
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের নাসা কর্তৃক আয়োজিত সম্মানজনক বার্ষিক প্রতিযোগিতা নাসা হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ “NASA Human Exploration Rover Challenge (HERC)”-এ বাংলাদেশের পতাকা আবারও গর্বের সাথে উড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ (IHSB) এবারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের একমাত্র হাইস্কুল প্রতিনিধি হিসেবে হিউম্যান-পাওয়ার্ড এবং রিমোট-কন্ট্রোল্ড চ্যালেঞ্জ— উভয় বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে, যা গোটা জাতির জন্য এক গৌরবময় অর্জন।
গত ১০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, হান্টসভিল-এ শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের তৈরি রোভার প্রদর্শিত হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। টানা চতুর্থ বছরের মতো এই গ্লোবাল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ নিজেকে প্রমাণ করেছে দক্ষতা, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা ও দেশপ্রেমে পরিপূর্ণ এক দল হিসেবে।
দলের ২৬ জন সদস্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে গবেষণা, ডিজাইন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনাম ও গৌরব বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার লক্ষ্যে। দলের পরামর্শদাতা শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ এবং মো. মুনজুর মোর্শেদ, টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শাহিদুল হাসান মন্টি ও ইফতেখার হোসাইনের দিকনির্দেশনায় দলটি এগিয়ে চলেছে দৃঢ় প্রত্যয়ে। প্রতিযোগিতা এবং সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে দলটি ১৫ এপ্রিল দেশে ফিরবে।
দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিক্ষার্থী শাহজাদি আয়মান সুলতানা ও মাহজাবিন আলম রোশনী। দলের সাথে স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরা সিনিয়র সেকশন এর প্রধান কামরুল আহসান, গুলশান শাখার ডেপুটি হেড রকিবুল করিম,
শিক্ষক আদনান শিহাব আহমেদ ও সাইমা সামাদ। তাঁদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এবং শিক্ষকদের উৎসাহে দলের প্রতিটি সদস্য বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করে চলেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ চেয়ারম্যান টিমোথি ডোনাল্ড ফিশার বলেন, "আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু স্কুলের নয়, গোটা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। সবুজ-লাল পতাকাটি গর্বের সাথে বহন করছ বাংলাদেশকে গর্বিত করছে।"
গবেষণা, প্রেজেন্টেশন ও ইঞ্জিনিয়ারিং—সবক্ষেত্রেই দলের প্রতিটি সদস্য নিখুঁত কাজের মাধ্যমে অংশ নিচ্ছে। এই প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র একটি রোবটিক্স চ্যালেঞ্জ নয়, এটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আগ্রহী তরুণদের জন্য বাস্তব জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রযাত্রার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে এধরনের আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ এক বিশাল পদক্ষেপ। ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের এই গর্বিত অর্জন জাতির প্রতি এক শ্রদ্ধা এবং আগামী দিনের জন্য এক আশার আলো।
ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ জানায়, নাসা HERC (Human Exploration Rover Challenge) একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা, যার মূল লক্ষ্য হলো বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি করা। এই প্রতিযোগিতা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলা, যেখানে মহাকাশ অন্বেষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে কাজ করা হয়।
তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারে তারা এমন একটি রোভার ডিজাইন ও নির্মাণ করবে যা মঙ্গল ও চাঁদের মতো কঠিন ভূখণ্ডে চলাচল করতে সক্ষম।
এই চ্যালেঞ্জে রোভারকে সুনির্দিষ্ট রিমোট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে, যেখানে তাকে পাথর, গর্ত, ও খাড়া ঢালের মতো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে। পাশাপাশি, বৈজ্ঞানিক নমুনা সংগ্রহ ও সংকীর্ণ স্থানে চলাচলের মতো জটিল কাজও সম্পন্ন করতে হবে।
এই প্রতিযোগিতা শুধুই প্রযুক্তিগত দক্ষতার পরীক্ষা নয়, বরং মহাকাশ অভিযানে ভবিষ্যৎ বাস্তব সমস্যার জন্য প্রস্তুতিরও এক বাস্তবভিত্তিক অনুশীলন।
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ। নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি ভাষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা এবং বিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। দেশে বিদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে।
ফজলুর রহমান/ফারুক