
ছবি: সংগৃহীত
৫ আগষ্টের পরে সরকার পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের তারিখে। গত ৬ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় ১১ সেপ্টেম্বর নয় ৮ এপ্রিল পালিত হবে ২৪ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। নতুন তারিখ প্রচারে ৬ এপ্রিল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট ও হলগুলোর সামনে টানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের ব্যানার প্রশাসনিক ভবনের সামনে লাগানো হয়ে ডিজিটাল স্ক্রলিং স্ক্রিন। এত কিছু করেও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আয়োজনে চোখে পড়েনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন, আনন্দ শোভাযাত্রা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার,হাজী দানেশ ও খুরশীদ জাহান হকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ,শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল।
সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে পতাকা উত্তোলন, কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা । পরে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও কেক কাটা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন মিঞা।
এ সময় অন্যদের মাঝে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার, ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির, প্রক্টর প্রফেসর মো. শামসুজ্জোহা, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. এমদাদুল হাসান,জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক খাদেমুল ইসলাম, বিভিন্ন হলের হল সুপারসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু আমাদের জন্য কোনো আয়োজন নেই। বর্তমান প্রশাসন শুধু নিজেদেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদার মনে করে, আমাদের ছাড়াই তারা পরিকল্পনা করে। ছাত্ররা বরাবরই অবহেলিত। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
শিক্ষার্থী সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, আজকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠার কথা ছিলো শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আনন্দ র্যালি হবে, শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবে। সর্বোপরি নতুন তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস অনেক জাঁকজমক ও শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক হওয়ার কথা ছিল। হাবিপ্রবির ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের ভিতরে আনন্দ উল্লাসের কোনো কিছুই নেই। এই দায়ভার প্রশাসন এড়িয়ে যেতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আয়োজনটি আরও সফল ও সার্থক হতে পারতো, যদি এটি উপ-কমিটির মাধ্যমে সবাইকে সংগঠিত করা হতো এবং ডিনদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে অবহিত করা হতো।
এ বিষয়ে জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. এমদাদুল হাসান বলেন, " বিশ্ববিদ্যালয় দিবসটি সবার জন্য সমান ভাবে উন্মুক্ত। আমরা আশা করেছিলাম শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। আমি মনে করি এই আয়োজনে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নিলে আরও সুন্দর হতো।
তবে বিভিন্ন অনুষদের সামনে পরীক্ষা থাকায় এরকম আয়োজনে সারাদিনব্যাপী অংশ নেওয়া তাদের পক্ষে হয়তোবা সম্ভব হয়নি। আমি আশা করবো ভবিষ্যতে তারা এইরকম আয়োজনে অংশ নিবে।"
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা এ বিষয়ে বলেন, "আমাদের মাঝে অনেক ভুল ও ভ্রান্তি থাকা সত্ত্বেও, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সকলের সহযোগিতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।"
কাওসার/শহীদ