
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার
শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ের পাশাপাশি মূলধারার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করতে চান শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। সোমবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন: বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
সি আর আবরার বলেন, মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা সম্পৃক্ত করা দরকার। কারণ, কারিগরি শিক্ষাকে অবমূল্যায়ন করা হয়। এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে মিস্ত্রি বানানোর কারখানা। এ ধরনের নেতিবাচক ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
কারিগরি শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এখানে কাঠামোগত সংস্কারের দরকার।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ট্রেড-ভিত্তিক শিক্ষকের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও নিউ টেকনোলজির অভাব রয়েছে। এসব দূর করার জন্য কারিগরি শিক্ষাকে আরও যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষালাভ করেও অনেকে বেকার রয়েছে, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, তার বিকল্প হিসেবে কারিগরি শিক্ষায় জোর দিতে হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। সে কারণে তাদের আচরণে পার্থক্য থাকবে। সবার কাছ থেকে স্বাভাবিক আচারণ আশা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে তাদের বুঝিয়ে আদর করে পাঠদান করাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটা জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। দাবি-দাওয়াগুলো সম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করতে হবে। একইসঙ্গে আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
সি আর আবরার বলেন, সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন করতে চায়। শিক্ষার প্রতিটি স্তরের সিলেবাস যুগোপযোগী করে দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে চায় সরকার। তিনি বলেন, রাষ্ট্র বড় বিনিয়োগ আশা করে এবং এর মাধ্যমে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সহজ হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের জন্যই বিগত সরকার কেবল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো বানিয়েছিল। তবে, সেসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই।
সম্প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একপ্রকার উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে এর সমাধানে সকলকেই ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান চৌধুরী রফিকুল আবরার। এ সময় মূল ধারার শিক্ষার মধ্যে, কারিগরি শিক্ষার একাংশ অন্তর্ভুক্ত করা দরকার বলেও মতো দেন তিনি।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি রচনায় মূল চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করতে পারে।
তারা বলেন, বর্তমান শিল্পায়ন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে টিভিইটি খাতে সংস্কার প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসেবে বিবেচ্য। এই লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সে পরিপ্রেক্ষিতে, একটি ‘কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করার মাধ্যমে এ খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এই ধরনের সংস্কার উদ্যোগ শুধু দক্ষতা উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই নয় বরং একটি টেকসই অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬৯.৮ মিলিয়ন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা প্রায় ৮৩.৩৫ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০.৫০ শতাংশ। বাংলাদেশ একটি যুবপ্রধান দেশ এবং গড় বয়স ২৯.৬ বছর। বয়সভিত্তিক জনসংখ্যা কাঠামো বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় ২৭ শতাংশ জনসংখ্যা ০-১৪ বছর বয়সী এবং প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম বয়সের (১৫-৬৪ বছর) মধ্যে পড়ে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবসমাজ মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ, যা একটি সম্ভাবনাময় ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড নির্দেশ করে।
বক্তারা বলেন, জনমিতির সব সূচকে ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে গড় প্রত্যাশিত আয়ু বর্তমানে প্রায় ৭৩.২ বছর, প্রজনন হার গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস প্রবণতা এবং গড়ে বর্তমানে প্রায় ২.৩-এ নেমে এসেছে। জনমিতির এই ইতিবাচক পরিবর্তনকে টেকসই উন্নয়নে রূপান্তর করতে হলে বাংলাদেশের বর্ধিত কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে মানসম্মত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের গুরুত্বকে কাজে লাগাতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মিজ নাসরিন আফরোজ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শোয়াইব আহমদ খান প্রমুখ