
ছবি: সংগৃহীত
প্রিডায়াবেটিস হলো একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে রক্তে শর্করার স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উচ্চ নয়। তবে, ভালো খবর হল যে এটি জীবনযাত্রায় কিছু ছোট পরিবর্তন আনার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা এবং চিকিৎসা করা সম্ভব। প্রতিদিনের অভ্যাসগুলিতে কিছু সাধারণ পরিবর্তন আপনাকে রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
এখানে ৭টি দৈনন্দিন অভ্যাস উল্লেখ করা হল যা প্রিডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক:
১. কম কার্বোহাইড্রেট ও উচ্চ আঁশযুক্ত খাবারের প্রতি মনোযোগ দিন কার্বোহাইড্রেট সরাসরি রক্তে শর্করার স্তরের উপর প্রভাব ফেলে, এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট (যেমন সাদা রুটি, চিনিযুক্ত পানীয়, এবং প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাকস) ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায়। সেজন্য স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন:
সম্পূর্ণ শস্য (কুইনোয়া, ব্রাউন রাইস, সারা গম)
উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার (বীন, ডাল, বাদাম, ফ্ল্যাকসিড)
অ-স্টার্চি শাকসবজি (ব্রোকলি, পালং শাক, বেল পিপার)
এই খাবারের মাধ্যমে শর্করা দ্রুত শোষিত হওয়া থেকে রোধ করা যায়।
২. নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ব্যায়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করা স্তর কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এয়ারোবিক ব্যায়াম (যেমন দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো, সুইমিং) এবং শক্তির প্রশিক্ষণ (যেমন ওজন উত্তোলন বা প্রতিরোধ ব্যায়াম) উভয়ই প্রিডায়াবিটিস প্রতিরোধে সহায়ক। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি-তীব্রতার ব্যায়াম করা উচিত (প্রতিদিন ৩০ মিনিট, ৫ দিন)। খাওয়ার পরে ১০ মিনিট হাঁটাও রক্তে শর্করা স্তর কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৩. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা শরীরের ওজন যদি ৫-১০% কমানো যায়, তবে তা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করা স্তর কমাতে সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে:
*পোরশন নিয়ন্ত্রণ এবং মনোযোগ সহকারে খাবার খাওয়া।
*রাতে অতিরিক্ত স্ন্যাকস খাওয়া এড়ানো।
*পুষ্টিকর খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া।
৪. চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমানো চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায়। সুতরাং, চিনিযুক্ত পানীয়, সাদা রুটি, পাস্তা, পেস্ট্রি এবং প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাকস পরিহার করা উচিত। প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন স্টেভিয়া বা মনক ফ্রুট ব্যবহার করা যেতে পারে, এবং খাওয়া উচিত পূর্ণ, অপরিষ্কার খাবার।
৫. ভালো ঘুম নিশ্চিত করা অনিদ্রা শরীরের হরমোনগুলিকে প্রভাবিত করে, যা রক্তে শর্করার স্তর এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে যে খারাপ ঘুমের অভ্যাস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ঘুমের মান উন্নত করতে:
*নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী মেনে চলা।
*বিছানায় যাওয়ার আগে ব্লু লাইট (ফোন, টিভি) এড়ানো।
*অন্ধকার, ঠান্ডা, এবং শান্ত পরিবেশ তৈরি করা।
৬. স্ট্রেস কমানো চিরস্থায়ী স্ট্রেস করটিসল হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়, যা রক্তে শর্করার স্তর বাড়ায় এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায়।
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের কৌশল:
*ধ্যান বা গভীর শ্বাসের ব্যায়াম।
*প্রকৃতিতে সময় কাটানো বা প্রিয়জনদের সঙ্গে থাকা।
*সঙ্গীতের সাথে সময় কাটানো।
*যোগব্যায়াম।
৭. সঠিক হাইড্রেশন বজায় রাখা এবং চিনিযুক্ত পানীয় কমানো অপর্যাপ্ত পানীয়ের ফলে শরীরের শর্করার স্তর বাড়তে পারে। যথেষ্ট পানি খাওয়া শরীরের কিডনি কার্যক্রমে সহায়ক, যা অতিরিক্ত শর্করা রক্ত থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
হাইড্রেশন বজায় রাখতে:
*প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
*সোডা এবং এনার্জি ড্রিঙ্কস বাদ দিন।
*কফি খাওয়া সীমিত করুন।
এই অভ্যাসগুলো আপনাকে প্রিডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে এবং দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবনযাপন করতে সহায়ক হবে।
রিফাত