
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে প্রশাসন ভবন অবরোধ করে মাস্টাররোলে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা বিক্ষোভ করেছেন । এতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ।
আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে ৬টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের ফটকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। রাত আটটার দিকে কর্মচারীদের একটি প্রতিনিধি দল প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে উপাচার্যের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি শেষ করেন।
এ সময় কর্মচারীরা দুনিয়ার মজদুর, 'এক হও লড়াই করো', 'চাকরি নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না', 'এক দফা এক দাবি, এই মুহুর্তে চাকরি দিবি', 'ভাত-কাপড়ের আন্দোলন, চলছেই চলবে', 'এক হও লড়াই কর, মাস্টাররোল কর্মচারী', 'আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যর ঠাঁই নাই', 'চাকরি দে চাকরি দে, নয়লে গদি ছেড়ে দে' প্রভৃতি স্লোগান দেন। রাত পৌনে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় ভবনের ভিতর থেকে কাউকে বের হতে দেওয়া হয়নি । একইভাবে বাইরে থেকেও কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কয়েকজন কর্মকর্তা ভেতর থেকে বের হতে চাইলে তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে কর্মচারীরা চেয়ার ছুড়াছুড়ি ও ফটকের তালা ভাঙচুর করেন।
মাস্টাররোল কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মামুন তালুকদার বলেন, 'আজকে আমাদের এখানে দাঁড়ানোর কথা ছিল না। প্রশাসন গত আগস্টে আমাদের কথা দিয়েছিল তিন মাসের মধ্যে আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হবে। কিন্তু স্বৈরাচারী হাসিনা যেমন আচরণ করেছিল, আমরা সেই ধরনের আচরণের ভাব দেখতে পাচ্ছি। আর কোনো লেয়াজু নয়, আমরা চাকরি চাই।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, মাস্টাররোলে কর্মরত কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। আগামী সিন্ডিকেটে এ বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু আইনগত জটিলতার কারণে এই সিন্ডিকেটে বিষয়টি উত্থাপন করা যাচ্ছে না। বিষয়টি জানার পর থেকে তারা আমাদের অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করছেন।
কর্মচারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, আগামী নয় তারিখের সিন্ডিকেট সভায় তাদের নিয়োগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তাদের চূড়ান্ত নিয়োগের বিষয়টি সম্পন্ন করা হবে। যেহেতু, তাদের ৭৬ জন বাদী হয়ে একটি মামলা চলমান রয়েছে ওই মামলার নিষ্পত্তির জন্যও তাদের সদিচ্ছা এবং সময় প্রয়োজন।
কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে কর্মরত আছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে আসলেও আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকায় তা সিন্ডিকেটে পাস হয়নি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান প্রশাসন চাকরি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ বিষয়ে তাদের ভাইভাও নেওয়া হয়েছে। আগামী সিন্ডিকেটে বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার কথা ছিল। আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আইনজীবীদের সভা হয়। পরে প্রশাসন তাদের জানায় আইনগত জটিলতা ও নথিপত্র না থাকায় চাকরি স্থায়ীকরণ সম্ভব হচ্ছে না।
নুসরাত