনাময়ী ঐশীর সঙ্গীত-ভ্রমণ অর্থময় হয়ে উঠুক, ভবিষ্যতে ডাক্তার ঐশী এবং গায়িকা ঐশী দুই-ই জনমনে জায়গা করে নেবেন- এমনটিই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।