ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

সংস্কৃতি সংবাদ

ভালোবাসার দর্শনময় ‘সখী রঙ্গমালা’ নাটকের মঞ্চায়ন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ১৩ জুলাই ২০২৪

ভালোবাসার দর্শনময় ‘সখী রঙ্গমালা’ নাটকের মঞ্চায়ন

মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ ‘সখী রঙ্গমালা’ নাটকের দৃশ্য

ভালোবাসা বা প্রেমের কোনো গ-ি  নেই। তাই ভালোবাসাকে বাধা যায় না কোনো বিশেষ ছকে। সেটা হতে পারে মানুষে-মানুষে কিংবা মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির। এমনকি তথাকথিত শত্রুর জন্যও যে মন ব্যাকুল হয়, তাকেও আঁকড়ে ধরে গোটা এক জীবন পার করা যায়। সেখানে হিংসার পরিবর্তে বরং ভালোবাসায় আসে মুক্তিÑতেমনই এক দর্শনের আখ্যান ‘সখী রঙ্গমালা’। নাট্যদল বটতলার প্রযোজনাটিতে ভালোবাসার সমান্তরালে উঠে এসেছে ক্ষমতার রাজনীতির বাইরে অবস্থান করা ভিন্ন এক রাজনীতি।

শেষ পর্যন্ত সেই রাজনীতির কূটচাল ছাপিয়ে প্রেমময়তাই হয়েছে মুখ্য। ভালোবাসাই হয়ে ওঠে অনিবার্য সত্য। নোয়াখালী অঞ্চলের নন্দিত লোকজ আখ্যানকে উপজীব্য করে শাহীন আখাতার রচিত সখী রঙ্গমালা উপন্যাসের আশ্রয়ে নির্মিত হয়েছে বটতলার ১৭তম প্রযোজনা।  উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা ও  সৌম্য সরকার। নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় ও মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন প্রণোদিত নাটকটির টানা চার প্রদর্শনী হয় শুক্র ও শুক্রবার।  সেই সূত্রে শনিবার বিকেল ও সন্ধ্যায় মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে পরপর দুটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। 
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার বলেন, সখী রঙ্গমালা উপন্যাস যখন পড়ি, রঙ্গমালার প্রতি কেমন যেন দরদ কাজ করে। তার প্রেমে হাবুডুবু খাই। কিন্তু তার প্রতি প্রেম এত গুরুত্বপূর্ণ কেন ? জমিদার রাজচন্দ্র চৌধুরী কামুক ও প্রেমিক, দেহজ সুখ যার জীবনের একমাত্র আরাধ্য। বহু নারী তার কাম্য। রঙ্গমালা রাজচন্দ্রের ভালোবাসার মানুষ এবং রঙ-ঢংয়ের মানুষ। অপরদিকে রয়েছেন রাজচন্দ্র চৌধুরীর স্ত্রী ফুলেশ্বরী রাই। অথচ ফুলেশ্বরী রাই-এর সখী রঙ্গমালা। এটা কীভাবে সম্ভব?  

যে রাস্তা দিয়ে ফুলেশ্বরী হেঁটে যায়, তার ধূলিকণার সঙ্গে কথা বলে সে। মানুষের সঙ্গে তার সংযোগ কম। প্রকৃতির সঙ্গে তার মূল যোগাযোগ। সামাজিক মানুষের প্রচলিত যে যোগাযোগ তা থেকে একেবারে আলাদা রকমের একটা যোগাযোগ তার সবার সঙ্গে। ভালোবাসার এক ব্যাপক শক্তি তার মধ্যে কাজ করে। এই ভালোবাসা একেবারেই দেনা-পাওনার বাইরে। নিখাঁদ ভালোবাসতে জানে ফুলেশ্বরী রাই। মানুষের এই ভালোবাসার শক্তিটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ফুলেশ্বরী রঙ্গমালাকেও ভালোবাসে, তার ভাবনায় আন্দোলিত হয়, জেগে ওঠে, তার মতো হতে চায়, রঙ্গমালার প্রতি তার অন্য রকমের অপার্থিব প্রেম। রঙ্গমালাকে যখন হত্যা করা হয়, ফুলেশ্বরী রাই-ই একমাত্র প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদের ভাষাকে তুলে দেয় পাখিদের গলায় ও তাদের গানে। প্রেমের গভীরতা এবং ভালোবাসার সহজিয়া রূপটিই এগিয়ে নিয়েছে নাটকের কাহিনীকে। 
সখী রঙ্গমালা নাটকের রাজনীতি সূক্ষ্ম। লিঙ্গ রাজনীতি আছে তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে-মুক্তি আছে, সর্বপ্রাণবাদী দর্শনের চর্চা আছে। জমিদারির হিস্যা নিয়ে ঠানঠুন মারামারি কাইজ্যাও আছে, তবে তার বাইরেও যে ভালোবাসাটা আছে সেটা জরুরি এই ভালোবাসা-মন্দার পৃথিবীতে। প্রেম  মানুষে-মানুষে এবং মানুষে-প্রকৃতিতে যুক্ত হওয়ার গল্প রয়েছে। সমাজের হিসেবে যে শত্রু সে যখন একটা আত্মিক ও পারলৌকিক চিন্তার মাধ্যমে বন্ধু হয়ে যেতে পারে, সে সম্পর্কটি নিবিড়ভাবে ধরা দিয়েছে।

সেটা ঘটে রঙ্গমালা এবং ফুলেশ্বরী রাই চরিত্রের মধ্য দিয়ে। যে রঙ্গমালাকে ফুলেশ্বরী একবার দেখলও না ভালো করে (একবার দূর থেকে দেখেছে মাত্র), যার সঙ্গে স্বামীর প্রেম সেই মানুষটিই সে হয়ে উঠতে চায় দৈহিক ও আত্মিকভাবে। যে প্রেম রঙ্গমালার মৃত্যুর কারণ হয় সে প্রেম এক প্রতীকী রূপ নেয় ফুলেশ্বরীর কাছে। 
প্রযোজনাটির বিভিন্ন ফুলেশ্বরী রাই এবং রঙ্গমালা চরিত্রে অভিনয় করেছেন শর্মীমালা এবং শাহিনূর আক্তার প্রীতি। অন্যান্য চরিত্রে রূপ দিয়েছেন কাজী রোকসানা রুমা, ওলিয়েন্ডার রিমা, সানজিদা ইয়াসমিন, মাহবুব মাসুম, তৌফিক হাসান ভূঁইয়া, আশরাফুল ইসলাম অশ্রু, মোহাম্মদ আলী হায়দার,  লোচন পলাশ প্রমুখ।

×