হার্মাসিস ক্লিওপেট্রা নাটকের দৃশ্য
গণঅভ্যুত্থানের রেশ ধরে বেশ কিছুদিন স্থবির ছিল ঢাকার নাট্যমঞ্চ। ধীরে ধীরে কেটে গেছে সেই স্থবিরতা। সেই সুবাদে বন্ধ্যাত্ব পেরিয়ে পুনরায় গতিশীল হয়েছে থিয়েটার অঙ্গন। মহিলা সমিতির সমান্তরালে নাট্য প্রদর্শনীর জন্য খুলে গেছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন। ফলশ্রুতিতে এখন প্রতি সপ্তাহেই একাধিক নাটক দেখার সুযোগ মিলছে দর্শকদের। তাই বলে সব নাটক দর্শক টানছে না। নাটক মঞ্চায়নের সময় মিলনায়তনের অধিকাংশ আসন ফাঁকা থাকছে। তবে মানসম্পন্ন নাটক হলে ঠিকই ভিড় জমছে নাট্যপ্রেমীদের।
তেমনই এক দর্শকপ্রিয় নাটক ‘হার্মাসিস ক্লিওপেট্রা। সে কারণেই মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাট্যদল অনুস্বরের এই প্রযোজনার একটানা চার মঞ্চায়ন হলো শুক্র ও শনিবার বিকেল এবং সন্ধ্যায়। প্রায় আড়াইশ বছর পূর্বের প্রাচীন মিশরের রানী ও রহস্যময়ী নারী ক্লিওপেট্রাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে নাটকের ঘটনাপ্রবাহ। এই অনন্য সুন্দরী ও বুদ্ধিমতীর সাম্ররাজ্য সামলানো রাজনৈতিক কৌশলের সমান্তরালে উঠে এসেছে প্রেম ও ছলনার গল্প। রাহমান চৌধুরী রচিত ইতিহাস আশ্রিত কল্পকাহিনীনির্ভর নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ বারী।
নাটকটির দর্শকপ্রিয়তা প্রসঙ্গে নির্দেশক মোহাম্মদ বারী বলেন, এই প্রযোজনাটিতে সময় ও কালকে তুলে ধরতে পরিপূর্ণ মঞ্চসজ্জার সঙ্গে পোশাক ব্যবহারের রসায়নটি ভালো হয়েছে। আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন সময়কে উপস্থাপনে পোশাক ও সেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে নাটকের মঞ্চশিল্পীরাও চমৎকার অভিনয় করেছেন। এসব কিছু মিলে নাটকটি কমপ্লিট থিয়েটারে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি প্রযোজনাটির গল্পে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং পালাবদলের বিষয়টিও দর্শককে আকৃষ্ট করেছে। আর সে কারণেই শুক্র ও শনিবার টানা প্রদর্শনীতেই কাঙ্খিত দর্শকের সাড়া পেয়েছি। তাই পরিপূর্ণ দর্শককে সঙ্গী করেই চারটি প্রদর্শনী হয়েছে।
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নাট্যকার রাহমান চৌধুরী বলেন, নাটকটির মূল চরিত্র হচ্ছে ক্লিওপেট্রা এবং হার্মাসিস। ক্লিওপেট্রা ইতিহাসের চরিত্র হলেও হার্মাসিস ইতিহাসের চরিত্র নয়। ক্লিওপেট্রার সঙ্গে হার্মাসিসের সম্পর্কের মাঝে জড়িয়ে আছে গ্রিক টলেমী বংশের হাত থেকে মিশরের স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টি। কারণ, টলেমীদের পক্ষ থেকে হার্মাসিস আবির্ভূত হয় মিশরে। তাই এই নাটকে ইতিহাসের চেয়ে বড় সত্য হয়ে ধরা দেয় প্রতিটি জাতির স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্খা। সেখানে নতুন ঘটনারূপে পল্লবিত হয় নর-নারীর প্রেম। প্রতিপক্ষ হার্মাসিসের সঙ্গে ক্লিওপেট্রার প্রেমে জড়িয়ে পড়া নাটকে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক টানাপোড়েন।
প্রাচীন মিশরের প্রেক্ষাপটে প্রেম ও বাস্তবতার মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার রূঢ় বয়ান হচ্ছে হার্মাসিস ক্লিওপেট্রা। ক্লিওপেট্রাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ক্ষমতাচ্যুত করার মিশনে নামে হার্মাসিস। কিন্তু সে লক্ষ্যে স্থির থাকতে পারে না হার্মাসিস। ক্লিওপেট্রার সম্মোহনী সৌন্দর্যের টানে তাকে হত্যার বদলে প্রেমে পড়ে যায় সে। এদিকে ক্লিওপেট্রার প্রধান দাসী চারমিওন স্বপ্ন দেখতে খাতে ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করা হলে সেই হবে মিশরের স¤্রাজ্ঞী। কারণ, ভেতরে ভেতরে হার্মাসিসের সঙ্গে চারমিওনেরও ভালোবাসার সম্পর্ক। কিন্তু হার্মাসিসকে লক্ষ্যচ্যুত হতে দেখে ঈর্ষাকাতর হয়ে ক্লিওপেট্রার কাছে সব কিছু ফাঁস করে দেয় চারমিওন। বদলে যায় ঘটনার গতি-প্রকৃতি।
নাটকে ক্লিওপেট্রার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফৌজিয়া করিম অনু। হার্মাসিস চরিত্রে রূপ দিয়েছেন এস আর সম্পদ। এছাড়ান্য অন্য অভিনয়শিল্পীরা মেরিনা মিতু, যাজ্ঞোসিনী মৌ, সাইফ সুমন, মোহাম্মদ বারী, প্রশান্ত হালদার, মাহফুজ সুমন, পিয়ার মোহাম্মদ, নুরুজ্জামান সরকার, আরিফুর রহমান প্রমুখ। সাকিল সিদ্ধার্থের মঞ্চসজ্জায় সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন ইউসুফ হাসান অর্ক। অম্লান বিশ্বাসে আলোক পরিকল্পনায় কোরিওগ্রাফি অনিকেত পাল বাবু। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন তামান্না হক সিগমা।
মনোয়ার/শহিদ