
ছবি: সংগৃহীত
বিতর্কের মুখে চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) গণিত পরীক্ষার সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। বুধবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড নতুন এই রুটিন প্রকাশ করেছে। নতুন সূচি অনুযায়ী আগামী ২১ এপ্রিল এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে খ্রিস্টান ধর্মাম্বলীদের যীশু খ্রিষ্টের পুনরুত্থানের দিনে (ইস্টার সানডে) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় অসন্তুষ্ট ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বাংলাদেশ কাথলিক শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার সূচি পরিবর্তনের জন্য শিক্ষা সচিবকে চিঠি দেয়। এ নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরই বুধবার নতুন করে সূচি পরিবর্তন করা হল।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নতুন সংশোধিত রুটিন অনুযায়ী ২০২৫ সালের এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ১০ এপ্রিল থেকে। এ পরীক্ষা শেষ হবে ১৩ মে। এবারও বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হবে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্রের ও সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র দিয়ে। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ থেকে ২২ মে পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষা ৮ মে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে আবার সময়সূচি সংশোধন করা হয়েছে। ১৩ এপ্রিল বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু বৈসাবি উৎবের কারণে এই পরীক্ষা ১৩ মে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর ২০ এপ্রিলের গণিত পরীক্ষা নিয়ে আলোচনার পরে আবার পরিবর্তন আনা হয়েছে সময়সূচিতে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি প্রকাশ করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। সূচি অনুযায়ী ২০ এপ্রিল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের যীশু খ্রিষ্টের পুনরুত্থান, রবিবার (ইস্টার সানডে)। যা ধর্মীয় বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ পার্বণ। ঐচ্ছিক ছুটি হিসেবে সরকারিভাবেও তালিকাবদ্ধ। কাথলিক শিক্ষা বোর্ড জানায়, এই বোর্ডের আওতাধীন ৬০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। অন্যান্য আরো ৫০টির অধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে খ্রিষ্টান শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে। তবে বোর্ডের দেওয়া ওই রুটিন দেখে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে চার্চ-পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জনগণ ইস্টার সানডের দিনে এসএসসি পরীক্ষার সূচি পাওয়ার পর অসন্তুষ্টি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ক্যাথলিক শিক্ষা বোর্ড খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষার্থীদের একটি অভ্যন্তরীণ বোর্ড। যা দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষার সঙ্গে কাজ করে আসছে। এই বোর্ডের নির্বাহী সচিব জ্যোতি এফ গোমেজ ওই সময় জনকণ্ঠকে জানান, সর্বশেষ ১৯৮২ সালে ইস্টার সানডের দিন এমন পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিগত ৪০ বছরে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি ধারণা করছেন ভুল করেই হইতো এমনটি করা হয়েছিল। যেকারণে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনে শিক্ষা সচিবকে অনুরোধ জানানো হয়। জ্যোতি এফ গোমেজ আরও বলেন, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে আদিবাসীদের বৈষাবী উৎসবের দিন পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয়েছিল। ওই কারণে তারা পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতেই সূচিতে পরিবর্তন হলো।
এবছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ১৮ হাজার ৮৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।
কাজল/ফারুক