শাহীন সামাদ
নজরুল সংগীতশিল্পী শাহীন সামাদ। নজরুলচর্চায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমির নজরুল পুরস্কার-২০২৩ পেলেন তিনি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে গতকাল তাকে এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। এর আগে তাকে নজরুল সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৬ সালে একুশে পদক প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার। বাংলা একাডেমির নজরুল পুরস্কার প্রাপ্তি ও নজরুলের গানসহ নানা বিষয়ে কথা হলো তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- নূরুল ইসলাম
বাংলা একাডেমির নজরুল পুরস্কার পেলেন। অনুভূতি কেমন?
এ পুরস্কারটি আমার কাছে অন্যরকম। এর আগে আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছি। সেগুলোর চেয়ে এটির বিশেষত্ব আমার কাছে ভিন্ন বলতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে নজরুলের গান নিয়ে কাজ করছি। বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ তারা এ পুরস্কারের জন্য আমাকে যোগ্য মনে করেছেন। তবে আর যাই হোক এসব পুরস্কারে দায়িত্ব বেড়ে যায়। শুরু থেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করছি। আগামীতেও এভাবে নজরুলকে নিয়ে আরও বেশি কাজ করতে চাই। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নজরুলের বিস্তৃতি ঘটাতে চাই।
এ সময়ে তরুণদের মধ্যে নজরুলচর্চা কেমন হচ্ছে?
দশ বছর আগে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন অনেক এগিয়ে আছি। আমি যেহেতু নজরুলকে নিয়ে কাজ করছি তাই নিজের চোখেই দেখি তরুণরা নজরুলের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। তবে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় যারা গান শেখায় তাদের কাছে অনুরোধ করি নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে তারা নজরুলের স্বরলিপি নিয়ে যেন গান শেখান।
নজরুলের সৃষ্টি কি সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছে?
আগের চেয়ে সাধারণ মানুষ এখন নজরুল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে। প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক কিছু সহজ হয়ে গেছে। মানুষ এখন ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানার সুযোগ পাচ্ছে। তবে আমি মনে করি আমাদের সংগীতকে সমৃদ্ধ করার জন্য নজরুলের গানগুলোকে সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। নজরুলের যেমন ধর্মীয় গান আছে তেমনি জীবনমুখী ও প্রেম ভালোবাসার গানও। আপনি তার সংগীত নিয়ে কি বলবেন?
নজরুলকে সব ধরনের গানে সমানভাবে পাওয়া গেছে। কীর্তন, ভজন, শ্যামা সংগীত ও ধর্মীয় সব ধরনের গান তিনি করেছেন। কোনোটি থেকে কোনোটিকে ছোট করে দেখার মতো নয়। এরপরেও সে সময় নজরুল কিছুটা অবহেলিত ছিলেন। তবে সময়ের পরিক্রমায় মানুষ এখন নজরুলকে আগের থেকে অনেক বেশি বুঝতে পারছে। নজরুলকে জানার আগ্রহও মানুষের মধ্যে এখন অনেক বেশি কাজ করে। আমি মনে করি নজরুল সংগীত মানুষকে শুদ্ধ পথ দেখাতে পারে। নজরুলের গানে আপনি কী খুঁজে পান?
আমি আগেও বলেছি নজরুল সংগীত মানুষকে শুদ্ধ পথ দেখাতে পারে। নজরুলের সাহিত্য মানুষকে গোঁড়ামি থেকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়। আমি নজরুলের গানে সত্যটা খুঁজে পাই। নজরুলের গানে কোনো ঢঙ নেই মেকি, বানোয়াট কিছু নেই, যা আছে তার সমস্তটাই মানুষের কল্যাণের জন্য।
নতুন প্রজন্মের নজরুল সংগীত শিল্পীদের জন্য কি বলবেন?
নজরুলের গানের সুর যেন ঠিক থাকে। সময়ের সঙ্গে অনেক যন্ত্র যোগ হতে পারে। একটা গানকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার মানে এ নয় সেটির সুর পরিবর্তন করতে হবে। কোনো গানের সুর যদি কারও জানা না থাকে তাহলে নজরুল সংগীত সম্পর্কে জানা শোনা কারও কাছ থেকে সেটি তুলে নিয়েই গান করা উচিত।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নজরুলের গান নিয়ে কাজ করেছেন। সেটি নিয়ে জানতে চাই?
মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্যম, কারার ওই লোহ কপাটসহ আরও অনেকগুলো গান গেয়েছি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়। এসব গান দিয়ে শরণার্থী ক্যাম্পে যেতাম। সবাইকে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করতাম। এসব গান থেকেও সহজে বোঝা যায় নজরুলের গান কতটা জীবনমুখী।আপনার বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে বলুন?
আজ ত্রিশালে জাতীয় কবির একটি আয়োজনে অংশগ্রহণ করব। বেশ কয়েক বছর পর সেখানে যাচ্ছি। এছাড়া আগামীকাল ছায়ানটের একটি প্রোগ্রামে গান করব। ৩ জুন বুয়েটে একটি অনুষ্ঠান আছে। জুলাই মাসের শেষের দিকে লন্ডনে যাবার সম্ভাবনা আছে।