
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১০ এপ্রিল
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১০ এপ্রিল। এ পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৯ লাখ ২৮ হাজার ২৮১ জন পরীক্ষার্থী। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষার লিখিত বা তত্ত্বীয় অংশ শেষ হবে ১৩ মে। আর মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১৫ মে। এরপর ২২ মে পর্যন্ত চলবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।
এবারের এসএসসি পরীক্ষা ঘিরে নানামুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার। গত ১৬ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
নানামুখী চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টরা। তারই অংশ হিসেবে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি, ফটোকপি মেশিন বন্ধ রাখা এবং লিখিত পরীক্ষা চলাকালীন টানা ৩৪ দিন সারাদেশে সবধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে।
একগুচ্ছ নির্দেশনা ॥ পরিপত্রে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে সব পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিটের পর পরীক্ষাকেন্দ্রে এলে রেজিস্টারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে; বিলম্বে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে অবহিত করবে।
তবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পর কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ বা পরীক্ষা গ্রহণে অনুমতি প্রদান করা যাবে না; কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনের সুবিধাযুক্ত ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
অননুমোদিত ফোন/ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ট্রেজারি/থানা/নিরাপত্তা হেফাজত হতে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীরা কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং প্রশ্নপত্র বহনের কাজে কালো কাচযুক্ত মাইক্রোবাস বা এরূপ কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না; প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নিয়োগ দিতে হবে।
ট্রেজারি/থানা/নিরাপত্তা হেফাজত হতে কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব বা তার মনোনীত উপযুক্ত প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসারসহ প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/কর্মকর্তার (ট্যাগ অফিসার) উপস্থিতি ব্যতীত প্রশ্নপত্র ট্রেজারি/থানা/নিরাপত্তা হেফাজত থেকে বের করা যাবে না বা বহন করা যাবে না; ট্রেজারি/থানা/নিরাপত্তা হেফাজত থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে বহুমুখী নির্বাচনী প্রশ্নসহ রচনামূলক/সৃজনশীলের সব সেট প্রশ্নই নিতে হবে।
প্রশ্নের সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সেট কোডে পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার), কেন্দ্র সচিব এবং পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে নির্ধারিত সেট কোড নিশ্চিত হয়ে বিধি অনুযায়ী প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে; পরীক্ষা চলাকালীন এবং পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগে বা পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ ব্যতীত অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।
এ সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; অনিবার্য কারণবশত কোনো পরীক্ষা বিলম্বে শুরু করতে হলে যত মিনিট পর পরীক্ষা শুরু হবে, পরীক্ষার্থীদের সে সময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে; পরীক্ষাকেন্দ্রে ও প্রশ্ন পরিবহনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে; প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নজরদারি জোরদার করবে; পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে সব ফটোকপি মেশিন পরীক্ষা চলাকালীন বন্ধ থাকবে; পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আগামী ১০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সবধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে; প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব উত্তরপত্র নিকটস্থ ডাক বিভাগে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বোর্ডগুলো পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করবে; পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত গণমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে উপস্থাপনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সভাপতি, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা দায়িত্ব পালন করবেন।
রাজশাহী বোর্ডে পরীক্ষার্থী এক লাখ ৮২ হাজার ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসছে এক লাখ ৮১ হজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছাত্র ৯৪ হাজার ৬১০ জন এবং ছাত্রী ৮৭ হাজার ২৯৪ জন।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন বিভাগের আট জেলায় মোট ২৬৯টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রগুলোতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এদিকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আনম. মোফাখখারুল ইসলাম কেন্দ্র সচিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো কেন্দ্র সচিব পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে অবৈধ কোনো কার্যকলাপে জড়িত থাকলে বোর্ডের বিধি অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি কেন্দ্র সচিবদের শিক্ষা বোর্ড, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ তার কেন্দ্রের আওতাধীন সব বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করে পরীক্ষা গ্রহণের প্রতি নির্দেশনা দেন।
এদিকে, এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে রাজশাহী নগর পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নগর পুলিশের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজশাহী মহানগরীর ২৭টি পরীক্ষাকেন্দ্রে এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার নিমিত্তে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ১৩ মে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহের চতুর্দিকে ২০০ গজের মধ্যে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, বিক্ষোভ প্রদর্শন, মাইকিং, বিস্ফোরকদ্রব্য ও অস্ত্রশস্ত্র বহন নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়াও সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বা এর কাছে লাউড স্পিকার ব্যবহার, কোনো প্রাঙ্গণ বা বাড়িতে বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে গান-বাজনা করা, গান-বাজনা বা অন্যান্য শব্দ বড় করে শোনার জন্য মাইক্রোফোন, লাউড স্পিকার অথবা কোনো প্রাঙ্গণ বা ব্যবসাকেন্দ্রে বিকট শব্দ হয় এমন কিছু ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।