
ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুধু ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, তাদের অভিভাবকদের জন্যও যেন এক কঠিন পরীক্ষা। সন্তানের স্বপ্ন পূরণের আশায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন তারা—চোখে স্বপ্ন, মনে প্রার্থনা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরেও চলে আরেক ধরনের অপেক্ষা, উত্তেজনা এবং উৎকণ্ঠা।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভিড় বাড়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। ভেতরে পরীক্ষার ঘর, আর বাইরে ছায়ার নিচে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা শত শত বাবা-মা। কেউ একা, কেউ ছোট ছোট দলে আলোচনা করছেন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কারো মুখে চাপা টেনশন, কারো চোখে অদৃশ্য প্রার্থনার ঝিলিক।
এমনই একজন অভিভাবক মো. ফরিদ উদ্দিন, পেশায় স্কুলশিক্ষক, এসেছেন লক্ষ্মীপুর থেকে। মেয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশায় দিনভর গেটের বাইরেই অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, “মেয়ে আমার সায়মা ছোটবেলা থেকেই খুব মনোযোগী। তার স্বপ্ন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা। ওর স্বপ্ন পূরণ করতে যা লাগে, আমি করবো ইনশাআল্লাহ। গতকাল এসেছি, রাতে আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম। আজ সকালে খুব ভোরে উঠে তাকে নিয়ে এসেছি পরীক্ষা কেন্দ্রে। এখন বাইরে বসে আছি, দোয়া করছি—যেন ও ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়।”
চাঁদপুর থেকে আসা গৃহিণী মমতাজ বেগম বলেন, “ছেলে আমার প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি তো ঘুমোতেই পারিনি ঠিকমতো। সকালে নামাজ পড়ে দোয়া করেছি, তারপর তাকে নিয়ে আসলাম। এখন শুধু আল্লাহর ভরসা।”
আবদুল লতিফ, পেশায় দিনমজুর, এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। তিনি বলেন, “কাজ কাম রেখে এসেছি। খরচটা কষ্ট করে জোগাড় করেছি। ছেলে যেন নিজের জীবন গড়তে পারে, সেই আশায় এসেছি। দরজার বাইরেই অপেক্ষা করছি, মনটা ওর সাথেই আছে।”
নরসিংদী থেকে আগত শাহানা আক্তার, যিনি একজন প্রাইভেট কোম্পানির কর্মী, বলেন, “মেয়েকে একা পাঠাতে মন চাইলো না। তাই ছুটি নিয়ে নিজেই সঙ্গে এলাম। এখন বাইরে দাঁড়িয়ে আছি, বারবার সময় দেখছি। মনে হচ্ছে, আমারই পরীক্ষা হচ্ছে।”
এসব অভিভাবকদের কেউ হয়তো ছুটির দিনেও কাজ বন্ধ রেখে এসেছেন, কেউবা ভোররাতে যাত্রা শুরু করেছেন। তবুও সবার মুখে একটাই কথা—“সন্তান যেন ভালো করে পরীক্ষা দেয়।”
নুসরাত