ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পরিবেশবান্ধব গবেষণায় সাফল্য

গোলাম ফাহিমুল্লাহ

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

পরিবেশবান্ধব গবেষণায় সাফল্য

লিচু গাছের সবুজ পাতার মাঝে মাঝে কমলা, হলুদ, নীল, সাদাসহ রঙ-বেরঙের ব্যাগ। আম, পেয়ারার মতো এবার ব্যাগিং পদ্ধতিতে লিচু উৎপাদনে ভালো ফলাফল পাচ্ছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। মূলত লিচু ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ রোধ করতে রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যাগের ব্যবহার করছেন গবেষকরা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশেরও বেশি লিচুর ফলন নষ্ট হয়ে যায় লিচুর ফলছেদক পোকা ‘লিচি ফ্রুট বোরার’-এর আক্রমণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. আবদুল আলিম কয়েক বছর থেকেই লিচুর এই পোকা রোধে বিষমুক্ত লিচু উৎপাদনে গবেষণা করে যাচ্ছেন। তিনি ব্যাগিং, বায়োপেস্টিসাইড ও ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর ব্যবহার করে গত বছর লিচু পোকা রোধে সফলতা পেয়েছেন।
এ পদ্ধতিতে মুকুল থেকে লিচুর গুটি বের হওয়ার পরপরই একটি ব্যাগ দিয়ে ৩০ থেকে ৪৫টি করে লিচু ঢেকে দেয়া হয়। ফলে ক্ষতিকর এই পোকা লিচুতে আক্রমণ করার সুযোগ পায় না। ব্যাগের মধ্যে দিয়ে আলো এবং বাতাস চলাচলের সুযোগ থাকায় লিচুর বৃদ্ধিতেও ব্যাগের কোন প্রভাব নেই বললেই চলে। পাশাপাশি লিচু ঢেকে রাখায় বাদুড় কিংবা অন্য কোন পোকার আক্রমণ থেকেও লিচু রক্ষা পায়। অন্যদিকে ক্ষতিকর রাসায়নিক বালাইনাশকের পরিবর্তে বায়োপেস্টিসাইড ও ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর ব্যবহার করায় লিচু সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিকারক রাসায়নিকমুক্ত হয় এবং ক্ষতিকর পোকামাকড়ের বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে গবেষক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, লিচুর ফলছিদ্রকারী পোকা লিচুর একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। এ পোকা থেকে বাঁচতে কৃষকরা বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছেন। এসব কীটনাশক মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি পরিবেশের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়। এসব ক্ষতিকর পদার্থ থেকে বাঁচতে আমরা রাসায়নিক ব্যবহারের পরিবর্তে পেনিকেল ব্যাগিং পদ্ধতি, বায়োপেস্টিসাইড এবং ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর ব্যবহার করে লিচু ক্ষতিকর ফল ছেদকপোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষণা করছি।
ইতোমধ্যে গতবছর এ গবেষণায় ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গতবছর আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে লিচু ফল ছেদকপোকা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছি। অনেকসময় লিচু ঢেকে রাখার ফলে রং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের এ পদ্ধতিতে লিচুর রঙও আমরা খুব সুন্দর পেয়েছি পাশাপাশি ফলনও পেয়েছি আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী। আমরা আশা করি এ প্রকল্প শেষে লিচুর ক্ষতিকারক ফলছেদক পোকা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ভালো প্রযুক্তি আমরা কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে প্রফেসর ড. আবদুল আলিমের নেতৃত্বে পিএইচডি ও মাস্টার্স অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও কাজ করছে এই গবেষণায়। দিনাজপুরের তিন লিচু বাগানে কৃষক পর্যায়ে ও মাঠ পর্যায়ে গবেষণা পরিচালনা করছেন তারা। সম্প্রতি তার এই গবেষণা পরিদর্শন করেছেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র হর্টিকালচার স্পেশালিস্ট ড. নাজিরুল ইসলাম ও প্রাণী সম্পদ পরিচালক ড. নাথু রাম সরকার।ৎ
এ গবেষণা প্রকল্পের বিষয়ে কৃষি গবেষনা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র হর্টিকালচারাল ক্রপস স্পেশালিষ্ট ড. নাজিরুল ইসলাম বলেন, লিচুর ফলছিদ্রকারী পোকা সাধারণত লিচুর ভিতরে বিচিতে অবস্থান করে। তাই এ পোকার আক্রমণ ঠেকাতে হলে বিচি ছাড়া লিচুর প্রজাতি উদ্ভাবন করতে হবে। প্রচলিত লিচুর জাতগুলোর ক্ষেত্রে এ পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কী পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় তা বের করতে এই গবেষণা প্রকল্পটি আমরা হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদন করেছি। এখনও পর্যন্ত যে ফলাফল পেয়েছি তা সন্তোষজনক। আশা করি এ পোকা দমনের জন্য কার্যকর একটি পদ্ধতি আমরা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হবো।

প্যানেল

×