মাত্র একটি ছবিতে অভিনয়। তাতেই বিশ্বজোড়া খ্যাতি। ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’তে তিনি অপুর দিদি দুর্গা। কিশোরী বয়সের সেই চরিত্রকে পর্দায় জীবন্ত করেছিলেন উমা দাশগুপ্ত। এর পর তাকে আর পর্দায় দেখা যায়নি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী রচনা ‘পথের পাঁচালী’কে পর্দায় নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়।
অবশেষে ক্যান্সারের কাছে হার মেনেছেন উমা দাশগুপ্ত। সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ মৃত্যু হয়েছে তার। বিধায়ক-পরিচালক-অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী খবরের সত্যতায় সিলমোহর দিয়েছেন। একই আবাসনের বাসিন্দা তারা। চিরঞ্জিতের কথায়, সকালে ওর মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখনই জানালেন, উমাদি চলে গিয়েছেন। কয়েক বছর আগে ক্যান্সার হয়েছিল তার। চিকিৎসায় সাড়াও দিয়েছিলেন প্রাথমিকভাবে। কিন্তু নতুন করে ফিরে আসে মারণরোগ। অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই প্রয়াত হলেন উমাদেবী।
উমা দাশগুপ্ত পেশাগত জীবনে ছিলেন শিক্ষক। কিন্তু কেন আর পর্দায় দেখা গেল না উমাকে? সত্যজিৎ নেই। তাকে ঘিরে কোনো স্মৃতি কি পরিচালক-পুত্র সন্দীপ রায়ের মনে থেকে গিয়েছে? ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারে এক সাক্ষাৎকারে সন্দীপ রায় বলেন, তখন আমি শিশু।
ফলে, সেভাবে কোনো স্মৃতিই আর নেই। উমাদি তখন মাত্র ১৪। পরে আর অভিনয় করেননি। ফলে, ওর সঙ্গে আমাদের আর যোগাযোগ ছিল না। পরিচালক-পুত্রের আফসোস, সেই সময়ের সব স্মৃতি প্রয়াত অভিনেত্রীর সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন! কেন আর অভিনয় করেননি, সে বিষয়েও কিছু জানেন না সন্দীপ। এর আগেও একাধিকবার উমা দাশগুপ্তের মৃত্যুর ভুয়া খবর ছড়িয়েছে। এও শোনা গিয়েছিল, তিনি নাকি বৃদ্ধাবাসে থাকেন। তার প্রয়াণের খবরের পাশাপাশি সেই খবর ভুয়া, এ কথাও জানান প্রতিবেশী, অভিনেতা চিরঞ্জিৎ।
শৈশব থেকেই থিয়েটার করতেন উমা দাশগুপ্ত। যে স্কুলে পড়তেন, সেখানকার প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পরিচয় ছিল। আর সেই শিক্ষকের সুবাদেই মানিকবাবু আবিষ্কার করেছিলেন ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা উমা দাশগুপ্তকে। যদিও তার বাবা চাননি মেয়ে সিনেদুনিয়ায় আসুক। তবে শেষমেশ উমার পরিবারকে রাজি করিয়ে নেন পরিচালক। সিনেপর্দায় দুর্গার মৃত্যু শুধু অপুর মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল তাই নয়, দুর্গার মৃত্যু কাঁদিয়েছিল আপামর দর্শক। এবার বাস্তবেও না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন পর্দার দুর্গা।
পরলোকে পথের পাঁচালীর দুর্গা উমা দাশগুপ্ত
শীর্ষ সংবাদ: