
ছবি:সংগৃহীত
প্রত্যেক শিক্ষার্থীই উন্নত দেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখে। উন্নত বিশ্বের কিছু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুযোগ এবং অবকাঠামো অত্যন্ত উন্নত। তবে, যদি আপনি সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া এই স্বপ্নের পেছনে ছুটে যান, তাহলে তা সহজেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে। স্নাতকোত্তর শিক্ষা সম্পর্কে আপনার যদি দ্বিধা থাকে, যেমন তা দেশে করবেন নাকি বিদেশে, তবে সিদ্ধান্ত পুরোপুরি আপনার উপর নির্ভর করে।
যদি আপনি ভিন্ন দেশে পড়াশোনা করতে চান, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, অথবা পড়াশোনার পরিবেশে পরিবর্তন চান, তবে বিদেশে স্নাতকোত্তর করা আপনার জন্য একটি ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। বিশ্বের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য স্কলারশিপ দেয় এবং এই কোর্সটি সাধারণত দুই বছরের হয়ে থাকে, যা আপনার টিউশন ফি দুটি বছরের জন্য পরিশোধ করতে হবে। এর পাশাপাশি, খন্ডকালীন চাকরির সুযোগও রয়েছে।
বিদেশে স্নাতকোত্তর করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া:
১. দেশ নির্বাচন
প্রথমে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন দেশে পড়াশোনা করবেন। কিছু দেশের শিক্ষার মান উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো, যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান ইত্যাদি। এছাড়াও, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানি, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, ভারত, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, এবং আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে, যেকোনো দেশের শিক্ষার মান এবং শিক্ষাব্যবস্থা সমান নয়, তাই দেশের শিক্ষাগত মানের বিষয়ে ভালো করে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
২. বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতি, আর্থিক সামর্থ্য এবং ভবিষ্যৎ চাকরির সুযোগের উপর ভিত্তি করে আপনাকে বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, এবং ইতালি সহ বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশে। বিষয় নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ, যেমন: মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা প্রশাসন, আর্টস, সায়েন্স, মেরিন ইত্যাদি।
৩. সঠিক সময় নির্বাচন
আপনার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফল সেশন এবং উইন্টার সেশনে আবেদন নেয়। আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চান, তাদের আবেদন সময়সীমা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা জরুরি।
৪. খরচ এবং স্কলারশিপ
বিদেশে পড়াশোনার জন্য আপনার খরচের পরিমাণ এবং স্কলারশিপের সুযোগ সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। আপনি যদি স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়াশোনা করতে চান, তবে স্কলারশিপের মেয়াদ এবং নবায়নযোগ্যতা সম্পর্কে তথ্য জেনে রাখা উচিত।
৫. ভর্তির শর্ত পূরণ
প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভর্তির শর্ত থাকে। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা, যেমন IELTS, TOEFL, GRE, GMAT ইত্যাদি পরীক্ষায় পাশ করার শর্ত থাকতে পারে। এছাড়া, অন্যান্য পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়েও খোঁজ নেয়া উচিত।
৬. ভিসা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর, আপনাকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কিছু দেশ যেমন ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ইত্যাদিতে ভিসা প্রাপ্তি সহজ, তবে অন্যান্য দেশগুলোতে ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন হতে পারে। তাই, আপনার যেসব দেশ নির্বাচিত, সেই দেশের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখুন।
৭. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র যেমন, ট্রান্সক্রিপ্ট, সনদপত্র, মার্কশিট, সুপারিশপত্র, জীবনবৃত্তান্ত ইত্যাদি প্রয়োজন। এসব কাগজপত্র সংগ্রহ এবং যথাযথভাবে প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP)
স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP) একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, যেখানে আপনার পেশাদার, ব্যক্তিগত এবং অ্যাকাডেমিক অভিজ্ঞতা, এবং আপনি কেন ওই বিশেষ কোর্সটি নিতে চান তা ব্যাখ্যা করতে হয়।
৯. আবেদনপত্র জমা
সবশেষে, আপনি আবেদনপত্র জমা দেবেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করে, তাই আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর নিয়মিত ইমেইল চেক করতে হবে।
এভাবে বিদেশে স্নাতকোত্তর করতে আপনার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেন।
আঁখি